ইফতিখার আহমেদের উর্দুতে একটা পেশোয়ারি টানা আছে। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় জন্ম বলেই হয়তো। ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলতে আসা এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার আজ উর্দুতেই তাঁর দলের বাংলাদেশি সতীর্থদের প্রশংসা করছিলেন। টিম হোটেলের লবিতে বসা ইফতিখারের পেছন দিয়ে তখন হেঁটে যাচ্ছিলেন বরিশালেরই আরেক ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ।
ইফতিখারকে দেখে মিরাজ পাশে এসে দাঁড়ান। মিরাজকে দেখতেই ইফতিখার হাসি দিয়ে বলেন, ‘মিরাজ আমাদের সেরা খেলোয়াড়। যদি বলি আমাদের মূল খেলোয়াড়, তাতেও ভুল হবে না। তাকে দিয়ে সহজেই তিনটা কাজ হয়। বোলিং, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন সে।’ শুনে মিরাজেরও মুখে হাসি, ‘ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। অনেক অভিজ্ঞতা হচ্ছে।’
বরিশালের ক্রিকেটাররা ইফতিখারকে ডাকেন ‘চাচা’ নামে। শুধু বরিশাল নয়, পাকিস্তান জাতীয় দলেও ইফতিখারের নাম ‘চাচা’। ৩২ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের চাচা নামের পেছনে মজার একটা গল্প আছে।
ইফতিখারই বললেন গল্পটা, ‘আমাদের জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ ছিল। (ব্রেন্ডন) টেলর খেলছিল। আমি বোলিং করছিলাম। অধিনায়ক বাবর আজমকে বলছিলাম, ‘‘আমার বল স্পিন করছে। মিড উইকেট সামনে এনে স্কয়ার লেগ বাইরে পাঠাও। কারণ টেলর খেলবে মিড উইকেটে কিন্তু স্পিনের কারণে বল যাবে স্কয়ার লেগে।’’ পরের বলটিতে টেলর পা সরিয়ে মারলে বল উড়ে যায় স্কয়ার লেগ ফিল্ডারের হাতে। তখন বাবর বলতে শুরু করল ‘‘ওয়েল ডান! চাচা-এ-ক্রিকেট।’’ মানে ও (বাবর) বলতে চেয়েছে যে আপনার এত বুদ্ধি, তাই আপনি চাচা-এ-ক্রিকেট।’
টেলর উইকেট উদ্যাপনের সময় বাবরের কথাটা স্টাম্প মাইকে ধরা পড়ে। সেখান থেকেই পাকিস্তান সমর্থকদেরও ‘চাচা’ বনে যান ইফতিখার, ‘ম্যাচ শেষে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সবাই আমাকে চাচা-চাচা বলে মেসেজ পাঠাচ্ছে। এটিই আসলে গল্প। মানুষ প্রায়ই বলে। আমিও এখন উপভোগ করছি। ব্র্যান্ড হয় না? মানুষ কোটি টাকা ঢালে তাতে। আমিও অমন একটা ব্র্যান্ড হয়ে গেছি (হাসি)।’
ইফতিখারকে এখন চাচা ডাকেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও, ‘দলের ওরা তো বলেই ফেলে। সাকিবও চাচা বলে। সবাই মিলে গল্প করি। আড্ডা চলতে থাকে। দলের পরিবেশ ভালো থাকে। দলের পরিবেশ ভালো থাকলে পারফরম্যান্সও ভালো হবে।’ দলের আবহটা ঠিক রাখার বড় কৃতিত্বটা অধিনায়ক সাকিবকেই দিয়েছেন ইফতিখার, ‘আমি প্রথমবার বিপিএল খেলছি, খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশের যে তারকারা এখানে খেলছে, তাদের সঙ্গে খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছি। সাকিবের কথা বিশেষ করে বলতেই হয়। সে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাঁর নেতৃত্বগুণ খুবই ভালো।’
ক্রিকেটার সাকিবের কথাটা তো আলাদা করে বলতেই হয়। ইফতিখার তাই করলেন, ‘সাকিব নিশ্চিতভাবেই সেরা ক্রিকেটারদের একজন। সে যেভাবে খেলছে তাতে সেরাদের সেরা হওয়ার দৌড়েই আছে। ওই উচ্চতায় সে পৌঁছে যাবে। আমার প্রার্থনা তো থাকবেই। আপনারাও দোয়া করবেন যেন সাকিব নিজের দেশের হয়ে আরও বেশি সফলতা এনে দিতে পারে। সঙ্গে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যেখানেই খেলে সেখানেও যেন সফল হয়।’
ইফতিখারও এবারের বিপিএলে বরিশাল দলের সাফল্যেরও অন্যতম নায়ক। এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে ব্যাট করেছেন, দুটি বিস্ফোরক ইনিংস খেলে বরিশালকে জিতিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে ইফতিখার চার নম্বরে ব্যাট করতে পছন্দ করেন, সেটারও কারণ বললেন, ‘আমি পাকিস্তানের হয়ে সব নম্বরে ব্যাট করেছি। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও তা–ই। কিন্তু আমি চাই ৪ নম্বরে খেলতে। তাহলে ইনিংসটা লম্বা করার সুযোগ থাকে। আমি চাই অনেক রান করতে, বড় ইনিংস। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে চাই, ম্যাচ ফিনিশ করতে চাই।’
ইফতিখারের সঙ্গে কথার ফাঁকে পাকিস্তানের ফ্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলের প্রসঙ্গও এল। গত কয়েক বছরে পিএসএল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আইপিএলের পর পিএসএলই খেলার মান ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছে। বিপিএল ও পিএসএলের তুলনার প্রশ্নে ইফতিখারের উত্তর ছিল এমন, ‘পিএসএল বড় ব্র্যান্ড, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিপিএলও বড় ব্র্যান্ড। কিন্তু এখানে ডিআরএস সিস্টেমকে আরও ভালো করা উচিত। তাহলে কোনো সন্দেহের সুযোগ থাকে না।’