দুবাইয়ে অবস্থিত আইসিসির সদর দপ্তর
দুবাইয়ে অবস্থিত আইসিসির সদর দপ্তর

আইসিসিতে বৈষম্য বাড়বে, বাধার মুখে পড়বে ক্রিকেটের সম্প্রসারণ

আগামী চার বছরের (২০২৪-২০২৭) জন্য আইসিসির প্রস্তাবিত রাজস্ব বণ্টন কাঠামো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সংস্থাটির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর বোর্ড। এই কাঠামো অনুযায়ী আয়ের সিংহভাগ পাবে ভারতসহ ক্রিকেটের পরাশক্তি দেশগুলো। এতে বৈশ্বিকভাবে ক্রিকেটের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে আইসিসির সহযোগী সদস্যগুলো। আগামী জুলাইয়ে ডারবানে আইসিসির বোর্ড মিটিংয়ে ভোটাভুটিতে প্রস্তাবিত এই রাজস্ব বণ্টন কাঠামো পাস করলে, তা কার্যকর করা হবে।

ক্রিকইনফো এর আগে জানিয়েছিল, আগামী চার বছরে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ পেতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী ভারত যা পাবে, তার ধারেকাছেও নেই অন্য কেউ। আইসিসির ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশ প্রস্তাবিত এই চক্রে সংস্থাটির মোট আয়ের ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশ পাবে। বাকি অংশ ভাগ করা হবে ৯৪টি সহযোগী দেশের মধ্যে।

আইসিসির মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খান গত সোমবার দাবি করেন, প্রস্তাবিত এই মডেল অনুযায়ী সব সদস্য দেশ আগের চেয়ে বেশি আয়ের ভাগ পাবে। যদিও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আগেই এই কাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং ক্রিকেটে তুলনামূলক কম উন্নতি করা দেশগুলোর বোর্ডগুলোয় এ নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠছে।

আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে পাকিস্তান সফরে গেছেন

টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের ৪৯তম বতসোয়ানা ক্রিকেট বোর্ডের সহসভাপতি সুমোদ দামোদার আইসিসির প্রধান নির্বাহী কমিটিতে সহযোগী দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। সহযোগী দেশগুলোর যে তিনজন এই কমিটিতে আছেন, দামোদার তাঁদের একজন। তাঁর দাবি, আইসিসি আয়ের ভাগ বণ্টন করার যে মডেল প্রস্তাব করেছে, তাতে সহযোগী দেশগুলোর প্রয়োজন মিটবে না।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দামোদার বলেছেন, ‘যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা কার্যকর হলে সহযোগী সদস্যদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি হতাশ হব। সহযোগী দেশগুলোর জন্য এটি (টাকার অঙ্ক) কেন অপর্যাপ্ত, তার অনেক বাস্তবসম্মত কারণ আছে।’

দামোদার জানিয়েছেন, যেসব সহযোগী সদস্য দেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়েছে, তাদের হাই-পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম ঠিকমতো চালাতে আরও টাকার প্রয়োজন। ছেলেদের ক্রিকেটে নেপাল এবং মেয়েদের ক্রিকেটে থাইল্যান্ডের উঠে আসার উদাহরণ দিয়ে দামোদার দাবি করেন, প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেলে আরও বেশিসংখ্যক দেশ ক্রিকেটে উঠে আসবে।

টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের ৪৩তম দেশ ভানুয়াতু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী টিম কাটলারের দাবি, প্রস্তাবিত এই মডেল বৈষম্য তৈরি করবে। ক্রিকেটের পরাশক্তি ও ছোট দলগুলোর মধ্যে বৈষম্যটা তৈরি হবে বলে মনে করেন কাটলার, ‘নতুন এই মডেলে বড় দলগুলোর সুবিধা বেশি। তাই প্রস্তাবিত এই মডেল কার্যকর হলে বৈষম্য আরও বাড়বে, খেলাটির ভবিষ্যৎও আরও ঝুঁকিতে পড়বে।’

আইসিসির সাবেক সভাপতি এহসান মানি

আইসিসির বোর্ডে মোট ১৭ ভোটের মধ্যে ১২টি ভোট পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর। সহযোগী দেশগুলোর এই দুশ্চিন্তার বিষয়ে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সংস্থাটির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে আইসিসির সাবেক সভাপতি এহসান মানি ভারতের ওপর অতিনির্ভরতাকে দুষেছেন, ‘আয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকলেও ভারতের ওপর অতিনির্ভরতা বৈশ্বিকভাবে ক্রিকেটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা চীনের মতো দেশ ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে আইসিসির আয়ে অনেক বেশি অবদান রাখবে। তাতে ক্রিকেটও সমৃদ্ধ হবে বৈশ্বিকভাবে।’

ভারতকে আইসিসির আয়ের সিংহভাগ দিয়ে দেওয়ার ‘কোনো যুক্তি নেই’ বলেও মনে করেন মানি।