ফুলটস পেয়ে ছক্কা মারলেন ওমান অধিনায়ক আকিব ইলিয়াস। তাতে কিছু যায় আসে না নামিবিয়ার। তাতে কিছু যায় আসেনি ডেভিড ভিসারও। তিনি শুরু করে দিয়েছেন উদ্যাপন। বার্বাডোজে সুপার ওভারে ওমানের প্রয়োজন ছিল ২২ রান, শেষ বলে ছক্কা খাওয়ার আগে ৫ বলে ভিসা দিয়েছিলেন মাত্র ৪ রান। একটি ছক্কায় কীই-বা আসে যায়!
মূল ম্যাচে নামিবিয়ার ইনিংসে ১৮তম ওভারে ভিসা যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, জয়ের জন্য ১৫ বলে প্রয়োজন ১৪ রান। বাকি ৬ উইকেট। যেকোনো টি-টোয়েন্টিতে কাজটি বেশ সহজই হওয়ার কথা। কিন্তু বার্বাডোজের এ উইকেটে ম্যাচটি যেভাবে এগিয়েছে, তাতে ম্যাচের তখনো বাকি ছিল অনেকটা। শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই। এমন ম্যাচের পর এক রাতেই ৩৯ বছর বয়সী ভিসার বয়স নাকি কয়েক বছর বেড়ে গেছে!
১৯তম ওভারে বিলাল খানকে ছক্কা মেরে নামিবিয়াকে আরও কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিসা। কিন্তু মেহরান খানের করা শেষ ওভারে ৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি নামিবিয়া। পঞ্চম বলে হয়তো বাউন্ডারি পেতে পারতেন ভিসা, কিন্তু তাঁর স্ট্রেইট ড্রাইভ সোজা গিয়ে লাগে স্টাম্পে। শেষ বলে ম্যাচ শেষ করার সুযোগ পেয়েছিলেন আবার, এবার কাট করতে গিয়ে ব্যাটে-বলেই করতে পারেননি। সেটি নিয়ে ম্যাচ শেষেও বেশ হতাশ ছিলেন ভিসা।
শেষ বলে নামিবিয়ার প্রয়োজন ছিল ২ রান, বাই থেকে আসে ১ রান। সেটিতেও অবশ্য রানআউট হতে পারতেন ভিসার সঙ্গী ম্যালান ক্রুগার, ওমান উইকেটকিপার খুব কাছ থেকেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ভাগ্যক্রমে ভিসা পেয়ে গেলেন আরেকটি সুযোগ। ভিসা জানতেন, এবার তাঁর নিজের ওই জায়গায় যাওয়ার পালা—যেখানে আগের ভুলগুলো শোধরাতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘আমি নেমে বড় একটা পারফরম্যান্স দেখাতে চেয়েছি (সুপার ওভারে)। ভাগ্যক্রমে দলও আমার ওপর আস্থা রেখেছে।’
নামিবিয়া আস্থা রাখল, সুপার ওভারও বলতে গেলে হয়ে উঠল ভিসাময়। ব্যাটিংয়ে নামলেন, বিলালের প্রথম ২ বলে ১০ রান নিয়ে এগিয়ে নিলেন নামিবিয়াকে। পরিকল্পনাও নাকি অমনই ছিল, ‘জানতাম, সুপার ওভারে দ্রুত দু-একটি বাউন্ডারি মারতে পারলে তাদের চাপে রাখতে পারব। এরপর ম্যাচটি তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিতে পারব।’
শেষ ২ বলে অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাসের ২ চারে নামিবিয়া তুলল ২১ রান—ওমানের ধরাছোঁয়ার বেশ বাইরেই তখন তারা। এরপর বোলিংয়েও সেই ভিসা। প্রথম বলে অফ স্টাম্পের বাইরে ফুলটস করেছিলেন, নাসিম খুশি কাজে লাগাতে পারেননি। ভিসা এরপর সুযোগ দেননি আর।
মূল ম্যাচে ২৮ রানে ৩ উইকেটের পর সুপার ওভারে ৪ বলে ১৩, এরপর বোলিংয়ে প্রথম ৫ বলে ৪ রান দিয়ে ১ উইকেট—নামিবিয়ার স্মরণীয় জয় এল তো ভিসার হাত ধরেই। ভিসার ক্যারিয়ারে এটি ছিল ৩৭৭তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, এর আগে ৭টি টাই ম্যাচের অংশ ছিলেন। ওই ৭ ম্যাচের সব কটিতে সুপার ওভার হয়নিও। ক্রিকেটের ‘৬ বলের শুটআউটে’র অ্যাকশনের সবচেয়ে কাছাকাছি ভিসা এর আগে গিয়েছিলেন ২০২০ সালের বিপিএলে। সিলেট থান্ডারের বিপক্ষে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের হয়ে সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন নামিবিয়ার অলরাউন্ডার। ৮ রানের লক্ষ্যে প্রথম ৩ বলে কুমিল্লা ১ উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছিল ৩ রান। চাপের মুখে নাভিন-উল-হককে চার মেরে জয়টা নাগালে এনেছিলেন ভিসা।
তবে এটি বিশ্বকাপ, স্বাভাবিকভাবেই চাপটা এখানে কয়েক গুণ বেশি। ভিসাও জানতেন সেটি। সে চাপ টের পেয়েছেন ভালোভাবেই। ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার পর ৩৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বললেন, ‘আজ রাতে কয়েক বছর বয়স বেড়ে গেছে। আমার তো এমনিতেও খুব বেশি বছর বাকি নেই (হাসি)। আবেগের দিক দিয়ে বেশ ক্লান্তিকর সময় গেল।’
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগসহ (সিপিএল) বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ভিসা খেলেন নিয়মিতই। সেসব অভিজ্ঞতা স্বাভাবিকভাবেই কাজে দিয়েছে তাঁর, ‘অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলেছি, এমন পরিস্থিতিতে আগেও পড়েছি। এটির কথাই বলা হচ্ছে—অভিজ্ঞতা। কয়েকটা সিপিএলেও খেলেছি, ফলে কন্ডিশন জানি। বেশ কিছুদিন ধরেই (ক্রিকেটে) আছি, সেটিও হয়তো সহায়তা করেছে।’