যশস্বী জয়সোয়ালের তখন ৭ বলে ৭ রান। মার্কো ইয়ানসেনের বলে সোজা প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দেন জয়সোয়াল। কিন্তু সহজ ক্যাচটি ফেলে দেন হায়দরাবাদের অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। সঙ্গে সঙ্গেই ইসপিএনক্রিকইনফোর ধারাভাষ্য পাতায় একজন মন্তব্য করেন, ‘কামিন্স কি দুটি পয়েন্টই ফেলে দিলেন!’ এরপর নটরাজনের বলে রিয়ান পরাগের ক্যাচ ফেলেন অভিষেক। পরাগ তখন ১৫ বলে ছিলেন ২৪ রানে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেরকম কিছু হয়নি। জয়সোয়াল ও পরাগের দুজনই ফিফটি করলেও ম্যাচ জিততে পারেনি রাজস্থান। শেষ বলে গড়ানো ম্যাচে ১ রানের জয় তুলে নিয়েছে হায়দরাবাদ। ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ক্যাচ মিসের ‘প্রায়শ্চিত’ই যেন করেছেন কামিন্স। প্রথম বলেই তিনি তুলে নেন ধ্রুব জুরেলকে। পরের চার বলে দেন মাত্র ১ রান। কিন্তু শেষ বলে আবার ছক্কা হজম করেন। শেষ ওভারটি করেন ভুবনেশ্বর কুমার। ৬ বলে রাজস্থানের দরকার ছিল ১৩ রান। কিন্তু খেলা শেষ বলে নিয়ে গেলেও রোভম্যান পাওয়েল ও রবীচন্দ্রন অশ্বিন সেই রান তুলতে পারেননি।
রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ভুবনেশ্বরের বলে জস বাটলার ও সঞ্জু স্যামসনকে হারানো রাজস্থান পড়তে পারত আরও বড় বিপদে। জয়সোয়াল যখন ‘জীবন’ পান, রাজস্থানের রান তখন ছিল ৩.১ ওভারে ২ উইকেটে ২১। আর ৫,৫ ওভারে পরাগের ক্যাচ মিস হওয়ার সময় ২ উইকেটে ৫৮ রান ছিল তাদের।
‘জীবন’ পেয়ে জয়সোয়াল ৪০ বল খেলে ৭ চার ও ২ ছয়ে করেছেন ৬৭ রান। আর পরাগ আউট হওয়ার আগে ৮ চার ও ৪ ছয়ে ৪৯ বলে করেছেন ৭৭ রান। এরপর বাকি ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছু করতে পারেননি বলেই হারতে হয়েছে রাজস্থানকে।
এর আগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০১ রান পেরোতে পেরেছেন মূলত তিনজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। ফিফটি করেছেন ট্রাভিস হেড ও নীতিশ কুমার। আর ১৯ বলে ৪২ রানের এক ঝোড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন হাইনরিখ ক্লাসেন।
এ ম্যাচের আগে কথা হচ্ছিল-টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে থাকা হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যানদের আসল পরীক্ষা এই ম্যাচ। কারণ, এবার যে তারা তর্কসাপেক্ষে টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং আক্রমণের সামনে পড়েছে।
কথাটা যে একদম অমূলক নয়, সেটা বোঝা যায় ৪৪ বলে ৫৮ রান করা হেড, ৪২ বলে অপরাজিত ৭৬ রান করা নীতিশ ও ঝোড়ো ইনিংস খেলা ক্লাসেনের এ ম্যাচে শুরুটা দেখলে। হেড ইনিংসের শুরুটা চার মেরে করেছেন ঠিক, কিন্তু পরের চারটি পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় ৮ বল পর্যন্ত। পাওয়ার প্লেতে ১৭ বল খেলে ‘মাত্র’ ১৮ রান করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। হায়দরাবাদও প্রথম ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তোলে মাত্র ৩৭ রান।
নীতিশও শুরু করেন দেখেশুনে। রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে ৬ মেরে প্রথম বাউন্ডারি পাওয়ার আগে মুখোমুখি হওয়া ১০ বলে করেন ৫ রান। পরে অবশ্য হাত খুলে খেলেন হেড-নীতিশরা। হেড অবশ্য শ্লথ শুরুর হিসেবটা আউট হওয়ার আগে সেভাবে মেলাতে পারেননি। স্কুপ শট খেলতে গিয়ে নিজের স্টাম্প নিজেই ভাঙার আগে ৪৪ বলে ৫৮ রান করেছেন ১৩১.৮১ স্ট্রাইক রেটে। অথচ এবারের টুর্নামেন্টে ১৯৪.১১ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন তিনি।
তা হেড আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় ‘শ্লথ’ থাকলেও নীতিশের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তাঁর ৫৭ বলে ৯৬ রানের জুটিই মূলত হায়দরাবাদের ২০০ রান পেরোনোর ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই ক্লাসেনের ওই ২২১.০৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস। অথচ মারকুটে ব্যাটসম্যান ক্লাসেনও আজ শুরুটা করেছিলেন খুবই ধীরলয়ে। উইকেটে এসেছেন ১৫তম ওভারে, হেডের আউটের পর। প্রথম রান নিয়েছেন মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় বলে। এরপর অবশ্য তুলেছেন ঝড়। ১৯ বলে ৪২ রানের ইনিংসটিতে মেরেছেন ৩টি করে চার ও ছয়।