তর্কাতীতভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রথী–মহারথীদের একজন তিনি। ক্রিকেটের অস্কারখ্যাত আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার প্রথম তাঁর হাতেই উঠেছিল। কিন্তু ক্যারিয়ারে একটা অপূর্ণতা এখনো রয়েই গেছে রাহুল দ্রাবিড়ের—ভারত জাতীয় দলের হয়ে কখনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। না খেলোয়াড় হিসেবে, না কোচ হিসেবে।
অথচ এক বছরের মধ্যে দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে তিন–তিনটি বৈশ্বিক আসরের ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে ভারত। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে। তবে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে পরাজিতদের দলে থাকতে চান না ভারতের প্রধান কোচ দ্রাবিড়। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষেই ভারতীয় দলের সঙ্গে পাট চুকানোর ঘোষণা দিয়ে রাখা এই কিংবদন্তি শিরোপার আনন্দে বিদায় রাঙাতে চান।
ফাইনাল–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে দ্রাবিড় যা যা বলেছেন, সেগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো—
অবশ্যই আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছি। অনেক বছর ধরে, বিশেষ করে গত বছর থেকে আমরা তিন সংস্করণেই র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। টানা ফাইনালে খেলতে পারা দারুণ ব্যাপার। এর কৃতিত্ব খেলোয়াড়দেরই দিতে হবে। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি–টোয়েন্টি—সব সংস্করণেই ছেলেরা ভালো করেছে।
যদি ভালো খেলতে পারি, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তাহলে আমরাই জিতব।
দেখুন, সেমিফাইনাল আর ফাইনালের মাঝে আমরা শুধু এক দিনের বিরতি পেয়েছি। তাই আমাদের অনুশীলন করার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা শারীরিক, মানসিক ও কৌশলগতভাবে এই ম্যাচের (ফাইনালের) জন্য প্রস্তুত, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি। এগুলো এমন বিষয়, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
দলের সবাই চাঙা, চোটজনিত কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোও দেখাশোনা করা হচ্ছে। বলতে পারেন, আমরা সব ধরনের কৌশলগত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ছেলেরা মানসিকভাবে নির্ভার ও রোমাঞ্চিত। সবাই খেলার জন্য মুখিয়ে আছে।
(শিক্ষা নেওয়ার) কিছু নেই। আমার মনে হয়েছে, আগের ফাইনালগুলোতেও আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। বিশেষ করে আহমেদাবাদে (২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে)। সম্ভাব্য যা যা করা দরকার, করেছি। নির্দিষ্ট দিনে প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। এটা খেলারই অংশ। এবার যারা আমাদের বিপক্ষে (দক্ষিণ আফ্রিকা) খেলতে যাচ্ছে, তারা ভালো খেলেই ফাইনালে উঠেছে। তারাও আমাদের মতো শিরোপা জিততে চায়। তবে আমার আশা, এবার আমরা ওদের চেয়ে ভালো খেলব।
সে রকম কিছু নয়। ১৯৯১ সালে (নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর) দক্ষিণ আফ্রিকা যে দল নিয়ে খেলেছে, সেই দলের সঙ্গে এই দলের মিল নেই। অনেক খেলোয়াড় এসেছে, আবার চলে গেছে। তাই কেউ আগে ফাইনাল খেলে না থাকলেও তা এবারের ফাইনালে (নেতিবাচক) প্রভাব ফেলবে না। আমার মনে হয় না, খেলোয়াড়েরা অতীত সঙ্গে করে নিয়ে যায়। প্রতিটি দিনই নতুন দিন। সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন, এবার সেরা দুটি দল ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে। দুই দলই ফাইনালে খেলার যোগ্য। আশা করি, দারুণ একটা ম্যাচ হবে এবং আমরা বিজয়ীদের দলে থাকব।
আমরা বার্বাডোজে একটি ম্যাচ খেলেছি। উইকেটের সঙ্গে পরিচিত হতে পারা আমাদের জন্য চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু আগের ম্যাচ আর এই ম্যাচ একই উইকেটে হবে না। উইকেটের চরিত্রও আলাদা হতে পারে।
কিন্তু আমার মনে হয়, দল হিসেবে আমরা একটি জায়গায় খুব ভালো করেছি। টুর্নামেন্টজুড়ে বিভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছি। কোন উইকেটে কত রান নিরাপদ, তা বুঝতে পেরেছি এবং সেভাবেই খেলেছি। সব ম্যাচেই ২০০ করতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। কিছুটা মন্থর ও নিচু উইকেটে আমরা পার প্লাস স্কোর করেছি। সেখানে ১৭০ রান ২০০–এর সমান হয়ে উঠেছে। আশা করি, বার্বাডোজের পিচ দেখলেই বুঝতে পারব, এর আচরণ কেমন হবে।
এটা ঠিক যে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে আমরা ভীষণ চাপে ছিলাম। কিন্তু আমরা সব সময়ই চাপ কাটিয়ে উঠেছি এবং ভালো খেলেছি। ফাইনালে ওঠার পর আমরা অনেকটাই নির্ভার। আমরা প্রতিনিয়ত উন্নতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো নিখুঁত ম্যাচ উপহার দিতে পারিনি। আমার মনে হয়, কোনো দলই নিখুঁত ক্রিকেট খেলতে পারেনি। যে কথা আগেও বললাম, আমাদের দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। ভালো প্রস্তুতি নিয়েই এখানে এসেছি। সম্ভাব্য যা কিছু করা সম্ভব করেছি, নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। এখন ছেলেদের বলব, মাঠে নেমে পড়ো এবং দারুণ কিছু করে দেখাও।