এ রকম গ্রে–নিকোলস ব্যাট নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন ফিরোজ খুশি
এ রকম গ্রে–নিকোলস ব্যাট নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন ফিরোজ খুশি

‘চওড়া’ ব্যাটে তোলপাড় কাউন্টি ক্রিকেট, এসেক্সের জরিমানা, পাল্টা অভিযোগ

ফিরোজ খুশির বিরুদ্ধে অভিযোগ নির্ধারিত মাপের চেয়ে চওড়া ব্যাট নিয়ে খেলতে নামার। সেই অভিযোগে শাস্তি পেয়েছে তাঁর কাউন্টি দল এসেক্স। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ১২ পয়েন্ট কেটে নিয়েছে ইংলিশ কাউন্টির প্রথম বিভাগে খেলা ক্লাবটির। তাতে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ায় খেপেছে এসেক্স। কাউন্টি ক্লাবটি উল্টো আঙুল তুলেছে ইসিবির দিকে। তারা বলেছে ব্যাটের মাপ নেওয়ার ‘গজ-ফিতাতে’ই সমস্যা ছিল, আর এ পয়েন্ট কেটে ‘বোকামি’ করেছে ইসিবি।

ঘটনাটি গত এপ্রিলে মৌসুমের শুরুর দিকের। ট্রেন্ট ব্রিজে ম্যাচ চলাকালেই আম্পায়াররা মাঠে ও মাঠের বাইরে দুবার পরীক্ষা করেন ফিরোজ খুশির ব্যাট। ব্যাটের মাপ ঠিক আছে কি না, সেটি দেখার পরিমাপকে আটকে গিয়েছিল ব্যাট। নটিংহামশায়ারের বিপক্ষে সেই ইনিংসে ২১ রান করেছিলেন খুশি।

ব্যাটের নির্মাতা গ্রে-নিকোলস জানিয়েছে, এমসিসির নিয়ম মেনেই ১০.৮ সেন্টিমিটার চওড়া ব্যাট বানিয়েছেন তারা। সাসেক্সের কারখানা থেকে অর্ডার সরবরাহের আগেও মাপ ঠিক আছে কি না, সেটি দেখা হয়েছে বলেও জানায় কোম্পানিটি।

কেন তাঁরা প্রতিবাদ করছেন, সেটি বলেছেন এসেক্সের সভাপতি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কিথ ফ্লেচার, ‘গ্রে-নিকোলস আমাদের পাশেই আছে। ব্যাট মাপার নানা রকম যন্ত্র আছে, তারা বলেছে সব নিয়ম মেনেই তারা ব্যাট বানিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, ইসিবি ভেবেছে আমরা প্রতারণা করেছি। ফিরোজ মনে করে না সে কোনো ভুল করেছে। আর শুধু একজন খেলোয়াড়কেই নয়, শাস্তি দেওয়া হলো পুরো দলকে।’

নির্ধারিত মাপের চেয়ে কয়েক সুতো চওড়া ব্যাটে খেলে অন্যায় সুবিধা নেওয়া যায় না বলেও যুক্তি দিলেন ফ্লেচার, ‘একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি জানি কয়েক মিলিমিটার এদিক-ওদিক হলে সেটি পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব ফেলে না। আম্পায়াররা দৈবচয়নে ব্যাট পরীক্ষা করেন। আমি মনে করি, ইসিবি অবশ্যই বোকার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম বিভাগে এ মুহূর্তে ১৯৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে আছে সারে। ১৪৯ পয়েন্ট নিয়ে চারে এসেক্স। আরও তিনটি করে ম্যাচ বাকি আছে সব দলের। ফ্লেচার বলছেন ১২ পয়েন্ট কেটে নেওয়ায় তাদের শিরোপা–স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে, ‘আমরা বুঝে গেছি, আমরা আর সারেকে ধরতে পারছি না। নন–টেস্ট ম্যাচ ক্লাব হিসেবে আমাদের জন্য লিগের অবস্থানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। টাকাপয়সার ব্যাপার আছে, আছে সম্মানের বিষয়ও। যেসব কাউন্টিতে টেস্ট ম্যাচ হয়, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে তো আমাদের বেশি বেশি টাকাপয়সা দরকার, নইলে ভালো খেলোয়াড়দের দলে টানব কীভাবে।’

এমসিসির আইনের ৫.৭.২ ধারায় ব্যাটের মাপ নির্ধারিত করে দেওয়া আছে। যেখানে বলা আছে, ব্যাট লম্বায় ৯৬.৫২ সেন্টিমিটার, চওড়ায় ১০.৮ সেন্টিমিটার ও ব্যাটের কানা ৪ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারবে না।

কোনো ব্যাট যদি নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় হয়, তবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে হয়। মাঠের স্যাঁতসেঁতে কন্ডিশনে ব্যাট ফুলে উঠতে পারে, এ কারণে ব্যাট শুকানোর পর দ্বিতীয়বার মাপ নেওয়া হয়।

ব্যাট সর্বোচ্চ ১০.৮ সেন্টিমিটার চওড়া হতে পারে

ফিরোজ খুশি ব্যাটের মাপ নেওয়া ধাতব পরিমাপক নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এসেক্সের চেয়ারম্যান অনু মহীন্দ্রু, ‘আমি ট্রেন্ট ব্রিজে ব্যাট পরীক্ষার সময় উপস্থিত ছিলাম। এটা মনে হয়েছিল যে ভিন্ন মাপের দুটি পরিমাপক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। সন্দেহ হওয়ায় আমরা পরিমাপকগুলোর আকার ঠিক আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করতে বলি। মেপে দেখা যায়, মাঠের দুটি ও মাঠের বাইরের দুটি, এই চারটি পরিমাপকের একটিও এমসিসির মানদণ্ডের ছিল না।’

এরপর কী হয়েছে, সেটিও বলেছেন মহীন্দ্রু, ‘ব্যাটটা জব্দ করার এক মাস পর আমরা জানলাম, সঠিক মাপের পঞ্চম কোনো পরিমাপক দিয়ে আর মাপা হয়নি। এখন অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এক. ব্যাটটা কোথায় আছে। দুই. প্রাথমিক পরীক্ষার পরিমাপকগুলো তো সঠিক ছিল না, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কী করেছে?’

এসেক্সে পয়েন্ট কাটার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল। কিন্তু সেই আপিল টেকেনি। ইসিবি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। তবে ব্রিটিশ পত্রিকা টাইমস বলছে, ক্রিকেট ডিসিপ্লিনারি কমিটি নাকি এই দাবি করতে যাচ্ছে যে প্রতিটি পরীক্ষাতেই ব্যাটের মাপ বেশি এসেছে। আর সেই দায়টা ক্লাবেরই বেশি দেখছে তারা।