তিন ম্যাচ বসে থাকার পর সুযোগ এসেছিল মোস্তাফিজুর রহমানের। আর লিটন দাস তো কলকাতায় যোগই দিলেন তিন ম্যাচ পর। তাহলে বাংলাদেশের এই ওপেনারকে কলকাতার জার্সিতে কবে দেখা যাবে?
লিটন দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর কলকাতার প্রথম ম্যাচ আজ, প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। এই ম্যাচে লিটনের খেলার সম্ভাবনা কতটুকু? আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দলে সুযোগ পেতে বেশ কঠিন অঙ্কই মেলাতে হবে লিটনকে।
কলকাতায় বিদেশি হিসেবে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলেছেন আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ও স্পিনার সুনীল নারাইন, নিউজিল্যান্ডের পেসার লকি ফার্গুসন ও টিম সাউদি।
তাঁদের মধ্যে ওপেনার লিটনের লড়াইটা আফগান ওপেনার গুরবাজের সঙ্গে। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচেই খেলা গুরবাজ খুব একটা খারাপ করেননি। তিন ম্যাচে এক ফিফটিসহ ৯৪ রান, গড় ৩১.৩৩, স্ট্রাইক রেটটাও মন্দ নয়—১৩০.৫৫।
এরপরও যদি গুরবাজের পরিবর্তে অন্য কোনো ওপেনারকে খেলাতে চায় কলকাতা, সে ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসতে পারেন রয়ও। কারণ, অনেক তড়িঘড়ি করে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর ২ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে ইংলিশ এই ওপেনারকে দলে নিয়েছে দুবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা।
এখন পর্যন্ত হওয়া তিন ম্যাচে গুরবাজের সঙ্গে ওপেন করেছেন তিনজন—মানদীপ সিং, ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও নারায়ণ জাগাদিসন। তিন ম্যাচে গুরবাজের সঙ্গীদের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি।
ওপেনিংয়ে রান–খরা কাটাতে দুই বিদেশি ওপেনার খেলানোর কথাও ভাবতে পারে কলকাতা। গুরবাজের সঙ্গে তখন লিটন আর রয়ের মধ্যে একজনকে ওপেন করতে দেখা যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও লিটনের সম্ভাবনা কমই।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতায় লিটনের চেয়ে এগিয়ে রয়। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া পাকিস্তান সুপার লিগে ১৪৫ রানের ইনিংসও খেলেছেন তিনি। এই ফর্ম যে রয় আইপিএলেও নিয়ে এসেছেন, সেটা বলাই যায়।
যদিও আইপিএলে এখনো তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলা রয় এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১৩ ম্যাচ। ২৯.৯১ গড় ও ১২৯.০২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৩২৯। আইপিএলে কলকাতা রয়ের চতুর্থ দল।
লিটনও আছেন ভালো ফর্মে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৭৩ রানের ইনিংস খেলার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম বলে টি-টোয়েন্টিতে ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন লিটন। শেষ পর্যন্ত দলে সুযোগ পান বা না পান, আরও একটি পরিসংখ্যানেও রয়ের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারেন লিটন।
ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর তথ্য, ছেলেদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অন্তত ৭০০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পাওয়ার–প্লেতে লিটনের স্ট্রাইক রেট সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার–প্লেতে ৬৪ ইনিংস ব্যাটিং করে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪২.৫৭। এই তালিকাতে লিটন পেছনে ফেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কককেও।
কলকাতা দুই বিদেশি ওপেনার খেলাতে চাইলে স্বাভাবিকভাবেই গত তিন ম্যাচে খেলা কোনো বিদেশি ক্রিকেটারকে দলের বাইরে রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে দল থেকে বাদ পড়তে হবে বিদেশি পেসার হিসেবে গত তিন ম্যাচে খেলা টিম সাউদি কিংবা লকি ফার্গুসনকে। কলকাতার হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে খেলেছিলেন টিম সাউদি।
দুই ম্যাচেই খরুচে হওয়ায় তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয় ফার্গুসনকে। তিনিও গত ম্যাচে গুজরাটের বিপক্ষে ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৪০ রান। এদের জায়গায় কলকাতা ভাবতে পারে ভারতীয় পেসার ভৈভব আরোরা, কুলওয়ান্ত খিজরোলিয়াকে।
তবে এই ঝুঁকি কলকাতার না নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ খরুচে হলেও ডেথ ওভারে ফার্গুসন কিংবা সাউদিকে বিশেষ প্রয়োজন কলকাতার। সে ক্ষেত্রেও বিদেশি খেলোয়াড় কোটায় লিটনের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে।
ওপেনিং ছাড়াও ৩ নম্বর ও মিডল অর্ডারে খেলার অভিজ্ঞতা আছে লিটনের। তবে কলকাতার হয়ে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, গত ম্যাচে তিনে নেমে আইয়ার খেলেছেন ৮৩ রানের ইনিংস। মিডল অর্ডার থেকে নীতিশ রানা, রিঙ্কু সিংদের আপাতত সরানোর কোনো কারণ নেই। আর লিটনের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরো মৌসুম দলের সঙ্গে থাকতে না পারাও প্রভাব ফেলতে পারে।
লিটনও অবশ্য এসব বাস্তবতা মেনে নিয়েই দেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার আগে তিনি জানিয়েছেনও, আইপিএলে তাঁর মূল মনোযোগটা থাকবে ক্রিকেট শেখায়, ‘আমি জানি না, ওইখানে গিয়ে খেলার সুযোগ পাব কি না। খেললেও ভালো খেলব কি না, এটারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু এটা একটা শেখার প্রক্রিয়া। অবশ্যই আমি ২০-২৫ দিন বা যে কয় দিনই থাকব, সব কটি মাঠের আইডিয়া নেওয়ার চেষ্টা করব, যা ভবিষ্যতে কাজে দেবে।’