সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা
সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা

সিলেটের বাধা কি তবে মাশরাফি

ম্যাচের আগের দিন, রাত একটা হবে। সিলেট নগরের পাঁচ ভাই হোটেল থেকে নৈশভোজ শেষে দলবল নিয়ে বের হলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সঙ্গে ছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকেরাও। খেলোয়াড়দের বের হতে দেখেই রাস্তায় ছোটখাটো জটলা লেগে গেল। বিপিএলে স্ট্রাইকার্স দল কতটা জনপ্রিয়, দৃশ্যটা যেন সেটাই বলছিল। কিন্তু জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে তো জয় চাই! যা কোনোভাবেই ধরা দিচ্ছে না সিলেটের হাতে। লিগ পর্বে ৪ ম্যাচ খেলে ফেলেছে গতবারের ফাইনালিস্টরা, জিততে পারেনি একটিও। সিলেটে আজ সোমবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ১৩৭ রান করে ৮ উইকেটে হেরেছে মাশরাফির দল

এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচে বাজেভাবে ব্যর্থ সিলেটের ব্যাটিং। এবারের বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৭৭ রান করেও হেরেছে দলটি। পরের তিন ম্যাচে তাদের রান ১২০, ৭৮ ও ১৩৮। তবে সোমবারের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা অধিনায়ক মাশরাফিকে একটু বেশিই হতাশ করেছে। জানা গেছে, ব্যাটসম্যানদের চাওয়াতেই টসে জিতে মাশরাফির আগে ব্যাটিং নেওয়া। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা সিলেটের উইকেটে কত রান নেওয়া উচিত, সে হিসাবেই গরমিল করে ফেলেছেন। ১৩৮ রান যে যথেষ্ট ছিল না, তা বোঝা গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটিংয়েই। সিলেটের রান তারা টপকে গেছে ১৭.৪ ওভারে।

চার ম্যাচে সিলেটের হয়ে একমাত্র অর্ধশতক জাকির হাসানের। পুরো ব্যাটিং অর্ডারে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান খুঁজতে গেলে তাঁর নামটাই আসবে সবার আগে। আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেন রান পাচ্ছেন না। গত বিপিএলে সর্বোচ্চ ৫১৬ রান করা নাজমুল এবারের বিপিএল শুরু করেছেন ৩৬, ১৪, ৫, ৫ রানের ইনিংস দিয়ে। গত মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় নাজমুল ছাড়াও ছিলেন সিলেটের আরও দুই ব্যাটসম্যান। একজন তাওহিদ হৃদয়, আরেকজন মুশফিকুর রহিম। এবার একজন খেলছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে, আরেকজন ফরচুন বরিশালে। দুজনের জায়গায় যাঁদের দলে নিয়েছে সিলেট, সেই মোহাম্মদ মিঠুন ও ইয়াসির আলীও এখনো কিছুই করতে পারেননি।

এমন উদ্‌যাপনের মুহূর্ত কমই পাচ্ছে সিলেট স্ট্রাইকার্স

বুঝতেই পারছেন, এখন পর্যন্ত ৪ ইনিংসে ১৪৩ রান করা জাকিরের ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল সিলেটের ব্যাটিং। সেই জাকিরও দলের ব্যাটিং–ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিলেন, ‘ব্যাটিংয়ে আমরা ভালো স্কোর দিতে পারিনি। আজ এবং সর্বশেষ ম্যাচেও বোলাররা ভালো বল করেছিল। কিন্তু অল্প রানটাও আমরা তাড়া করতে পারিনি। হয়তো দ্রুত উইকেট যাওয়ার কারণে আমরা ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছি। তবে এখনো ফিরতে পারি, সুযোগ আছে। আশা করি সামনের ম্যাচে ফিরতে পারব।’

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে সিলেট এখনো তাদের সেরা সমন্বয় খুঁজে পেয়েছে কি না, সেই প্রশ্নই উঠে যাচ্ছে। প্রশ্নটা আছে জাকিরের মনেও, ‘এ রকম হারতে থাকলে সেরা একাদশ সাজানোই কঠিন। তবু আমরা চেষ্টা করছি সেরা সমন্বয় খোঁজার। দেখি সামনের ম্যাচে কী হয়।’

চার ম্যাচে মাত্র ৭.৩ ওভার বল করেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা

এক দিক দিয়ে বলা যায় সেরা সমন্বয় সাজানোর বড় বাধা হয়তো দলটির অধিনায়ক নিজেই। চার ম্যাচ খেলে তিনি বল করেছেন মাত্র ৭.৩ ওভার, উইকেট নিয়েছেন ১টি। ফ্র্যাঞ্চাইজির ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে খেলার মতো ফিট না থেকেও খেলে যাচ্ছেন মাশরাফি। তাঁর অধিনায়কত্বের ওপর দলটির যথেষ্টই আস্থা। মাশরাফি মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলেও নাকি তাদের চলবে!

উনি তো গতবারও পারফর্ম করেছিলেন। আসলে এটা বিষয় নয়। আমরা কেউই ভালো খেলছি না। সবাই সবার জায়গা থেকে পারফর্ম করতে পারছি না বলেই এ রকম হচ্ছে।
জাকির হাসান, ব্যাটসম্যান, সিলেট স্ট্রাইকার্স

কিন্তু মাশরাফির নেতৃত্ব দলের কতটা কাজে লাগছে, সেটাও একটা প্রশ্ন। জাকির অবশ্য ব্যর্থতার দায়টা পুরো দলকেই দিতে চাইলেন, ‘উনি তো গতবারও পারফর্ম করেছিলেন। আসলে এটা বিষয় নয়। আমরা কেউই ভালো খেলছি না। সবাই সবার জায়গা থেকে পারফর্ম করতে পারছি না বলেই এ রকম হচ্ছে।’

সিলেট এখন আছে একটি জয়ের অপেক্ষায়। তাদের আশা পয়েন্ট টেবিলে দুটি পয়েন্ট এলেই হয়তো বদলে যাবে ভাগ্য। বিপিএলের আয়োজকেরাও তেমন কিছুই চাইছেন। অন্তত বিপিএলের সিলেট পর্ব জমিয়ে তোলার জন্যও স্ট্রাইকার্সের জয়টা যে খুব দরকার, দরকার মাশরাফির জন্যও।