এই বিশ্বকাপে আফগান–রূপকথার দ্বিতীয় অধ্যায় রচিত হলো কাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেটা আবার তাদের নতুন ইতিহাস। ভারত বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় জয়টা পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাদের প্রথম জয়ও। সব মিলিয়ে রাতটা কখনোই ভুলবার নয় আফগানদের জন্য। চেন্নাইয়ে কাল ম্যাচ শেষে আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি জয়ের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বললেন তেমনটাই। পাকিস্তানকে হারানোটাকে তাঁর মনে হচ্ছিল ‘দারুণ স্বাদের’।
আফগানদের এমন জয়ের রাত পাকিস্তানকে ‘উপহার’ দিয়েছে চরম হতাশা। ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবরের সংবাদ সম্মেলনে বারবারই এসেছে হতাশার প্রসঙ্গ। বাবর অবশ্য এই হতাশা ভুলে পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকদের শুনিয়েছেন ঘুরে দাঁড়ানোর গান। জানিয়েছেন পরের ম্যাচগুলোয় জয়ের প্রত্যয়ের কথা। ম্যাচ শেষে হাশমতউল্লাহ যখন নিজের বোলারদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মেতেছেন, বাবরকে ম্লান মুখে বলতে হয়েছে তাঁর বোলারদের ব্যর্থতার কথা।
হাশমতউল্লাহ তাঁর কথা শুরুই করলেন এভাবে, ‘এই জয়ের স্বাদ দারুণ।’ এরপর বললেন ধীরে ধীরে নিজেদের ভালো একটা দল হয়ে ওঠার কথা, ‘আজ (গতকাল) আমরা যেভাবে রান তাড়া করেছি, সেটা ছিল দারুণ পেশাদারি। আমরা দুই বছর ধরে মানসম্পন্ন ক্রিকেট খেলে আসছি।’ সামনে লক্ষ্যটা যে আরও বড় কিছু পাওয়ার, সেটাও জানিয়ে গেলেন তিনি, ‘ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব এবং দেশের জন্য আরও অনেক কিছু করব।’
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে পাকিস্তানকে ২৮২ রানে আটকে রাখে আফগানিস্তান। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, আবদুল্লাহ শফিক, ইমাম–উল–হক সমৃদ্ধ একটি ব্যাটিং লাইনআপকে ৩০০ রানের নিচে আটকে রাখতে পারায় বোলারদের প্রশংসা করলেন হাশমতউল্লাহ, ‘আজ (গতকাল) আমাদের বোলিং খুব ভালো ছিল। বিশেষ করে স্পিন বোলিং। আমরা নুরকে (নুর আহমেদ) সুযোগ দিয়েছি এবং সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। ম্যাচটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের হাতে ছিল।’
বাবরের সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিই ছিল এ রকম—৫ ম্যাচের ৩টিতেই হারা পাকিস্তানের বিশ্বকাপ–আশার সমাধি এখানেই হয়ে গেল কি না! বাবর যেন প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করলেন। তিনি দিলেন এ ম্যাচে নিজেদের ব্যর্থতার ব্যাখ্যা, ‘আমরা বোলিংটা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী করতে পারিনি। আপনাকে ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং দুটোই করতে হবে। স্পিনারদের যেভাবে বোলিং করা উচিত ছিল, সেভাবে করতে পারেনি।’
বাবর যতই এড়িয়ে যেতে চান না কেন, সংবাদ সম্মেলনে পরে তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হয়—পাকিস্তানের আর কি কোনো আশা আছে ঘুরে দাঁড়ানোর? এবার বাবর বললেন, ‘শেষ পর্যন্ত কী হবে, আপনি জানেন না। কেউ জানে না। এটা ক্রিকেট, যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আমরা শেষ পর্যন্ত নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলার চেষ্টা করব। আরও অনেক ম্যাচ বাকি আছে। আমরা পরের সব কটি ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব। একই সঙ্গে চেষ্টা করব নিজেদের ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে।’
ভুলগুলো না হয় কাটিয়ে উঠলেন। কিন্তু পাকিস্তানের যে বোলিং আক্রমণকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশ্বকাপে সেটা তো এখন পর্যন্ত অকার্যকরই বলা চলে। শাহিন শাহ আফ্রদি, হারিস রউফরা কি জ্বলে উঠতে পারবেন, নাকি নাসিম শাহর অভাবটা কোনোভাবেই পূরণ হবে না—এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবর বলেছেন, ‘নাসিমের অভাবটা আমরা খুব অনুভব করছি। তারপরও আমাদের বোলিং লাইনআপ অন্যতম সেরা।’
নিজেদের হতাশা আর ব্যর্থতার কথা বললেও আফগানিস্তান দলকে তাদের প্রাপ্য প্রশংসাটা দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক, ‘যেভাবে তারা খেলেছে, এর জন্য অভিনন্দন। তারা অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে।’