অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর এখন বেশ চাপে পড়েছে পাকিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তান পরের দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে। পাকিস্তানের এমন পারফরম্যান্স হতাশ করেছে সাবেকদের। এমনকি আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচ নিয়েও অনেকে ভয় পেতে শুরু করেছেন। সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা তো বলেই দিয়েছেন, যদি চেন্নাইয়ে পরের ম্যাচে স্পিনিং উইকেট হয়, তবে সেই ম্যাচে আফগানরা পাকিস্তানের বিপক্ষে ফেবারিট হিসেবেই খেলতে নামবে।
পাকিস্তান সামগ্রিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেছেন রমিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একাধিক ক্যাচ ছেড়েছে পাকিস্তান। তবে ১০ রানে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ ছাড়াটাই বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
উসামা মিরের সেই সহজ ক্যাচ ছাড়া নিয়ে রমিজ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘ক্রিকেটে এমনটা কমই হয় যে একটা ক্যাচ ছাড়লে তার শাস্তি ম্যাচজুড়ে দিতে হয়। ওসামা মির হালুয়ার মতো একটি ক্যাচ ছেড়েছে, বাচ্চাদের জন্য দেওয়া ক্যাচ ছিল এটি। কিন্তু সে ধরতে পারেনি। তখন ১০ রানে ছিল ওয়ার্নারের, পরে সে ১৬৩ রান করেছে। একটি ক্যাচ ছাড়ার এত বড় শাস্তি কোনো দলকে আর পেতে দেখিনি। ওখান থেকেই ম্যাচের রূপ বদলে গেছে। শাহিন যদি তখন ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দিতে পারত, তবে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলা যেত। কারণ, নতুন বলে একবার যদি আশা-ভরসা পাওয়া যায়, তখন সবকিছু অন্য রকম হয়ে যায়। ফিল্ডিং পাকিস্তানের খুবই বাজে ছিল। যে কারণও চাপও তৈরি হয়েছে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচ কতটা কঠিন হবে, তা বোঝাতে রমিজ বলেছেন, ‘পাকিস্তানের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে। পরের ম্যাচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে। চেন্নাইয়ে যেকোনো কিছু হতে পারে। স্পিনের বিপক্ষে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের যেমন পারফরম্যান্স, এখানে যেকোনো কিছু হতে পারে। যদি স্পিনিং উইকেট হয়, তবে আমার মনে হয় আফগানিস্তানই ফেবারিট হিসেবে কিছুটা এগিয়ে থাকবে।’
প্রথম ৪০ ওভারের বোলিংই পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে বলে মনে করেছেন রমিজ, ‘বোলিংয়ে প্রথম ৪০ ওভার খুবই বাজে ছিল। শেষের ৫ থেকে ৭ ওভারে শাহিন আফ্রিদি এবং হারিস রউফ ফিরে আসায় (কিছুটা সুবিধা হয়েছে)। তবে হারিস রউফের জন্য এটা এমন দিন ছিল, যা সে ভুলে যেতে চাইবে। কারণ, প্রথম ৪ ওভারে সে ৬-৭০ রান দিয়ে দিয়েছে। ওখান থেকেই ম্যাচ পাকিস্তানের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ যদি একবার এমন মোমেন্টাম পেয়ে যায়, তবে ঘুরে দাঁড়ালেও কোনো লাভ হয় না। দেখুন, উইকেট নেওয়ার পরও পাকিস্তানকে ৩৬০ রানের বেশি তাড়া করত হলো।’
ওয়ার্নারের সঙ্গে মিচেল মার্শও এদিন সেঞ্চুরি করেছেন। তাঁকে নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করতে গিয়ে মিচেলের বাবা জিওফ মার্শের প্রসঙ্গও টেনেছেন রমিজ, ‘মিচেল মার্শের বাবার সঙ্গে আমি খেলেছি। সে তার ছেলের চেয়ে একেবারে ভিন্ন ছিল। এত বড় শট সে মারত না। কিন্তু সে তার ছেলের মধ্যে বারুদ ভরে দিয়েছে। কী দারুণ একই ইনিংস সে খেলেছে! যেখানেই বল করেছে, ছক্কা মেরেছে। এটাই হচ্ছে ব্যাটিং, যেখানে দারুণ শুরুর পর সে সেঞ্চুরি করেছে। আর ওয়ার্নার ক্যাচ ছাড়ার পর সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল। সে পাকিস্তানের বোলারদের স্থির হতে দেয়নি। আর পাকিস্তানের বোলিং গত দেড়-দুই মাসেও মনে হচ্ছিল বিশ্বসেরা, আর এখন তাদের সাধারণ মনে হচ্ছে।’
হারের জন্য বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে কারও বড় ইনিংস খেলতে না পারাকেও দুষছেন রমিজ, ‘পাকিস্তানের ব্যাটিং স্পিনের বিপরীতেও নড়বড়ে। আর টেল এন্ডাররা ফাস্ট বোলারদের খেলতে পারে না। দেখুন, ৫ ওভার বাকি ছিল ৩০৫ রান করেছে। ওরা নেট রানরেটের খেয়ালও করেনি। কারণ, শেষে গিয়ে নেট রানরেট শেষ দিকে অনেক বড় ব্যাপার হয়ে উঠবে। আপনি কীভাবে ৩৫০ রান করবেন, যখন কোনো ব্যাটসম্যান ৪০-৫০-৬০ রান করে আউট হয়ে যাবে। দুই ওপেনার ফিফটি পাওয়ার পর আউট হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। এই উইকেট এতই সহজ ছিল যে চাইলেই ১৫০ রান করা যেত।’
রমিজ আরও যোগ করেন, ‘৩৫-৩৬ ওভার পর্যন্ত লড়াই বরাবর ছিল। কিন্তু এরপরই মার খেয়েছে পাকিস্তান। সেট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেছে এবং টেল এন্ডার ভরসা হতে পারেনি। একটা দিক ঠিক করলে আরেকটা খারাপ হয়ে যায়। বোলিং চললে ব্যাটিং চলে না, আবার ব্যাটিং চলে বোলিং চলে না। আর ব্যাটিং-বোলিং চললে ফিল্ডিং খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সবাই একসঙ্গে জ্বলে না উঠলে কিছু হবে না। স্পিনেও ভালো খেলতে চা পারছে না। আর টেল এন্ডার অহেতুক শট খেলে। তারা ভয়ে পেয়ে যায়। দুটি বাউন্সার দেখলে পেছনে সরে যায়। যদি আরও ভালো অধিনায়ক হতো, তবে টেল এন্ডার এমন ভয় পেয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের সময় ইমরান খান ছিলেন, এ ধরনের ব্যাটিং দেখলে উনি বাদ দিয়ে দিতেন। কারণ, এটা যেকোনো দলের জন্য বাজে প্রচারণা যে তাদের টেল এন্ডার ফাস্ট বোলিং দেখে পালিয়ে গেছে।’