বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬৫/৮
ভারত: ৪৯.৫ ওভারে ২৫৯
ফল: বাংলাদেশ ৬ রানে জয়ী।
শেষ দুই ওভারে ১৭ রান হলেই জিতে যায় ভারত। হাতে তখনো ৩ উইকেট। অক্ষর প্যাটেলের ঊরুতে কী একটা সমস্যা হওয়ায় ৪৯তম ওভারের আগে বেশ লম্বা বিরতি নিলেন ভারতের দুই ব্যাটসম্যান।
কিন্তু সেই বিরতি যেন উল্টো বাংলাদেশকেই আরও উজ্জীবিত করল! ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজুর রহমানের লো ফুলটসে ফ্লিক করে স্কয়ার লেগে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ শার্দূল ঠাকুর। তৃতীয় বলে অক্ষর বাউন্ডারি পেলেও লং অফে ক্যাচ দেন পরের বলেই।
এক ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে হাতে আর এক উইকেট নিয়ে শেষ ওভারে ভারতের জয়ের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১২ রান। অভিষিক্ত বাংলাদেশ দলের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব ম্যাচে নিজের প্রথম দুই ওভারেই রোহিত শর্মা আর তিলক বর্মার উইকেট নিয়ে চমক দেখিয়েছেন। তাতে প্রেমাদাসার প্রেসবক্সে তাওহিদ হৃদয়ের পর তাঁকে নিয়েও কৌতূহল ছড়াল ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু তানজিম আসল কাজটা করলেন শেষ ওভারে। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই অধিনায়ক তাঁর ওপর যে আস্থা রেখেছেন, তার প্রতিদান দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণ।
শেষ ওভারের প্রথম তিন বলই ডট দিয়েছেন ২০২০ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য তানজিম। চাপ সরাতে চতুর্থ বলে ভারতের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শামি চার মেরে দিলেও পরের বলেই হয়ে যান রানআউট। ফাইনালে যেতে না পারলেও এশিয়া কাপের শেষটা জয় দিয়েই হলো বাংলাদেশের। সেটিও ভারতের মতো দলের বিপক্ষে, যারা টুর্নামেন্টে এর আগে এক ম্যাচও হারেনি। রবিবার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত যদি এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়নও হয়ে যায়, তাদের নামের পাশে ‘অপরাজিত’ শব্দটি থাকবে না বাংলাদেশের কারণেই।
পরশু বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, শেষ ম্যাচে ভারতকে হারাতে চান। সেটা যে কথার কথা ছিল না, সাকিব নিজেও তা ব্যাট হাতে দেখিয়েছেন। ৫৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তাঁর ৮৫ বলে ৮০ রানের ইনিংস এবং পঞ্চম উইকেটে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ১০১ রানের জুটিতেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। শার্দূলের বলে সাকিব বোল্ড হয়ে যাওয়ার পরও থামেনি বাংলাদেশের ছুটে চলা। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কখনো ৮১ বলে ৫৪ করা হৃদয়, কখনো ৪৫ বলে ৪৪ করা নাসুম আহমেদ, আবার কখনো ২৩ বলে অপরাজিত ২৯ রান করা শেখ মেহেদী হাসান। এমনকি ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নামা তানজিমের ব্যাট থেকেও আসে ৮ বলে অপরাজিত ১৪ রান।
৬৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করা সাকিবের ইনিংসটার কথা আলাদা করে বলতে হয়। কারণ, যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে তিনি ভারতের বোলারদের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণে গেছেন, সেখান থেকে কেবল গভীর খাদই দেখতে পাচ্ছিল দল। তবে সাকিব দেখছিলেন ভিন্ন কিছু। টপ অর্ডারের ভেঙে পড়া উইকেটেই দলকে দেখালেন বড় কিছুর স্বপ্ন। ৮০ রানের ইনিংসে ৬ বাউন্ডারি ও অক্ষরের এক ওভারে দুটিসহ তিন ছক্কা। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সাহসের মন্ত্রে উজ্জীবিত হৃদয়ও কম যাচ্ছিলেন না। পাঁচ বাউন্ডারির সঙ্গে তিলকের এক ওভারেই মেরেছেন দু্ই ছক্কা।
টসে জিতে ভারতের বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল পরে ব্যাট করে ফ্লাডলাইটের আলোয় নিজেদের ব্যাটিং সামর্থ্য আরেকবার দেখে নেওয়া। ওদিকে জসপ্রীত বুমরা–মোহাম্মদ সিরাজদের ছাড়া ভারতীয় বোলিং আক্রমণ এদিন কিছুটা হলেও কম শক্তির ছিল। তাতে ম্যাচের আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মনে মনে খুশিই হয়ে থাকবেন। কিন্ত ম্যাচ শুরুর পর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অন্য ছবি। মাত্র ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করল ভাঙাচোরা এক শুরু।
১৬, ১৫ এর পর ০—এশিয়া কাপে খেলা তিন ম্যাচে লিটনের রান। তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে তিনিই হতে পারতেন ভরসা। কিন্তু অসুস্থতার কারণে একে তো শুরু থেকে খেলতে পারেননি, ফিরে এসেও প্রথম দুই ম্যাচ খেলেন ৩ নম্বরে। এশিয়া কাপে এসে ওপেনিংয়ে নামলেন এ ম্যাচেই প্রথম এবং করলেন সবচেয়ে কম ‘০’ রান। মোহাম্মদ শামীর বলটাও ছিল দুর্দান্ত। অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকে সেটা লিটনের প্যাড ছুঁয়ে ভেঙে যায় স্টাম্প।
তিন বাউন্ডারিতে ১৩ রান করে ভালো শুরু ছিল তানজিদের। শামীর করা ইনিংসের প্রথম বলে দারুণ এক ফ্লিকে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরেই শুরু তাঁর ইনিংসের। কিন্তু লিটনের ফেরার পরের ওভারেই শার্দূল ঠাকুরের শর্ট বল ব্যাটে লাগিয়ে টেনে আনলেন স্টাম্পে। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এনামুল হক বিজয় এবং আরও একবার জায়গা বদলে পাঁচে নামা মেহেদী হাসান মিরাজও ফিরে যান দলের ৫৯ রানের মধ্যে। এরপরই সাকিব–তাওহিদ–মাসুমদের সেই লড়াই, যেটা বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত দিয়েছে জয়ের স্বাদ।
ভারতের সামনে ২৬৬ রানের লক্ষ্য দিয়ে বাংলাদেশের বোলাররাও দারুণ শুরু করেছিলেন। তানজিম তো ১৭ রানের মধ্যেই ফিরিয়েছেন দুই ওপেনারকে। এরপর একমাত্র শুবমান গিলই হয়েছেন বড় বাধা। অপর প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও ১৩৩ বলে ১২১ রানের ইনিংসে ভারতকে জয়ের স্বপ্নটা তিনিই দেখাচ্ছিলেন। ৪৪তম ওভারে শেখ মেহেদীর বলে ফিরে যান গিল, ভারত এরপর আশায় বুক বাঁধে অক্ষরকে নিয়ে। লিটন স্টাম্পিং মিস করায় ভাগ্যও একবার হেসেছিল তাঁর দিকে চেয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং–ফিল্ডিংয়ের সামনে শেষ পর্যন্ত অভঙ্গুর প্রাচীর হতে পারেননি কেউই।