পেস বোলার মানেই লম্বা রানআপ। শরীরী ভাষা হবে আক্রমণাত্মক। গতির ঝড় তুলে কাঁপন তুলবেন প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়ায়। উইকেট পেলে করবেন বুনো উদ্যাপন। হাসান মাহমুদকে দেখে সে রকম কিছুই মনে হবে না। বাংলাদেশ দলের তরুণ এই পেসারের মসৃণ রানআপ কিংবা বোলিং অ্যাকশনে সেই প্রথাগত পেস বোলারসুলভ কিছুই খুঁজে পাবেন না। একটা সময় ছিল, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের উইকেট নিলেও কোনো উদ্যাপনই করতেন না!
এ নিয়ে তিনি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ব্যাটসম্যান মন খারাপ করবে, সে জন্যই নাকি উইকেট পেয়েও উদ্যাপন করেন না তিনি। ২০২৩ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে কথাটা হাসতে হাসতে বললেও পরে সেটাই যেন হাসানের গলার কাঁটা হয়ে যায়। পেস বোলার হবেন আক্রমণাত্মক মানসিকতার, খুনে মেজাজের। অথচ হাসানের কিনা ব্যাটসম্যানের জন্য মন কাঁদে!
পাকিস্তান সফরে অবশ্য অন্যরকম হাসানকে দেখা গেছে। ২ টেস্টের ৪ ইনিংসে ৮ উইকেট নেওয়া হাসানকে দেখা গেছে উইকেট শিকারের পর উদ্যাপন করতে। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আউট করার পর তো তাঁকে ‘সেন্ড অফ’ দিয়েছিলেন হাসান! ২৪ বছর বয়সী এই পেসারের হঠাৎ বদলে একটা কারণও আছে।
হাসানের মুখেই শুনুন সেটি, ‘টেস্ট ক্রিকেটে একটা উইকেটের জন্য অনেক শ্রম দিতে হয়, অনেক কষ্ট করতে হয়। একটা সেটআপের বিষয় থাকে। অনেক সময় ব্যাটসম্যানের জন্য ৫-৬ ওভারের প্ল্যান থাকে। কিছু বল ভেতরে করে একটা বাইরে দেওয়ার বিষয় থাকে। ওইভাবে সেট করে একজনকে যখন আউট করবেন, সেটার অন্যরকম মজা থাকে। তখন উদ্যাপনটা চলেই আসে।’
টেস্ট ক্রিকেটের আরেকটি ইতিবাচকতা খুঁজে পেয়েছেন হাসান। দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেকের আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ৪০টি ম্যাচ খেলে ৪৮ উইকেট নেওয়া হাসান মনে করেন, লাল বলের ক্রিকেটই পেসারের সামর্থ্যের সবটুকু দেখানোর আদর্শ মঞ্চ, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে দক্ষতার সবটুকু দেখানো হয়নি। সেখানে আসলে সম্ভবও না। একজন ফাস্ট বোলারের কাছে কী কী থাকতে পারে, সেটার পুরোটা একমাত্র লাল বলেই দেখানো সম্ভব। টেস্ট ক্রিকেটে সেটাই হচ্ছে। যে কয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি, সেখানে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে পারফর্ম করার চেষ্টা করেছি।’
হাসানের সেরা পারফরম্যান্সের স্মৃতিটা তো এখনো তরতাজা। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন। আসন্ন ভারত সফরেও হাসানের সেই সিম ও সুইংয়ের ঝলক দেখতে চাইবেন বাংলাদেশ দলের সমর্থকেরা।