সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার বিজয় তামাং জানতে চাইলেন, ‘সন্দীপ লামিচানের কী হবে?’ থামেলের একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী বুদ্ধলাল বলছিলেন, ‘লামিচানেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ আর স্থানীয় রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আম্বার বাহাদুরের কথা, ‘অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত লামিচানের জেল-জরিমানা কিছুই হবে না।’
কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে এরই মধ্যে ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছেন নেপালের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক লামিচানে। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর নড়েচড়ে বসেছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল (সিএএন)। গণমাধ্যমে ঘটনাটা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে কাঠমান্ডু শহরে তাঁকে নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শুধু রাজধানী কেন, নেপালের সর্বত্র যেন একটাই আলোচনা, ক্রিকেটার লামিচানের ভাগ্যে কী আছে?
লামিচানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সে দেশের ক্রিকেট কর্মকর্তারাও। সিএএনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি প্রশান্ত বিক্রম মাল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা নেপালের ক্রিকেটের জন্য একটা বড় ক্ষতি। জাতীয় দলের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৪৩ ম্যাচে পেয়েছে ৮৫ উইকেট। ওর বোলিং গড় খুব ভালো। এই মুহূর্তে সে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার এই ফরম্যাটে।’
আগে কখনোই লামিচানের বিরুদ্ধে নারীঘটিত কোনো অভিযোগ দূরের কথা, শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনো অভিযোগও আসেনি সিএএনের কাছে। কিন্তু এ ঘটনায় অবাকই হয়েছেন এই কর্মকর্তা, ‘সে আমাদের দেশের বড় তারকা। এর আগে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা কখনোই শুনিনি আমরা। সবার কাছে ওর একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি আছে। লামিচানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় আমরাও অবাক।’
লামিচানের বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগটাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়েছে এই কর্মকর্তার, ‘অনেকে বলছে, এটা ওর বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্রও হতে পারে। কারণ, সিসিটিভিতে দেখা গেছে, ওরা দুজন বেশ হাসিখুশিভাবেই হোটেলকক্ষে ঢুকেছে এবং বের হয়েছে। এর মানে এখানে জোরপূর্বক কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা আমার কথা নয়। এটা বেশির ভাগ নেপালির কথা। নেপালের ক্রিকেট–ভক্তরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কথা বলছে।’
লামিচানের মতো ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় হতাশ স্থানীয় সাংবাদিক প্রজ্জল ওলিও, ‘সে নেপালের তারকা ক্রিকেটার। জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ায় সে এখানে সবার অনুকরণীয় এবং সে জাতীয় বীর। নেপাল থেকে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছে। এখানকার আর কেউ তার মতো আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল, বিগ ব্যাশে খেলেনি। আসলে সে তার জায়গাটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তার সামাজিক মর্যাদা কখনোই ফিরে পাবে না।’
গত মঙ্গলবার লামিচানের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে গুয়াশালা পুলিশ সার্কেল কার্যালয়ে একটি মামলা করে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী।