কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে খেলাধুলার কী সম্পর্ক? এককথায় উত্তর হলো, কোনো সম্পর্ক নেই। তবে দৈব বা কাকতাল বলে একটা ব্যাপার আছে। এর কোনো ব্যাখ্যা হয় না। বাস্তবসম্মত যুক্তিতে বিষয়গুলো ধারণ করাও অসম্ভব।
যেমন ধরুন, ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকার, রোহিত শর্মা ও বীরেন্দর শেবাগের ডাবল সেঞ্চুরির ম্যাচে ভারত জিতেছে ১৫৩ রানে। কিংবা ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে শুরু হওয়া কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে (১১ নভেম্বর) ম্যাচের পরিস্থিতি ছিল বেলা যখন ১১টা বেজে ১১ মিনিট, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে প্রয়োজন ১১১ রান! সময়ের কাঁটা বলছিল তখন ১১/১১/১১! এর বাইরেও ক্রিকেটে কাকতালীয় আরও অনেক ঘটনা আছে। যেমন ধরুন অ্যালেক স্টুয়ার্টের ক্যারিয়ার। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়কের জন্মতারিখ ৮/৪/১৯৬৩। ক্যারিয়ার শেষে তাঁর মোট রান ৮৪৬৩!
ক্রিকেটের বাইরে অন্যান্য খেলায়ও নিশ্চয়ই এমন অনেক কাকতালীয় ঘটনা আছে। সেসব যেহেতু অপ্রাসঙ্গিক, তাই ফেরা যাক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যে নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাকতাল হলো, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির রানে ফেরার ব্যাখ্যাতীত এক যোগসূত্র আছে। ব্যাপারটি কেমন, সেটি ব্যাখ্যা করা যাক।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে কোহলি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছেন ২০১৬ সালে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ব্যাটিং গড় ছিল ৮৬.৫০। সেঞ্চুরি ৭টি, ১৩ ফিফটি। সে বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন কোহলি। তামিম ইকবাল ৬ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৯৫ রান করলেও ৫ ম্যাচে কোহলি করেছিলেন ২৭৩ রান।
সে বছর আইপিএলেও হেসেছে কোহলির ব্যাট। ১৬ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯৭৩ রান করেছিলেন। টেস্টে সে বছর তিনটি ডাবল সেঞ্চুরিও মেরেছিলেন কোহলি। আর ২০১৬ সালের নভেম্বরেই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প।
পরের চার বছরে সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান কোহলি। পরিণত হন রান মেশিনে। ২০১৭ সালে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে ৬৮.৭৩ গড়ে ২৮১৮ রান করেন কোহলি। ১১ সেঞ্চুরি ও ১০টি ফিফটি। পরের বছর ৩৭ ম্যাচে ৬৮.৩৭ গড়ে করেন ২৭৩৫ রান। এবারও সেঞ্চুরি ১১টি, ফিফটি ৯টি। ২০১৯ সালে এসেও তাঁর রানগড় ৬০–এর ঘরে ছিল। ৪৪ ম্যাচে ৬৪.৬০ গড়ে ২৪৫৫ রান। ৭ সেঞ্চুরি ও ১৪ ফিফটি। ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর মেয়াদের শেষ বছরে (২০২০) তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ও বিতর্কিত মন্তব্য করে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ২০২০ সালে কোহলির ব্যাটেও রানের ধারা কমেছে। ২২ ম্যাচে ৩৬.৬০ গড়ে ৮৪২ রান। সেঞ্চুরি নেই, ফিফটি ৭টি।
২০২৩ সালে এসে কোহলির ব্যাটে রানের ফল্গুধারা আবারও দেখা গেছে। ৩৫ ম্যাচে ৬৬.০৬ গড়ে করেন ২০৪৮ রান। ৮ সেঞ্চুরি ও ১০ ফিফটি। কিন্তু এ বছর এসে কোহলি তাঁর ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছেন। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৯ ম্যাচে ২০.৩৩ গড়ে ৪৮৮ রান করেছেন এখন পর্যন্ত। সেঞ্চুরি নেই, ফিফটি দুটি।
নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারত ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হওয়ার পর অনেকেই টেস্ট থেকে কোহলির অবসর নেওয়ার দাবিও তুলেছেন। কিন্তু কাকতাল কিংবা দৈবে বিশ্বাসীরা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আশার হালে পানি খুঁজে পেতে পারেন। ৩৬ বছর বয়সী কোহলি এবার নিশ্চয়ই রানে ফিরবেন; কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে ট্রাম্প!