বেন স্টোকসকে রান আউট করে দেওয়ার পর শ্রেয়াস আইয়ারকে ঘিরে ভারতীয় খেলোয়াড়দের উদযাপন। প্রকারান্তরে যা টেস্ট জিতে যাওয়ার আগাম উদযাপনও।
বেন স্টোকসকে রান আউট করে দেওয়ার পর শ্রেয়াস আইয়ারকে ঘিরে ভারতীয় খেলোয়াড়দের উদযাপন। প্রকারান্তরে যা টেস্ট জিতে যাওয়ার আগাম উদযাপনও।

বিশাখাপট্টনম টেস্ট: ১০৬ রানের জয়ে সিরিজে ফিরল ভারত

গতকাল জেমস অ্যান্ডারসন বলেছিলেন, ৬০-৭০ ওভারের মধ্যে জেতার চেষ্টা করবে ইংল্যান্ড। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যখন ক্রিজে এলেন, তখনো ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১৮ রান। ম্যাচের পরিস্থিতি এতেই বুঝে যাওয়ার কথা।

ভারত প্রথম ইনিংসে যত করেছিল, চতুর্থ ইনিংসে এসে ইংল্যান্ডকে করতে হতো প্রায় তত রান। কাজটি সহজ ছিল না মোটেও, তবে ‘বাজবল’ খেলে চলা ইংল্যান্ড ‘আশ্বাস’ দিয়েছিল রোমাঞ্চের। শেষ পর্যন্ত বিশাখাপট্টনমে ভারতের সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি তারা। ৫ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৬ রানের জয়ে সমতা এনেছে ভারত। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজকোটে তৃতীয় টেস্ট।

জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৯ উইকেটে ৩৩২ রান। প্রথম সেশনে তারা তোলে ১২৭ রান, তবে বিনিময়ে ভারতকে দিতে হয় ৫ উইকেট। রেহান আহমেদ, ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাক ক্রলির পর জনি বেয়ারস্টোর উইকেট নিয়ে ভারত মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় সিরিজ ১-১ করার ক্ষেত্রে পরিষ্কার ফেবারিট হয়ে। সেটি দ্রুতই হয়নি, তবে ভারত পেয়েছে প্রত্যাশিত জয়।

সকালে প্রথম ১৭ বলে উঠেছিল ২ রান, এরপর বুমরাকে ড্রাইভ করে ইংল্যান্ডের মনোভাবটা ফুটিয়ে তোলেন ক্রলি। তিনি অবশ্য আক্রমণ করেন সুযোগ বুঝে, রুট-পোপরা তা করেননি। রেহানকে ফিরিয়ে দিনে ভারতের প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন অক্ষর প্যাটেল, তাঁর নিচু হওয়া বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু হন ইংল্যান্ডের ‘নাইটহক’।

রুটের ইনিংস ছিল অদ্ভুত

নেমে দ্রুতই ২০ পেরিয়ে যান পোপ, কিন্তু অশ্বিনকে জোরের ওপর কাট করতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন। এর আগে রেহানের ক্যাচ ডাইভ দিয়ে নাগাল না পেলেও এবার দারুণ রিফ্লেক্সে পোপেরটি ধরেন অধিনায়ক রোহিত। গতকাল পাওয়া চোটের কারণে মাঠে ছিলেন না ভারতের নিয়মিত স্লিপ ফিল্ডার শুবমান গিল।

আঙুলে চোট পাওয়া রুট এসে প্রথম বলেই রিভার্স সুইপে চার মারেন অশ্বিনকে। এরপর আবার রিভার্স সুইপে মারেন চার, যদিও এ শটে তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অক্ষরকে এরপর ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারেন ছক্কা। অশ্বিনকে সে শটের পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তোলেন অক্ষরের হাতে। ১০ বল, ১৬ রান, এরপর অদ্ভুত শটে আউট—রুটের ইনিংসই ছিল অদ্ভুত।

এই ডামাডোলের মধ্যে ক্রলি রান করে গেছেন সুযোগ বুঝে, বেয়ারস্টোর সঙ্গে জুটিটাও জমছিল ভালোই। কুলদীপের বলে এলবিডব্লু হয়ে থামতে হয় তাঁকে। ভারত সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে। খোলা চোখে বল উইকেট মিস করে যাবে বা আম্পায়ার্স কল হবে মনে হলেও উইকেটে হিট করে, ইংলিশদের বিস্ময়ের মাঝে ভারত মাতে উল্লাসে। সেশনের শেষ বলে বেয়ারস্টো হন এলবিডব্লু, এবার বুমরার বলে তাঁকে আউটই দিয়েছিলেন আম্পায়ার। বেয়ারস্টো রিভিউ নেন, কিন্তু লেগ স্টাম্পে হয় আম্পায়ার্স কল।

ক্রলির উইকেট ভারত পায় রিভিউ নিয়ে

৪ উইকেট হাতে রেখে ইংল্যান্ডের তখন দরকার ছিল ২০৫ রান, নিশ্চিতভাবেই যা করতে প্রয়োজন ছিল ‘স্টোকস-মিরাকল’। সেই স্টোকস বিরতির পর হন রানআউট। বেন ফোকসের সঙ্গে জুটিতে সতর্ক ছিলেন, কিন্তু মুহূর্তের ভুলের খেসারত দিতে হয় ইংল্যান্ড অধিনায়ককে। শর্ট মিডউইকেট থেকে শ্রেয়াস আইয়ারের থ্রো সরাসরি ভাঙে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প।

ভারতকে এরপর অপেক্ষায় রাখে ফোকস ও হার্টলির অষ্টম উইকেট জুটি। শেষ পর্যন্ত ডাক পড়ে বুমরার, তাঁর স্লোয়ারে ফোকস ফিরতি ক্যাচ দিলে ভাঙে তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ইনিংস-সর্বোচ্চ ৫৫ রানের জুটি। মাঝে অশ্বিন ৫০০তম উইকেট পেয়েই গিয়েছিলেন প্রায়, রিভিউ নিয়ে বাঁচেন হার্টলি।

অ্যান্ডারসনের আগে এবার শোয়েব বশিরকে পাঠায় ইংল্যান্ড, তিনি পরিণত হন ম্যাচে মুকেশ কুমারের প্রথম উইকেটে। বুমরার বলে বোল্ড হয়ে এরপর হার্টলির প্রতিরোধ ভাঙে বর্ধিত সেশনে। ৫০০তম উইকেটের অপেক্ষা বাড়ে অশ্বিনের, তবে এমন জয়ের পর তাতে কোনোই আপত্তি করার কথা নয় তাঁর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ৩৯৬ ও ৭৮.৩ ওভারে ২৫৫ (গিল ১০৪, শ্রেয়াস ২৯, অশ্বিন ২৯; হার্টলি ৪/৭৭, অ্যান্ডারসন ২/২৯, রেহান ৩/৮৮)।

ইংল্যান্ড: ২৫৩ ও ২৯২ (ক্রলি ৭৩, ডাকেট ২৮, রেহান ২৩, পোপ ২৩, রুট ১৬, বেয়ারস্টো ২৬, স্টোকস ১১, ফোকস ৩৬, হার্টলি ৩৬, বশির ০, অ্যান্ডারসন ৫*; বুমরা ৩/৪৬, মুকেশ ১/২৬, কুলদীপ ১/৬০, অশ্বিন ৩/৭২, অক্ষর ১/৭৫)

ফল: ভারত ১০৬ রানে জয়ী