দুই ম্যাচে এক জয় নিয়ে সুপার এইটের সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচে এক জয় নিয়ে সুপার এইটের সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ

উৎপল শুভ্রর লেখা

বাংলাদেশের সুপার এইটের স্বপ্ন, সামনে নেদারল্যান্ডস

সাগরের কাছেই মাঠ। এতই কাছে যে বড় ছক্কা মারলে বল সাগরে হারিয়ে যাওয়ার ভয়! সেই সাগরে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিলিয়ে নাকি উইকেটে বল ওঠানামা করে। হয়তো নিছকই কথার কথা, হয়তো তা নয়। সন্দেহটা শুধু প্রকাশ করে দেখুন, স্থানীয় লোকজন আপনাকে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এর সত্যতা প্রমাণ করে ছাড়বে।

স্টেডিয়ামের নাম আর্নস ভেল। আসলে এলাকাটারই নাম। অগ্ন্যুৎপাত থেকে জন্ম বলে সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনেডাইনসের রাজধানী কিংসটাউনজুড়ে চড়াই-উতরাই। পাহাড় আছে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপ যেহেতু, চারপাশে সাগর তো আছেই। সেই সাগরের পাশেই এই আর্নস ভেল স্টেডিয়াম। যেটির সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক আবেগ জড়িয়ে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ দর্শন এখানেই। ২০০৪ সালে এই মাঠেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম ম্যাচ। পাঁচ বছর পর এখানেই দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়। সেই আর্নস ভেলে এবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে নতুন ইতিহাস।

২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরের সাতটি বিশ্বকাপে যা আর পারেনি। এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবার সেই সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। ঘটনাচক্রে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই, যেখানে ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে সুপার এইটে উঠে গিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল।

সেই বিশ্বকাপের মতো এই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের নামও সুপার এইট। যাতে নাম লেখাতে সামনে দুটি বাধা। প্রথমটি আজ, যেটির নাম নেদার‍ল্যান্ডস। সমীকরণটা খুব সহজ। আইসিসির দুই সহযোগী সদস্য নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারালেই সুপার এইটের স্বপ্নপূরণ।

সুপার এইটে ওঠার দৌড়ে আছে নেদারল্যান্ডসও

এর মধ্যে কোনটি বড় বাধা, তা নিয়ে মনে হয় না কারও মনে কোনো সংশয় আছে। নেদারল্যান্ডস সেই আইসিসি ট্রফি যুগ থেকে বাংলাদেশের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বকাপেও খেলেছে বাংলাদেশের আগে। কুয়ালালামপুরের উপকণ্ঠে সুগোই বুলো মাঠে ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই ম্যাচ বাংলাদেশের ক্রিকেটে অমর এক গাথা হয়ে আছে। এসব সুদূর অতীত টেনে না এনে সাম্প্রতিক ইতিহাসের দিকে তাকালেও একটা অস্বস্তির খোঁজ পাবেন। মনে পড়ে যাবে গত নভেম্বরের ইডেন গার্ডেনস। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেই পরাজয়।

বিশ্বকাপে অঘটনপটিয়সী দল বললে প্রথম নামটা মনে হয় নেদারল্যান্ডসই হবে। প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপেই একটা না একটা কিছু করে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরও বেশি। বাংলাদেশের মতোই ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট। সুপার এইটে ওঠার হিসাবটাও তাই একই রকম—বাকি দুই ম্যাচেই জয়। তবে চাপটা কোন দলের ওপর বেশি, তা মনে হয় না বলার দরকার আছে।

ইডেন গার্ডেনসে সেই পরাজয় বেশি দিন আগের কথা নয়। দুই দলেই সেই ম্যাচের অনেক ক্রিকেটার। সবারই তাই তা মনে আছে। মনে না থাকলেও বাংলাদেশ দলকে কেউ না কেউ তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। ক্রিকেটারদের উত্তরে অভিন্ন একটা কথা থাকছে। সেটিও এমনভাবে বলা হচ্ছে, যেন প্রশ্নকর্তা তা জানেন না। ওটা ছিল ওয়ানডে, এটা টি-টোয়েন্টি—দুটি দুই ফরম্যাট। দুই ফরম্যাট তো বটেই, তবে ৫০ ওভারের চেয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেট কি আরও বেশি অনিশ্চিত, আরও বেশি নাটকীয় নয়!

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ফরম্যাটের ভিন্নতার কথা বলার পর অবশ্য আসল কথাটাও বলেছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে বাংলাদেশের কেউই ভালো করেনি, ওটা ছিল খারাপ একটা দিন, ক্রিকেটে যা হতেই পারে। এককথায় ইডেনে ওই পরাজয় বাংলাদেশের দলের জন্য ‘আ ব্যাড ডে ইন দ্য অফিস’। অতীতের ব্যাখ্যা দেওয়ার পর যখন ভবিষ্যতে তাকানো, নাজমুল তখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, ‘আমরা যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় না নেদার‍ল্যান্ডস আমাদের কাছ থেকে ম্যাচটা বের করে নিতে পারবে।’

অধিনায়ক এ কথা বলেছিলেন বিশ্বকাপ শুরুর আগে। তখনই যদি ‘নিজেদের সেরা খেলা’র ওপর এই বিশ্বাস থেকে থাকে, বিশ্বকাপে দুই ম্যাচের পর তা আরেকটু বেড়ে যাওয়ার কথা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে শুরু বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে জিততে হেরে যাওয়ার কষ্ট উপহার দিয়ে থাকতে পারে, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ওই ম্যাচ থেকে কিছু কি আর পাওয়া যায়নি! প্রাপ্তির তালিকার ১ নম্বরে পেসারদের দুর্দান্ত বোলিং।

কিংসটাউনের এ মাঠেই নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ

পরের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য খেলাটা অবশ্য বদলে যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশির ভাগ উইকেটই ধীরগতির, এর সঙ্গে টার্ন যোগ হয়ে কখনো কখনো অনেকটা বাংলাদেশের উইকেটের মতোই। পেসারদের ভালো করাটা অবশ্যই বাড়তি শক্তি জোগাবে, তবে নেদারল্যান্ডস আর নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের চিরাচরিত শক্তি স্পিনই হয়তো হয়ে উঠবে তুরুপের তাস।

ডালাসে প্রথম ম্যাচ খেলার পর নিউইয়র্কে দ্বিতীয় ম্যাচ। গ্রুপ পর্বে আর ফ্লাইটে ওঠার বিড়ম্বনা নেই। নেদারল্যান্ডস ও নেপাল—দুটি ম্যাচই এই সেন্ট ভিনসেন্টে। বেশি দূরে না ভেবে বর্তমানে থাকাটাই ভালো। তারপরও মনে তো তা উঁকি দেয়ই। সেন্ট ভিনসেন্টে এই দুই ম্যাচ খেলতে খেলতে বাংলাদেশ কল্পনায় অ্যান্টিগা দেখবে। সুপার এইটে উঠলে প্রথম দুই ম্যাচ সেখানেই। প্রতিপক্ষও মোটামুটি নিশ্চিতই বলা যায়—অস্ট্রেলিয়া ও ভারত।

একটু বেশিই ভাবা হয়ে যাচ্ছে। আগে তো বাংলাদেশ আজ নেদারল্যান্ডস-বাধাটা পার হোক।