প্রথমে টেস্ট। এরপর ওয়ানডে। এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির ‘শূন্য’ কাটাল বাংলাদেশ দল। এর আগে ২০ ওভারের খেলায় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৯ ম্যাচ খেলে সব কটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। দশম ম্যাচে এসে অধরা জয়ের দেখা পেল নাজমুল হোসেনের দল।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ দল তাদের টি-টোয়েন্টি ফর্ম ধরে রেখে নিউজিল্যান্ডকে ১৩৪ রানে থামিয়ে সে রান ৮ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে টপকে গেছে। এ বছরে ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশের ৮ম জয় এটি। ইতিহাস গড়া এই জয়ে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের মতো আজও কাজটা সহজ করে দিয়েছেন বোলাররা। নিউজিল্যান্ডের রানটাকে ১৩৪-এ থামিয়ে অর্ধেক কাজ করে দেন শরীফুল ইসলাম-মেহেদী হাসানরা। কন্ডিশন যেমনই হোক, ২০ ওভারের খেলায় যা হেসেখেলে টপকানো যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি। লিটন দাস উদ্বোধনে নেমে ধরে খেললেও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রনি তালুকদারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ছক্কায় রানের খাতা খোলা বাংলাদেশ দলের ওপেনার দ্বিতীয় ওভারে অ্যাডাম মিলনের বলে পুল শট খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন। ৭ বল খেলে ১ ছক্কায় ১০ রান করে আউট হন রনি।
তিনে নামা নাজমুল হোসেনও দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। তবে সেটাও বেশিক্ষণের জন্য নয়। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জিমি নিশামের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তোলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাঁর আগে ১৪ বলে ৪টি বাউন্ডারিতে ১৯ রান করেন তিনি। তবে দুজনের সৌজন্যে পাওয়ারপ্লেতে ৪২ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। মাঝের ওভারে বাংলাদেশকে আরেকটু এগিয়ে দেয় সৌম্য সরকারের ব্যাটিং। নবম ওভারে বেন সিয়ার্সের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান যোগ করেন তিনি। সৌম্য আউট হওয়ায় লিটনের সঙ্গে তাঁর ২৯ রানের জুটিও ভাঙে। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ৬৭।
উইকেটসংখ্যাটা অবশ্য ৩-এ থামেনি। তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে লিটন আরও ২৯ রান যোগ করলেও তা দীর্ঘ হয়নি। স্যান্টনারের করা ১৪তম ওভারে ক্রিজ ছেড়ে খেলে কাভারে ক্যাচ আউট হন তাওহিদ। ১৮ বল খেলে ১৯ রান করেন তিনি। আফিফ হোসেনকে ১ রানের বেশি করতে দেননি টিম সাউদি। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও লিটন একপ্রান্তে টিকেছিলেন ভরসা হয়ে।
শেষ তিন ওভারে জয়ের সমীকরণ যখন ১৮ বলে ২৪ রানের, তখন পায়ের চোট নিয়ে বেন সিয়ার্সের ১৮তম ওভারে একটি চার ও একটি ছক্কায় ১৪ রান তোলেন লিটন। তাঁকে সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান। জয়সূচক রানটা আসে মেহেদীর ব্যাট থেকে। মিলনের ১৯তম ওভারে মেহেদীর একটি ছয় ও একটি চারে ১৮.৪ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন মেহেদী, লিটন ৩৬ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় মাঠ ছাড়েন ৪২ রানে। জয়ের রান তোলা মেহেদীই হন ম্যাচসেরা।
এর আগে বোলিংয়ে ভালো শুরু এনে দেওয়ার কৃতিত্বও মেহেদীরই। ইনিংসের চতুর্থ বলেই তিনি দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেয়। মেহেদীর হাত ধরে জায়গা বানিয়ে অফের দিকে খেলতে গিয়ে বোল্ড টিম সাইফার্ট (০)। আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শরীফুল। নিজের প্রথম ওভারেই সুইং ও অ্যাঙ্গেল কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলেন অ্যালেনকে। ফল দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই শরীফুলের বাড়তি বাউন্স মেশানো বলে স্লিপে ক্যাচ অ্যালেনের (১)।
শরীফুল সেখানেই থামলেন না। পরের বলেই গ্লেন ফিলিপসের (০) প্যাড খুঁজে নেন তিনি। সুইংয়ে ভেতরে আসা বলে শটই খেলেননি ফিলিপস! শেষ পর্যন্ত এলবিডব্লিউ হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। তিনে নামা ড্যারেল মিচেল ১ রানে ৩ উইকেটের ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। কিন্তু মারতে গিয়ে উল্টো ভুল লাইনে খেলতে গিয়ে আউট হন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মেহেদীর ফ্লাইট মেশানো বলে সোজা মারতে গিয়ে বোল্ড হন মিচেল (১৫ বলে ১৪ রান)। দুই অঙ্কে গিয়ে আউট হয়েছেন মার্ক চ্যাপম্যানও। দশম ওভারে রিশাদের বলে কাভারে মারতে গিয়ে আউট হন চ্যাপম্যান (১৯ বলে ১৯ রান)।
মাঝের ওভারে অবশ্য নিউজিল্যান্ডের মান রক্ষা করেছেন জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। দুজন মিলে ৩১ বলে ৪১ রান যোগ করলে নিউজিল্যান্ডের রানটা ৯০-এর ঘরে পৌঁছায়। তবে দুই বাঁহাতির জুটি বড় হতে দেননি শরীফুল। ১৫তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসে স্যান্টনারকে (২২ বলে ২৩ রান) শর্ট মিড উইকেটে থাকা সৌম্যর তালুবন্দী করেন তিনি।
ভালো খেলছিলেন নিশাম। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিউজিল্যান্ডের রানটাকে নিয়ে যান এক শর ওপারে। কিন্তু ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল টসে ড্রাইভ করে কাভার বাউন্ডারিতে আফিফের হাতে ধরা পড়েন নিশাম। ২৯ বল খেলে ৪৮ রান করেন এই অলরাউন্ডার, স্ট্রাইক রেট ১৬৫। কিউইদের রান তখন ৭ উইকেটে ১১০। সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডের রানটাকে ১৩৪ এ নিয়ে যায় অ্যাডাম মিলনের ১২ বলে ১৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট নেন শরীফুল। ২টি করে উইকেট মেহেদী ও মোস্তাফিজের।
বোলারদের এই চমৎকার বোলিংই গড়ে দেয় ইতিহাস গড়া জয়ের ভিত্তি।
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, চ্যাপম্যান ১৯, মিলনে ১৬, মিচেল ১৪; শরীফুল ৩/২৬, মেহেদী ২/১৪, মোস্তাফিজ ২/১৫, রিশাদ ১/২৪, তানজিম ১/৪৫)।
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫ (লিটন ৪২*, সৌম্য ২২, মেহেদী ১৯*, নাজমুল ১৯, তাওহিদ ১৯; নিশাম ১/৭, সাউদি ১/১৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মেহেদী হাসান