জাতীয় দলে ফিরতে চান আন্দ্রে রাসেল
জাতীয় দলে ফিরতে চান আন্দ্রে রাসেল

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ছাড়তেও রাজি রাসেল

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে প্রয়োজনে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলাও বাদ দেবেন, এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে আগ্রহী ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার বলেছেন, জাতীয় দলের সামনের সিরিজগুলোতে তাঁকে বিবেচনা করা যাবে।

২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বশেষ মাঠে দেখা গিয়েছিল ১২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা রাসেলকে। সেবার সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেললেও মাত্র একটি ম্যাচ জেতার পর সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে রাসেল ছিলেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো প্রথম পর্বই পেরোতে পারেনি। সম্প্রতি ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকেও বাদ পড়েছে দলটি। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়াই তাই হবে কোনো ক্রিকেট বিশ্বকাপ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এমন দুর্দশার পেছনে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর উত্থানের একটা প্রভাব আছে, এমন মনে করা হয়ে থাকে। রাসেল, সুনীল নারাইনদের মতো খেলোয়াড়দেরও প্রায়ই জাতীয় দলের আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ বেছে নিতে দেখা যায়। কে কখন কোন লিগে খেলছেন, তার ভিত্তিতে জাতীয় দল গঠন করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোকে নিয়ে গঠিত ক্রিকেট বোর্ডের জন্য।

সর্বশেষ বিশ্বকাপে সে কারণেই বিবেচনা করা হয়নি রাসেলকে। তবে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি হওয়ার কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে। সে বিশ্বকাপে খেলতে রাসেল এবার করতে চাইছেন উল্টোটাই। প্রয়োজন পড়লে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে না করে দেবেন তিনি। পরের বিশ্বকাপে খেলার আগ্রহের কথা জানিয়ে জ্যামাইকা অবজারভার রাসেল বলেছেন, ‘আমি আছি (খেলার জন্য প্রস্তুত)। পরের বিশ্বকাপের অংশ হতে চাই। ফলে দলে নেওয়া হলে আমার জন্য বিশেষ কিছু হবে এটি।’

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ আন্দ্রে রাসেল

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চালু হওয়া মেজর লিগ ক্রিকেটের প্রথম আসরে লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলছেন রাসেল। এ মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আছে ভারত, সামনে তাদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ। রাসেল ফিরতে চান সেটিতেই। তিনি জানেন, চাইলেই হুট করে বিশ্বকাপের দলে ঢোকাটা কঠিন, ‘নিজেকে তৈরি রাখতে কয়েকটি সিরিজ খেলতে চাই। একদম হুট করে গিয়ে তো বলতে পারি না যে আমি বিশ্বকাপে খেলতে চাই।’

তবে জাতীয় দলে খেলতে গেলে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগগুলোতে খেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হতে পারে, রাসেল জানেন সেটিও, ‘আমি জানি কীভাবে কী হয়। আমি জানি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে হয়তো কয়েকটি লিগের প্রস্তাব ফেরাতে হবে। আমি সেটি করতে ইচ্ছুক। বিশ্বকাপে খেলতে নিজের সেরা সুযোগটি নিতে চাই। যেখানেই অবদান রাখার সুযোগ আসুক না কেন, আমি করতে রাজি।’

রাসেল ফিরতে চান মানেই ফিরে আসছেন, ব্যাপারটি এমনও নয়। তিনি জানেন, সামনে ভারতের সঙ্গে সিরিজ। তবে এখন পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্টের কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি তাঁর। অবশ্য গত মে মাসে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি সীমিত ওভারের কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল রাসেলের। স্যামি নিজেও রাসেলদের মতো খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে ফেরানোর কথা বলেছিলেন।

২০২১ সালে সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন রাসেল

তবে এরপর সে যোগাযোগ অব্যাহত থাকেনি বলেই জানিয়েছেন রাসেল, ‘সে চাকরিটা নেওয়ার পর কথা হয়েছিল। সে জানতে চেয়েছিল, আমি খেলতে রাজি কি না। তবে এরপর যোগাযোগ হয়নি। তার কাছ থেকে আর কিছু শুনিনি। অবশ্যই সে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ফলে এখনোই কোনো সিদ্ধান্তে আসছি না আমি এ ব্যাপারে।’ আপাতত স্যামিদের কাছে এ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি, ‘আমি এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য নিজেকে উজাড় দিতে প্রস্তুত, তবে কেউই আমার সঙ্গে এসে কথা বলেনি।’

জাতীয় দল থেকে তেমন কোনো নিশ্চয়তা না পেলে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে না করবেন না, সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন রাসেল, ‘যে ফ্র্যাঞ্চাইজিই চাইবে, আমি প্রস্তুত আছি। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে না খেলাটা একটা সমস্যা। তবে তারা যখন আপনাকে নেবে না, আপনি ঘরে বসে থাকবেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও খেলবেন না—সেটিও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, তারা (জাতীয় দল) দেখবে আপনি কোথাও খেলছেন না।’

আপাতত তাই অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে পড়েছেন, সেটিও স্বীকার করে নিয়েছেন রাসেল। কারণ, ‘এসব লিগে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়, নিজেদের অক্ষত রাখতে হয়। কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, এদিক দিয়ে ভাবলে ব্যাপারটি অদ্ভুতই।’