অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি। তা–ও আবার টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে। এরপর মিরপুরের কঠিন কন্ডিশনেও টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ফিফটি করে নিজের টেম্পারামেন্টের ছাপ রেখেছেন জাকির হাসান। ২৪ বছর বয়সী ওপেনারের প্রশংসা এর আগে করেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। আজ করলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। টেস্ট ক্রিকেটে একটা শক্ত ব্যাটিং লাইনআপের জন্য জাকিরের মতো ক্রিকেটার আরও দরকার, সাকিব মনে করিয়ে দিলেন তা-ও।
চট্টগ্রামে অভিষেকের আগেই জাকির খেলে ফেলেছিলেন ৬৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। তামিম ইকবালের চোট ও মাহমুদুল হাসানের ফর্মহীনতা সুযোগ করে দিয়েছে তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দারুণ একটি সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল রানের দেখা পাচ্ছেন না বেশ কিছুদিন ধরেই। অথচ টেস্ট দলে এসেছিলেন দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে। মাত্র আটটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পরই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর।
সাকিব বলছেন, সমস্যাটা এখানেই। মাহমুদুলের ক্ষেত্রে কী ঘটছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আজ জাকিরের উদাহরণ টেনে সাকিব বলেন, ‘জাকিরের জন্য একটা সুবিধা হচ্ছে, ও কিন্তু নতুন ক্রিকেটার নয়। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ৭০টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। খেলার মধ্যে ওই ব্যাপারটি দেখা যায়। যখন ১৯-২০ বছরের একটি ছেলে খেলবে, তার খেলার যে ধরন, একটা ৩০ বছরের ছেলে, জাতীয় দলের আশপাশ দিয়ে ছিল সব সময়, ৬০-৭০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে আসা ক্রিকেটার, তার টেম্পারামেন্ট দেখলেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। আমি যেটা চাইছি, এ রকম ক্রিকেটাররা যদি আসে—৫, ৬ বা ১০ বছর যে সার্ভিস দেবে বাংলাদেশকে, তাদের ভালো সার্ভিস দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
জাকিরের মতো ক্রিকেটার বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সুখবর দেবে, সাকিব মনে করেন এমনও, ‘ওকে খুব পরিণত মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, খুব ভালো টেম্পারামেন্ট আছে, টেস্ট ম্যাচের জন্য আদর্শ, যে ধরনের ব্যাটসম্যান আমরা খুঁজছিলাম। আমার মনে হয়, ও একটা বড় শূন্যস্থান পূরণ করার মতো সামর্থ্য রাখে। তবে এটা শুধুই শুরু। আশা করি, বাংলাদেশের হয়ে এমন ভালো ভালো ইনিংস ও খেলবে।’
মাহমুদুলের ক্ষেত্রেও অবশ্য আশা ছাড়েননি বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘জয় (মাহমুদুল) কিন্তু সিস্টেমের বাইরে নয়। অবশ্যই সিস্টেমে আছে। যখন ও “এ”দলে রান পাওয়া শুরু করবে, ওর জন্য সুযোগ আসবে যখন, আমি চাই ও যেন ভালোভাবে নিতে পারে সুযোগটা, যেন ওর ক্যারিয়ারেও এ রকম হয় যে ১০, ১২ বা ১৫ বছর খেলবে বাংলাদেশ দলে, ১০০ টেস্ট খেলবে।’
তবে সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামোর উন্নতির বিকল্প দেখেন না সাকিব, ‘প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আমাদের আরও বেশি খেলাতে হবে, যদি আমরা টেস্ট ক্রিকেটে সিরিয়াসলি উন্নতি করতে চাই। একজন ক্রিকেটারের ৫, ৭, বা ১০ ম্যাচের যে অভিজ্ঞতা আর ৫০, ৬০ বা ৭০ ম্যাচ খেলার যে অভিজ্ঞতা, এটা অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি নিশ্চিত, ভারতের যে ক্রিকেটাররা এসেছে, ওদের প্রায় সবার ১০০–এর ওপরে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা আছে। যেখানে আমিই হয়তো এত দিন ধরে আছি…হয়তো আমি অনেক দিন ঘরোয়া খেলি না, তবে অন্যান্য যারা খেলে, একটা মৌসুমে কয়টা ম্যাচ খেলে? ছয়টা থেকে আটটা হয়তো। যদি এ রকম খেলে, ১০ বছরে হবে ৮০টা ম্যাচ। আমরা যদি ৮০টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কোনোভাবে ৫ বছরে খেলতে পারি, আমার কাছে মনে হয় অনেক ভালো টেস্ট ক্রিকেটার বের হবে।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে আফসোসের সঙ্গে সাকিবের কণ্ঠে আক্ষেপ ঝরেছে কোনো লেগ স্পিনার না পাওয়া নিয়েও, ‘লেগ স্পিনার থাকলে তো সব সময়ই বাড়তি একটি সুবিধা, যেটি আমাদের নেই আসলে। অনেক দিন ধরেই এটা বলা হচ্ছে এবং এটা বলতে বলতে ও আফসোস করতে করতে এখন আর চিন্তায়ও আসে না। আশা করি, কোনো সময় আমাদের লেগ স্পিনার আসবে এবং দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখবে।’