অ্যালান ডোনাল্ড এখন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ। লক্ষ্ণৌর একানা স্টেডিয়ামে আজ যখন অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে, ডোনাল্ড কি তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও অতীতে ফিরে যাবেন? একটু নস্টালজিক হবেন? সেটি হলে সেই নস্টালজিয়ার শেষটাও সবার জানা।
ডোনাল্ডের সম্ভবত ভীষণ মন খারাপ হবে। অতীত তো আর ফিরিয়ে আনা যায় না, কিংবা অতীতে ফিরেও কোনো কিছু শুধরে নেওয়া সম্ভব নয়। ডোনাল্ড তবু হয়তো লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাববেন, ইশ্! আমরা ওই দৌড়টা যদি না দিতাম!
ডোনাল্ডকে ঘিরে দৌড়ের প্রসঙ্গ উঠলে সবার আগে ২৪ বছর আগের সেই দিনটা ফিরে আসাই স্বাভাবিক। ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন, বার্মিংহাম, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল—এই দিন-তারিখ ডোনাল্ড কখনো ভুলতে পারবেন না। সেদিন অস্ট্রেলিয়ার ২১৩ রান তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। উইকেটে ছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার ও ডোনাল্ড।
ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের করা শেষ ওভারের প্রথম দুই বলেই চার মারেন ক্লুজনার। পরের বলে কোনো রান হয়নি। চতুর্থ বলটি মিডঅনে ঠেলেই দৌড় দেন ক্লুজনার। ডোনাল্ড সাড়া দিতে দেরি করেন এবং ব্যাট ফেলেই দৌড় দেন। সর্বনাশ যা হওয়ার ততক্ষণে হয়ে গেছে! ডোনাল্ড রান আউট হন এবং ম্যাচটা টাই হলেও শ্রেয়তর রান রেট নিয়ে ফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে ইতিহাসেই সেটি অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য যেন চিরকালীন দুঃখ।
নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় মাঠ ছাড়ার সময় গ্যালারিতে কান্নারত এক শিশুকে দেখেছিলেন ডোনাল্ড। সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি। বিবিসিকে বলেছেন, ‘সেই ছোট্ট মেয়েটির মুখ ভুলতে পারি না। মাথায় হাত দিয়ে সে কাঁদছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পা দুটো চলছিল না, জেলির মতো হয়ে গিয়েছিল। হাঁটতে পারছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম, মেয়েটির হৃদয় ভাঙলাম!’
শুধু সেই মেয়েটি নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটপ্রেমীদেরও হৃদয় ভেঙেছিল সেদিন। ডোনাল্ড নিজেও কি সেই হারের পর দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছিলেন? উত্তরটা তাঁর মুখেই শুনুন, ‘এটা কাটিয়ে উঠতে আমাকে থেরাপি নিতে হয়েছিল। এটা নিয়ে আর কথা বলিনি। আমার অংশ হয়ে গিয়েছিল।’
ডোনাল্ড জানিয়েছেন, সেই থেরাপির নাম ছিল ‘ফ্লাডিং’, যেখানে ‘যেসব ছবি দুশ্চিন্তা তৈরি করে, সেসব বারবার দেখানো হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত দুশ্চিন্তা কেটে যায়।’ ৫৬ বছর বয়সী ডোনাল্ড এভাবেই ২৪ বছর আগের সেই হারের ক্ষত কাটিয়ে উঠেছেন।
সেই দৌড়ের ভিডিও বারবার দেখা নিয়ে ডোনাল্ড বলেছেন, ‘আমি যতই দেখি, ততই উপশম হয়। এটা তো কখনো ইউটিউব থেকে যাবে না। তাই এটা সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকাটা মেনে নিয়েছি। একটা ব্যাপার ভালো হয়েছিল যে তখন আমি ওয়ারউইকশায়ারে খেলতাম। যেটা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অনেক দূরে। আমি জানতাম, দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেকেই কষ্ট পেয়েছে এবং আমাদের দুষেছে।’
সেই ম্যাচের পর ডোনাল্ড যে প্রোটিয়া সমর্থকদের দুয়োর শিকার হননি, তা নয়। কিংবদন্তি স্মৃতিচারণা করেছেন, ‘প্রিটোরিয়ায় এক ম্যাচে ফাইন লেগ বাউন্ডারি সীমানায় ফিল্ডিং করছিলাম। সমর্থকেরা বলছিল “অ্যালান, তুমি কি এবারও দৌড়াবে?” “তোমার ব্যাট কোথায়?”’
বাংলাদেশ সময় ২টা ৩০ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা।