ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়া বিশ্বকাপ-অবিশ্বাস্যই লাগছে ব্যাপারটা! ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুবারের চ্যাম্পিয়নরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপেই থাকছে না। গতকাল স্কটল্যান্ডের কাছে হারায় কঠিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি ক্যারিবিয়ানরা।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের কাছে হারার পর বাছাইপর্ব পেরোতে সুপার সিক্স পর্বের তিনটি ম্যাচই ক্যারিবীয়দের জিততে হতো। এরপর তাকিয়ে থাকতে হতো অন্য দলগুলোর দিকেও। কাল হারারেতে সুপার সিক্স পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন বিদায় হয়তো প্রত্যাশিত ছিল না। তবে একেবারে বিনা মেঘে বজ্রপাতও ছিল না। কারণ, এ দলটা ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর কোনো আইসিসি ইভেন্টে ভালো কিছু করতে পারেনি। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই চক্রেই ৯ দলের মধ্যে তাদের অবস্থান ছিল ৮ নম্বরে। এর আগের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১০ দলের মধ্যে তাদের অবস্থান ছিল ৯ নম্বরে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও তাদের অবস্থা এমনই। বড় বড় তারকাদের নিয়েও ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে মাত্র ১ ম্যাচ জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা। আর সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো মূল পর্বটা খেলতেই পারেনি। এর আগে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও খেলতে পারেনি তারা।
এরপরও ড্যারেন স্যামি দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেকের। সেই প্রত্যাশা কেন মেটাতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তুলনামূলক ছোট প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে এভাবে বিদায় নিল, অনুসন্ধান করা যাক সেই কারণ-
বাজে ফিল্ডিং
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাচ ছেড়েছে ১০টি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যক্তিগত ১ ও ৩ রানে সিকান্দার রাজার ক্যাচ না ছাড়লে ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত। দুবার জীবন পেয়ে ৫৮ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে খেলেছিলেন রাজা। এমনকি সেই ম্যাচে ফিফটি করা রায়ান বার্লের ক্যাচও ছেড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল ব্রেন্ডন ম্যাকমুলেনকে জীবন দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা। ব্যক্তিগত ২১ রানে আকিল হোসেনের বলে কাইল মায়ার্সকে ক্যাচ দিয়েছিলেন ম্যাকমুলেন। তবে মায়ার্স সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
অসুস্থতা ও চোট
চোট আর অসুস্থতার কারণে বাছাইপর্বে সেরা দলটা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শামারা ব্রুকস অসুস্থতার কারণে বাছাইপর্বের প্রথম তিন ম্যাচে ছিলেন না। যে কারণে প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে ব্যাট করতে হয়েছে জনসন চার্লসকে। চার্লস ব্যর্থ হয়েছেন। দলে ফিরে অবশ্য ব্যর্থ হয়েছেন ব্রুকসও। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা নিয়েছেন ২০ উইকেট, স্কটল্যান্ডের লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রেভিসও আছেন দুর্দান্ত ছন্দে। শেষ তিন ম্যাচে এই স্পিনারের উইকেট ১১টি। শাই হোপের দল চোটের কারণে তাদের একমাত্র লেগ স্পিনার ইয়ানিক ক্যারিয়াকে দলেই পায়নি।
সেই সুপার ওভার
১৪ বলে ২৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে নিজেদের ম্যাচটি সুপার ওভার নিয়ে গিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের লোগান ফন ভিক। তাঁর রানের বেশির ভাগই এসেছে হারারের তাকাসিঙ্গা ক্রিকেট মাঠের লেগ সাইডের ছোট বাউন্ডারি থেকে। কেন সেই ম্যাচে সুপার ওভার করার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্যাভিলিয়ন প্রান্তই বেছে নিল সেটা ব্যাখা করা কঠিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন সিদ্ধান্তের সুবিধা ফন ভিক সুপার ওভারেও নিয়েছেন। জেসন হোল্ডারের সেই ওভারকেই কাঠগড়ায় তুলতে হবে। প্রথম দুই বলে ফুলটস দেওয়া হোল্ডার পুরো ওভারেই লাইন লেংথ ঠিক রাখতে পারেননি। ওভারের প্রতিটি বলেই বাউন্ডারি হজম করেছেন, দিয়েছেন ৩০ রান।
রোভম্যান পাওয়ালের ছন্দহীনতা
সহ-অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলের কাছে প্রত্যাশাটা বেশি ছিল ক্যারিবিয়ানেদের। গ্রুপপর্বের প্রথম তিন ম্যাচ থেকে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছিল যথাক্রমে ০, ২৯, ১। সহ-অধিনায়ক হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল পাওয়েলকে।
আদর্শ প্রস্তুতির অভাব
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রস্তুতি হিসেবে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দলে থাকা ৬ জনই সেই সিরিজে ছিলেন না। আইপিএলের পর হোল্ডার, পাওয়েল, আকিল, আলজারি জোসেফদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ কোচ হিসেবে স্যামি যোগ দেওয়ার পর তাদের সঙ্গে স্যামির প্রথম সাক্ষাৎ হয় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের আগে। অর্থাৎ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচ স্যামির রসায়নটা ঠিক জমে ওঠার সময়ই ছিল না।