আইসিসি ইভেন্টের বাইরে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ। ৪ বছর পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে যে টুর্নামেন্ট। ২৭ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে পর্দা উঠবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল আয়োজিত মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারক এই আসর। শুরুর আগে জেনে নিন এই টুর্নামেন্টের সবকিছু—
এশিয়া কাপের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৩৮ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে। সেবার এ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ৩টি দল—ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা। রাউন্ড রবিন পদ্ধতির সেই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সুনীল গাভাস্কারের ভারত। আর শ্রীলঙ্কা হয়েছিল রানার্সআপ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় আসরে। সেবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় ভারত। যে কারণে সেবারও দল ছিল ৩টি—বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। গাজী আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হারে সবগুলো ম্যাচে। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে চার দল অংশ নিয়েছিল ১৯৮৮ সালে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ আয়োজন করে সেবারই। ২০০৮ সালের আগপর্যন্ত এশিয়া কাপ আয়োজনের ধারাবাহিকতা ছিল না। তবে এর পর থেকে ২ বছর পরপরই এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে এসিসি। যদিও ২০২০ কোভিডের কারণে এশিয়া কাপ মাঠে গড়ায়নি।
এশিয়া কাপ এবার ১৫তম বারের মতো আয়োজিত হবে। ২০১৮ সালে গত আসরটিও হয়েছিল আরব আমিরাতে। ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রোহিত শর্মার ভারত।
প্রথম আসরে কপিল দেবের অনুপস্থিতিতে ভারতকে শিরোপা জিতিয়েছেন সুরিন্দার খান্না। ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন কন্ডিশনে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন টানা দুই ফিফটি। যে কারণে তাঁর হাতেই উঠেছিল ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার।
পাকিস্তানে আয়োজিত ২০০৮ এশিয়া কাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজন্তা মেন্ডিসের নাম। পুরো টুর্নামেন্টেই স্পিনের জাল বিছিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান এই রহস্য–স্পিনার। তবে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। অফ ব্রেক, ক্যারম বল, গুগলি, টপ স্পিনে ১৩ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। এর পরের আসরেও ফাইনালে উঠেছিল ভারত। প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। রোমাঞ্চকর সেই ফাইনালে এক বল বাকি থাকতে হরভজন সিংয়ের ছক্কায় শিরোপা ঘরে তোলে ভারত।
পরের আসর ২০১২ সালে শিরোপা ঘরে তুলতে পারত বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে শেষ পর্যন্ত ২ রানে হেরে যায় স্বাগতিক দল। সেই আসরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮৩ রানের ইনিংস খেলে বিশ্ব ক্রিকেটেকে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। শচীন টেন্ডুলকার শততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েন ২০১২ সালের এশিয়া কাপে।
২০১৪ এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। ভারতের দরকার ছিল একটি উইকেট। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে আফ্রিদির পর পর দুটো ছক্কায় দুই বল বাকি থাকতেই পাকিস্তান জয় পায়।
এশিয়া কাপের শিরোপা সবচেয়ে বেশি জিতেছে ভারত। এখন পর্যন্ত আয়োজিত ১৪ টুর্নামেন্টের ৭টিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৫ বার আর পাকিস্তান ২ বার। সর্বশেষ চার আসরের তিনবার বাংলাদেশ ফাইনালে খেললেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কোনোবারই।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৭ আগস্ট শুরু হবে এশিয়া কাপের ১৫তম আসর। শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে শুরু টুর্নামেন্ট, ফাইনাল হবে ১১ সেপ্টেম্বরে। শুরু ও শেষ একই মাঠে, দুবাই স্টেডিয়ামে। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে এবারের আসর হবে ২০ ওভারের।
এশিয়া কাপে খেলবে মোট ৬টি দল—আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও হংকং। হংকং সুযোগ পেয়েছে বাছাই পর্ব খেলে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ও হংকংকে নিয়ে ২০ আগস্ট ওমানে শুরু বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হংকং।
৬টি দলকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।
এ গ্রুপ—পাকিস্তান, ভারত ও হংকং।
বি গ্রুপ—শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।
দুই গ্রুপের প্রতিটি দল একে অন্যের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। প্রতিটি গ্রুপের সেরা দুই দল উঠবে সুপার ফোরে। যেখানে প্রতিটি দল আবার অন্য দলগুলোর মুখোমুখি হবে একবার করে।
এই আসরের আগে ২০১৬ সালে একবার টি–টোয়েন্টির এশিয়া কাপ হয়েছে। এশিয়া কাপের দুদিন পরই শুরু হয়েছিল সে বছরের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সে কথা মাথায় রেখে সংস্করণ পরিবর্তন করা হয়েছিল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বকাপের ফরম্যাটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এশিয়া কাপের সংস্করণ নির্ধারণ হবে, সে জন্যই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এবারের আসরটি হচ্ছে ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের।
এবারের এশিয়া কাপ হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় শেষ মুহূর্তে এবারের আসর আরব আমিরাতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এই টুর্নামেন্টের আয়োজক স্বত্ব এখনো শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের কাছেই থাকছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবহাওয়া খুবই গরম ও আর্দ্র হবে। ক্রিকেটারদের জন্য খেলাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। এর আগে আগস্টে আরব আমিরাতে একবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছিল। পাকিস্তান–অস্ট্রেলিয়া সে সিরিজে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেরিতে খেলা শুরু করতে হয়েছিল। এশিয়া কাপের ম্যাচগুলো শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়।
রাজনৈতিক কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে একে ভারত–পাকিস্তান মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হয় না। তাই এশিয়া কাপের আসর এলেই মাঠ ও মাঠের বাইরে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার পারদ থাকে তুঙ্গে। এবার আসরে এ উত্তেজনা আরও বাড়ছে, কারণ এ আসরে মোট তিনবার মুখোমুখি হতে পারে ভারত–পাকিস্তান। ২৮ আগস্ট প্রথম ম্যাচটি হবে গ্রুপ পর্বের। এরপর তারা যদি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল হয়, তবে সুপার ৪-এ দ্বিতীয়বার দেখা হবে। আর তৃতীয়বার দেখা হতে পারে যদি এই দুই দল ফাইনালে খেলতে পারে। সুপার ফোরে এই দুই দল শীর্ষ দুইয়ে থাকলে এশিয়া কাপ প্রথমবারের মতো দেখবে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল।
এশিয়া কাপে এর আগে মোট ১৪ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ভারত ৮ বার জয় পেয়েছে, ৫ বার পাকিস্তান। বাকি ম্যাচটির ফল হয়নি।