অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা

এবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া

ভারত আর ইংল্যান্ডের মতো ট্রফির জোরালো দাবিদার হিসেবে হয়তো উচ্চারিত হয়নি, তবে সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকেরই ‘সমর্থন’ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। লিগ পর্ব ৯ ম্যাচের লম্বা পথ বলে হয়তো আশাবাদী এখনো অনেকেই। তবে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্যাট কামিন্সের দল যে পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছে, তাতে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে সংশয়বাদীর সংখ্যা বাড়তেই পারে। ফিল্ডিংয়ে একের পর এক ক্যাচ মিস, ব্যাটিংয়ে তিন শর বেশি রান তাড়ায় রক্ষণাত্মক শুরু আর মিডল অর্ডারের ভঙ্গুরতা মিলিয়ে শেষটা হয়েছে বড় হারে। প্রোটিয়াদের ৩১১ রান তাড়া করতে নেমে ১৭৭ রানে অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। হার ১৩৪ রানের বড় ব্যবধানে।

এবারের বিশ্বকাপে এটি অস্ট্রেলিয়ার টানা দ্বিতীয় হার। এর আগে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। আর টানা দুই ম্যাচ জিতে রান রেটে এগিয়ে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

লক্ষ্ণৌর অটল বিহারি বাজপেয়ি একানা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়ার শুরুটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। টেম্বা বাভুমা আর কুইন্টন ডি ককের উদ্বোধনী জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেয় ১০৮ রান। রান তাড়ায় নামা অস্ট্রেলিয়া প্রোটিয়াদের উদ্বোধনী জুটিতে তোলা সংগ্রহে পৌঁছানোর আগেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। শুরুটা হয় ষষ্ঠ ওভারে মার্কো ইয়ানসেনের বলে মিচেল মার্শের আউটে। পরের ওভারে লুঙ্গি এনগিডির শিকার হয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ১৫ বল খেলা মার্শের ব্যাট থেকে আসে ৭ রান, ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে ২৭ বলে ১৩।

চারটি ৪ মেরে শুরুটা ভালোই করেছিলেন স্টিভেন স্মিথ। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি

দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন স্টিভেন স্মিথ ও মারনাস লাবুশেন। কিন্তু কাগিসো রাবাদার লেগ স্টাম্পে পড়া বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হয় স্মিথকে। রিভিউর পরও আউট হওয়ায় বেশ অবাকই হতে দেখা যায় স্মিথকে, মাঠ ছাড়তেও কিছুটা বিলম্ব করেন। অস্ট্রেলিয়ার ‘আপত্তি’ থাকতে পারে আরও একটি উইকেট নিয়ে। রাবাদার বলে মার্কাস স্টয়নিস যেভাবে ডি ককের ক্যাচে পরিণত হয়েছেন, সেটি ব্যাট থাকা হাতে নাকি ব্যাট-বিহীন হাতে লেগেছিল বল, এ নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল রিপ্লেতে।

তবে স্টয়নিসের সম্ভাব্য বিতর্কিত আউটের আগেই অবশ্য ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া। রাবাদা জস ইংলিসকে আর কেশব মহারাজ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে তুলে নিলে ৬৫ রানেই ৫ উইকেট হারায় কামিন্সের দল, স্টয়নিসের আউটে স্কোরবোর্ড পরিণত হয় ৬ উইকেটে ৭০ রানে। এখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার রান দুই শর দিকে যাওয়ার পেছনে অবদান লাবুশেন (৭৪ বলে ৪৬), মিচেল স্টার্ক (৫১ বলে ২৭) ও প্যাট কামিন্সের (২১ বলে ২২)।

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন কুইন্টন ডি কক

ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়াকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেওয়া এই বোলাররাই অবশ্য নিজেদের মূল দায়িত্বে খুব একটা উজ্জ্বল ছিলেন না। এর পেছনে অবশ্য কামিন্স-স্টার্কদের দায়ের চেয়ে প্রোটিয়া ব্যাটিংয়েরই অবদান বেশি, বিশেষ করে ডি কক আর এইডেন মার্করামের। অধিনায়ক বাভুমাকে নিয়ে ২০ ওভারের মধ্যেই দলের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান ডি কক। বাভুমা ছন্দে ছিলেন না মোটেও, ৫৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসেই ক্যাচ দিয়ে বাঁচেন তিনবার। তবে ডি ককের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রান নিয়ে ভাবতে হয়নি। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা এই বাঁহাতির ইনিংসে এ দিনও ছিল স্ট্রোকপ্লের পসরা। ৮টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৫টি ছক্কা, সবকটি ছক্কাই এসেছে লেগ সাইডে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে। কামিন্সকে পুল করে মারা অমন একটি ছক্কায় ৯০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিটি পান তিনি।

আরও একটি জয় দক্ষিণ আফ্রিকার

ম্যাক্সওয়েলের বলে ডি কক যখন বোল্ড হয়ে ফেরেন, প্রোটিয়াদের রান তখন ৩ উইকেটে ১৯৭। হাতে ছিল ১৫.১ ওভার। তবে উইকেট-বল দুটিই হাতে থাকার পরও শেষ দিকে প্রত্যাশিত মাত্রায় বড় ঝড় তুলতে পারেননি হাইনরিখ ক্লাসেন-ডেভিড মিলাররা। মার্করামের ৪৪ বলে ৫৬ রানের ইনিংসের সুবাদে অবশ্য তিন শ পেরোয় স্কোর। স্টার্কের করা ইনিংসের পঞ্চাশতম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে আসে মাত্র ১ রান। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু রান কম হয়ে গেছে মনে হলেও শেষ পর্যন্ত এর কাছাকাছিও যেতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১১/৭ (ডি কক ১০৯, মার্করাম ৫৬, বাভুমা ৩৫; ম্যাক্সওয়েল ২/৩৪, স্টার্ক ২/৫৩)।

অস্ট্রেলিয়া: ৪০.৩ ওভারে ১৭৭ (লাবুশেন ৪৬, স্টার্ক ২৭, কামিন্স ২২; রাবাদা ৩/৩৩, মহারাজ ২/৩০)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৪ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: কুইন্টন ডি কক