পুরস্কার বিতরণীতে হারের অনুভূতি প্রকাশ করেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা
পুরস্কার বিতরণীতে হারের অনুভূতি প্রকাশ করেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা

নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হার ‘যন্ত্রণা দেবে এবং সেটাই হওয়া উচিত’

দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে নকআউট পর্বে বা বাঁচা–মরার ম্যাচে হরহামেশাই ‘চোক’ করতে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর বড় মঞ্চের দরকার পড়ছে না। বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গত রাতের হার তো সে কথাই বলছে।

ধর্মশালায় কাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় অঘটনের জন্ম দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ডাচদের কাছে হেরে সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল প্রোটিয়ারা। সেমিফাইনালে উঠতে হলে ওই ম্যাচ তাদের জিততেই হতো।

কিন্তু গত রাতের ম্যাচটা ছিল এবারের বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে নিজেদের তৃতীয়। আগের দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একপেশে জয় পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে স্পষ্ট ফেবারিট ছিল। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জয়টা ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে তাদের প্রথম

অপ্রত্যাশিত হার স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেটা স্বীকারও করেছেন টেম্বা বাভুমা, ‘সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আবেগকে নিজেদের মধ্যে রাখতে হবে। যা ঘটে গেছে, তা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করার কোনো মানে হয় না। এটা (এই হার) আমাদের যন্ত্রণা দেবে এবং সেটাই হওয়া উচিত। তবে আমাদের অভিযান শেষ হয়ে যায়নি। ওরা (নেদারল্যান্ডস) অসাধারণ খেলেছে। সবদিক দিয়েই আমাদের চাপে ফেলেছে। ওদের জন্য শুভকামনা।’

বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৩ ওভারে। সিমিং কন্ডিশনে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় পরিস্থিতি শুরু থেকে প্রোটিয়াদের পক্ষেই ছিল। এনগিডি–রাবাদা–ইয়ানসেনদের তোপে একপর্যায়ে ২৭ ওভারে ১১২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল নেদারল্যান্ডস। ৩৪তম ওভারে ১৪০ রানে সপ্তম উইকেট হারালে ডাচরা আরও চাপে পড়ে যায়।

এরপর সেই দলকেই টেনে তোলেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান রোলফ ফন ডার মারওয়ে ও আরিয়ান দত্তকে নিয়ে গড়েন ৬৪ ও অবিচ্ছিন্ন ৪১ রানের জুটি। রাবাদা–এনগিডি–কোয়েৎজিদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়ে ৯ ওভারে ডাচরা তোলে ১০৪ রান! নির্ধারিত ৪৩ ওভারে তারা ২৪৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ পেয়ে যায়। অধিনায়ক এডওয়ার্ডস অপরাজিত থাকেন ৭৮ রানে।

নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস ম্যাচসেরা হয়েছেন

বাভুমা মনে করেন, শেষ দিকে বাজে বোলিংয়ের কারণেই নেদারল্যান্ডস এত দূর যেতে পেরেছে, ‘যখন ১১২ রানে ওদের ৬ উইকেট পড়ে যায়, তখন মনে হয়নি, আমাদের ২০০-এর বেশি রান তাড়া করতে হবে। অবশ্যই এরপর আমরা বাজে বোলিং করেছি। যে কারণে ওরা ২৪০-এর বেশি করে ফেলেছে।’

এ ম্যাচে ‘অতিরিক্ত খাত’ থেকে নেদারল্যান্ডস পেয়েছে ৩২ রান। এর মধ্যে ১৭টি ওয়াইড থেকে নিয়েছে ২১ রান, এনগিডির করা একমাত্র নো বলেও চার মেরেছেন এডওয়ার্ডস। ইনিংসে ১৮টি বল বা ৩ ওভার বেশি করতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। মানে, আদতে ৪৩ ওভারের খেলা হলেও রাবাদা–এনগিডিরা বোলিং করেছেন ৪৬ ওভার। এই অতিরিক্ত রানও ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বাভুমা, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা অসাধারণ ছিলাম। কিন্তু এ ম্যাচে সেই মান ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের অতিরিক্ত রান দেওয়া নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। ফিল্ডিংও খুব একটা ভালো হয়নি।’

নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচে করেছিল ৩১১ রান। সে তুলনায় নেদারল্যান্ডসের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষ্য কমই বলা যায়।

হারের দিনে ব্যাট হাতে ব্যর্থ বাভুমা

কিন্তু ব্যাটসম্যানরা এ ম্যাচে নিজেদের কাজ করতে না পারার পেছনে ডাচদের কৌশলকে বড় করে দেখছেন বাভুমা, ‘এরপরও (৭ উইকেটে ১৪১ থেকে ৮ উইকেটে ২৪৫ রান) আমরা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু ব্যাটিংয়ে বড় কোনো জুটিই হয়নি। পাওয়াপ্লেতে ওরা দুই প্রান্ত থেকেই স্পিনার দিয়ে বোলিং করিয়েছে। এটার সঙ্গে আমরা মানিয়ে নিতে পারিনি। যেভাবে ওরা আমাদের দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়েছে, ওদের ধন্যবাদ দিতেই হয়।’