আইসিসি ইভেন্টে থাকছে সমান প্রাইজমানি
আইসিসি ইভেন্টে থাকছে সমান প্রাইজমানি

ছেলে ও মেয়েদের সমান প্রাইজমানি দেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত আইসিসির

ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটের সমতার ক্ষেত্রে বড় এক লাফ দিয়েছে আইসিসি। এখন থেকে সমমানের আইসিসি টুর্নামেন্টে ছেলে ও মেয়েদের দল সমান অর্থ পুরস্কার পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে আইসিসির বার্ষিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আর্থিক সমতা অর্জনে ২০৩০ সালকে এর আগে মাইলফলক হিসেবে ধরেছিল আইসিসি। তার বেশ আগে থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে তারা। এখন থেকে আইসিসির ইভেন্টগুলোয় পুরুষ ও নারী দল কোনো নির্দিষ্ট ম্যাচ জিতলে সমান অর্থ পাবে, আর্থিক দিক থেকে তাই বৈষম্য থাকছে না।

এ বছর হয়ে যাওয়া মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে যেমন চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য প্রাইজমানি ছিল ১০ লাখ ইউএস ডলার। অন্যদিকে ২০১৯ সালের পুরুষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছিল এর ৪ গুণ—৪০ লাখ ইউএস ডলার। এখন থেকে দুটি প্রাইজমানি সমান হবে।

এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আইসিসির চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে বলেন, ‘আমাদের খেলার ইতিহাসে এটি তাৎপর্যপূর্ণ এক মুহূর্ত। আমি খুশি যে এখন থেকে আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টে অংশ নেওয়া পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের সমানভাবে পুরস্কৃত করা হবে।’

আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে

বার্কলে এরপর যোগ করেন, ‘২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছরই মেয়েদের ইভেন্টের প্রাইজমানি বাড়িয়েছি আমরা। লক্ষ্যই ছিল প্রাইজমানির ক্ষেত্রে সমতা আনা। এখন থেকে আইসিসির ছেলেদের বিশ্বকাপ জেতার সমান অর্থ মিলবে আইসিসির মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতলেও। এটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ক্ষেত্রেও একই হবে।’

এ সিদ্ধান্ত জানানোর পর ক্রিকেটের জয়গান আইসিসি চেয়ারম্যানের কথায়, ‘ক্রিকেট সত্যিকার অর্থেই সবার খেলা। আইসিসি বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত সেটিই আবার প্রতিষ্ঠিত করল। এর মাধ্যমে এ খেলার প্রতিটি খেলোয়াড়ের অবদানের মূল্য আমরা দিতে পারব।’

আইসিসির সভায় পরবর্তী চার বছরের লভ্যাংশ ভাগাভাগিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগেই জানা গিয়েছিল, এর সিংহভাগই পাবে ভারত। তবে আসলে কে কত পাচ্ছে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু জানায়নি আইসিসি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু এটিকে ‘এখন পর্যন্ত বৃহত্তম বিনিয়োগ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইসিসির বৈশ্বিক সম্প্রসারণের কৌশল হিসেবে প্রতিটি সদস্য উল্লেখযোগ্য বেশি পরিমাণে ফান্ড পাবে বলেও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আইসিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, মিডিয়া স্বত্ব ও বাণিজ্যিক কর্মসূচির সাফল্যের কারণে তাঁরা ক্রিকেটে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে পারছেন। এর মাধ্যমে প্রতিটি সদস্য একটি সমান বরাদ্দের পাশাপাশি মাঠে ও মাঠের বাইরে অবদানের জন্য বাড়তি অর্থ পাবে।

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে আইসিসি

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় বিদেশি খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে আইসিসি, এমনটি জানা গিয়েছিল আগেই। আইসিসি জানিয়েছে, এখন থেকে নতুন কোনো ‘ইভেন্ট’ অনুমোদন পেতে গেলে কিছু নিয়ম মানতে হবে। তার মধ্যে আছে একাদশে কমপক্ষে সাতজন স্থানীয় খেলোয়াড় বা সহযোগী সদস্যদেশগুলোর খেলোয়াড় থাকতে হবে। একই সঙ্গে আয়োজক বোর্ডকে একটা নির্দিষ্ট অর্থ একজন খেলোয়াড়ের দেশের বোর্ডকেও দিতে হবে। মানে বাংলাদেশের কেউ বিদেশের কোনো লিগে খেললে সে দেশের বোর্ড বিসিবিকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দেবে। সে অঙ্কটা কত শতাংশ হবে, সেটি অবশ্য নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।

বদলে যাচ্ছে স্লো ওভার-রেটের শাস্তি

টেস্ট ক্রিকেটে ওভার-রেটের শাস্তির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে। এখন থেকে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি ওভার কম করার কারণে প্রতি খেলোয়াড়ের ম্যাচ ফির ৫ শতাংশ জরিমানা করা হবে, যেটি সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হতে পারে। তবে কোনো দল যদি ৮০ ওভারের আগেই অলআউট হয়ে যায়, তাহলে ওভার-রেটের কোনো শাস্তি থাকবে না। এখনকার নিয়মে এই সীমা ছিল ৬০ ওভার।

আইসিসির পুরুষদের ক্রিকেট কমিটির সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছেন, ‘ক্রিকেট কমিটি জোরালোভাবেই মনে করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কাটা যাওয়ার নিয়ম থাকলেও খেলোয়াড়দের শতভাগ ম্যাচ ফি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে ফেলা উচিত নয়। আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে একটা সমতা আসবে। যাতে ওভার–রেটও ঠিক থাকে, আবার কেউ টেস্ট খেলতে আগ্রহও না হারায়।’

নতুন এ নিয়ম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র থেকেই চালু হবে।