নাজমুল হোসেন
নাজমুল হোসেন

ধবলধোলাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সাহস হারাচ্ছেন না নাজমুল

অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ার মাত্র ২টি টেস্ট ও ৫টি ওয়ানডের। এই অল্প সময়েই নাজমুল হোসেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ভাবনার জগৎটা অন্য রকম। তিনি সবকিছুই একটু বড় পরিসরে ভাবতে চান। বাংলাদেশের কোনো অধিনায়কেরই নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারানোর আগাম বার্তা দেওয়ার ‘সাহস’ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নাজমুল নিউজিল্যান্ডকে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে হারানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিততে না পারলেও ড্র করেছিলেন।

সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই কিনা নাজমুল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গিয়েও সিরিজ জয়ের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। যেখানে সাদা বলের খেলায় এখন পর্যন্ত জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও সেই অতীতটা বদলায়নি। দুটি ম্যাচই যেন একটি আরেকটির পুনরাভিনয়। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে নাজমুলকে বাধ্য হয়েই লক্ষ্য পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে। নতুন লক্ষ্য—ধবলধোলাই এড়ানো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটাও হবে বড় অর্জন।

২০০৭ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে সাদা বলের ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে সবকটিতে হেরেছে, ৯টি টি-টোয়েন্টিতেও ফল একই। মাশরাফি, তামিমদের বাংলাদেশের পর এবার নাজমুলের বাংলাদেশও প্রথম জয়ের খোঁজ করছে।

আগামীকাল ভোরে নেপিয়ারে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগেও নাজমুলের কথায়ও সেই সুর, ‘পরের ম্যাচটা আমরা জেতার জন্য খেলব। শুরুতে একটা লক্ষ্য ঠিক করে এসেছিলাম যেটা হয়নি।’ সংবাদকর্মীদের অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আগের দলগুলোর চেয়ে এই দল একটু নতুন। সে হিসেবে ভালো কিছু জিনিস ছিল, যেমন শরিফুল-রিশাদের বোলিং। ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত চিন্তা করলে অবশ্যই লম্বা সময়। আমরা দল হিসেবে আরও ভালো কীভাবে খেলতে পারি, এটা জরুরি। ব্যক্তিগত কিছু ভালো পারফরম্যান্স হচ্ছে। বড় পার্টনারশিপ দরকার, এটাই কাল করার চেষ্টা করব। আর যেটা বললেন হোয়াইটওয়াশের সামনে, দোয়া করেন, এটা যেন না হয়।’

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য সরকার

যেকোনো দলই এমন অবস্থায় হার থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করে। হারা ম্যাচের ছোট ছোট অর্জন থেকে ইতিবাচকতা খুঁজতে থাকে। নাজমুলও তা–ই করছেন। সৌম্য সরকারের শতক, শরীফুল ইসলাম ও রিশাদ হোসেনের বোলিং—এই সিরিজে এখন পর্যন্ত অর্জন বলতে গেলে এসবই। নাজমুলের চোখও সেদিকে, ‘প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির কারণে কিছুটা দুর্ভাগা ছিলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে সৌম্য দারুণ একটা ইনিংস খেলেছে। রিশাদ ভালো বোলিং করেছে। এখানেও অনেক ইতিবাচক দিক ছিল। শুধু নেতিবাচক দিক চিন্তা না করে এ বছর কোন কোন জায়গায় ভালো করলাম, এটা দেখা দরকার। আমার মনে হয় রিশাদের বোলিং স্পেল খুব দারুণ ছিল। সৌম্যর কামব্যাক অসাধারণ ছিল। শরীফুলের নতুন বলের বোলিং ভালো ছিল।’ তবে যা ছিল না, তা হলো দলগত পারফরম্যান্স, ‘আমার মনে হয় বেশ কিছু জায়গায় উন্নতি হয়েছে। আরও বেশি দল হয়ে খেললে ভালো করা সম্ভব।’

ডানেডিন ও নেলসনের প্রথম দুই ম্যাচের মতো নেপিয়ারও বড় রানের মাঠ। এখানে জয়ের সমীকরণটা খুবই সহজ। জিততে হলে বড় রান করতে হবে। এ মাঠে জেতা ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের গড় প্রথম ইনিংস স্কোর ২৮৯.২৯। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড রান করেছে ৩৩৫ ও ৩৩৬। বাংলাদেশকেও জিততে হলে তেমন কিছুই করতে হবে।

সে জন্য করণীয় কী, তা নাজমুলের মুখেই শুনুন, ‘এটা একজন ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব। কোনো ব্যাটসম্যানই সেট হওয়ার পর আউট হতে চায় না। এই কন্ডিশনে ৩০-৩৫ রানের ইনিংস লম্বা করা খুব জরুরি। গত ম্যাচে একটা ইতিবাচক দিক ছিল, সৌম্য পুরো ইনিংস টেনে নিয়েছে। আরও একজন এভাবে ক্যারি করে গেলে আরও ভালো অবস্থানে থাকতাম। তবে কোনো ব্যাটসম্যানই আউট হতে চায় না। সবাই ইনিংস বড় করা নিয়ে চিন্তিত।’

সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেননি নাজমুল

অধিনায়ক হিসেবে সামনে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারও থাকে। নাজমুল প্রথম ম্যাচে ১৫ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ রান করে আউট হয়েছেন। নাজমুলও তাই প্রভাববিস্তারী ইনিংস খেলার অপেক্ষায় আছেন, ‘এই কন্ডিশনে আগেও খেলেছি। বেশ কিছু টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে। পরিকল্পনা আরও ভালো হতে পারত, ব্যাটিংয়ের কথা যদি বলি। তবে যে দুই ইনিংস গেছে, এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছি না। প্রতিদিন রান করব, এমন নয়। তবে যেদিন করব, সেটা যেন ইমপ্যাক্টফুল হয়।’

সেদিনটা যেন পরের ম্যাচেই আসে, বাংলাদেশ দলের সমর্থকরা নিশ্চয়ই সে প্রত্যাশাই করবেন।