অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৬৭/৯
পাকিস্তান: ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬২ রানে জয়ী
কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল পাকিস্তান, এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই রেকর্ডটি ভাঙতে হতো। ডেভিড ওয়ার্নারের ১২৪ বলে ১৬৩, মিচেল মার্শের ১০৮ বলে ১২১ এবং দুজনের রেকর্ড ২৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৩৬৭ রান। বেঙ্গালুরুর ছোট মাঠে বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে থাকা পাকিস্তান অনেকটা সময় এগিয়েছে নিজেদের ধাঁচেই—উইকেট হাতে রেখে রান রেটটা স্বাস্থ্যকর রাখা। কিন্তু সেটি কাজে দেয়নি, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারিয়ে বসেছে দলটি, স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের সবাই ভালো শুরু পেলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ। রেকর্ড তাই আর নতুন করে গড়া হয়নি পাকিস্তানের।
শেষ পর্যন্ত ৬২ রানের বড় জয়ই পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, প্রথম দুটি ম্যাচ হারার পর পরের দুটি জিতে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ঘুরে দাঁড়াল ভালোভাবেই। অন্যদিকে পাকিস্তান হারল টানা দ্বিতীয় ম্যাচ।
অস্ট্রেলিয়ার বড় স্কোরের পেছনে অবদান ছিল পাকিস্তানের বাজে ফিল্ডিংয়ের অবদান। সে ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেও। পাকিস্তানের দুই ওপেনারই জীবন পান, ২৭ রানে আবদুল্লাহ শফিকের পর ৪৮ রানে বাঁচেন ইমাম-উল-হক। ১৭তম ওভারে ১০০ পেরোয় পাকিস্তান। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটে শত রানের দেখা পায় দলটি। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানই ১০০ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইক রেটে অর্ধ শতক পান, বিশ্বকাপেও এই প্রথম একই ম্যাচে দুই দলের চার ওপেনারই ৫০ পেরোলেন। শফিকের পর ইমাম— দুজনই ক্যাচ দেন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আসা মার্কাস স্টয়নিসের বলে।
বাবর ইতিবাচক শুরু করেন, কিন্তু এ বিশ্বকাপে বড় ইনিংসের দেখা পাওয়ার অপেক্ষা পাকিস্তান অধিনায়কের বেড়েছে আরেকটু। অ্যাডাম জাম্পার বলে প্যাট কামিন্সের দুর্দান্ত এক ক্যাচে থামেন তিনি। ক্যাচের মূল্য কতটা, ব্যাটিংয়েও আরেকবার বুঝেছেন বাবর। তিনি ফিরলেও মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিলের জুটি পাকিস্তানকে আশা দেখাচ্ছিল। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রায় একই সময়েই ২০০ পেরিয়ে যায় তারা। কিন্তু শাকিলের আউটে আবার ছন্দপতন। পাকিস্তান যে সময়ে চেয়েছিল, ইফতিখার আহমেদকে তার একটু আগেই নামতে হয়। অবশ্য কামিন্সের পর স্টয়নিসকে তিন ছক্কা মেরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ইফতিখার।
এরপর আবার দৃশ্যপটে আসেন জাম্পা। চোটের সমস্যায় থাকা এ লেগ স্পিনারই শেষ করে দেন পাকিস্তানের শেষ আশা। রিজওয়ান, ইফতিখারের পর মোহাম্মদ নেওয়াজের উইকেটও তাঁর। ইফতিখারের এলবিডব্লিউ রিভিউ নিয়ে পায় অস্ট্রেলিয়া। তাঁর উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ে রিজওয়ানের, শাদাব খান নেই বলে একজন ব্যাটসম্যান কম ছিল পাকিস্তানের। জাম্পার বলে রিজওয়ান এলবিডব্লিউ হওয়াতেই তাই কার্যত শেষ সব হিসাব-নিকাশ। রিজওয়ান রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি, আম্পায়ার্স কলে আউট হয়েছেন। ৪৫.৩ ওভারের মধ্যে অলআউট হয়ে যাওয়ার আগে ৩০০ পেরোয় পাকিস্তান, কিন্তু সেটি থেকেছে সান্ত্বনা হয়েই।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে অবশ্য ৪০০ বা এর বেশি রানও হাতছানি দিচ্ছিল এক সময়। সেটি হয়নি শেষ দিকে শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফের দারুণ বোলিংয়ে। আফ্রিদি নেন ৫ উইকেট, প্রথম ৪ ওভারে ৫৯ রান দেওয়া রউফ শেষ ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন ৩টি। শেষ ৭ ওভারে ৩৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহজ ক্যাচ না ফেললে অস্ট্রেলিয়াকে আরও আগেই থামাতে পারত পাকিস্তান। ১০ রানে ওয়ার্নারের সহজতম ক্যাচ ফেলেন উসামা মির, ১০৫ রানে আব্দুল্লাহ শফিক। ওয়ার্নারের প্রথম ক্যাচটি পড়ার পরই এলোমেলো হয়ে পড়ে পাকিস্তান, এরপর লম্বা একটা সময় কিছুই পক্ষে যায়নি তাদের। এলোমেলো লাইন-লেংথে বোলিং করা পাকিস্তানকে মাঠে দেখে মনে হচ্ছিল দিশাহারা। মাঝে ইফতিখার আহমেদ ও মোহাম্মদ নেওয়াজের স্পিন-জুটিতে রানের গতি একটু কমে এলেও উইকেটের দেখা দ্রুতই পায়নি তারা।
৩১তম ওভারে নেওয়াজের পরপর দুই বলে শতক পূর্ণ করেন ওয়ার্নার ও মার্শ। ৮৫ বলে ক্যারিয়ারের ২১ ও বিশ্বকাপে পঞ্চম শতকটি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার, পাকিস্তানের বিপক্ষে যেটি টানা চতুর্থ তাঁর। ৩২তম জন্মদিনে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক পেতে মার্শের লাগে ১০০ বল। বিশ্বকাপে এ নিয়ে মাত্র চতুর্থবার একই ইনিংসে দুই ওপেনার পেলেন শতক, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে যেটি প্রথমবার।
উইকেটের খোঁজে পরে আফ্রিদিকে বোলিংয়ে ফেরান বাবর, ৩৪তম ওভারের প্রথম ২ বলে ছক্কা মেরে তাঁকে স্বাগত জানান মার্শ। কিন্তু শেষ ২ বলে মার্শের পর ম্যাক্সওয়েলকে ফেরান আফ্রিদি। পাকিস্তানের প্রথম উইকেট আসে মিরের নেওয়া ক্যাচেই। পরের ওভারে স্মিথের উইকেট পেতে পারতেন মির, এবার স্লিপে ক্যাচ ফেলেন বাবর। ওয়ার্নার থামেন রউফের বলে, জশ ইংলিস ও মারনাস লাবুশেনও তাই। স্টয়নিসের পর পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের শেষ প্রান্তে আঘাত করেন আফ্রিদি, শেষ ওভারের প্রথম ২ বলে উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট পান।
এর আগে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৪টি ছক্কা মেরেছিল অস্ট্রেলিয়া, আজ ওয়ার্নার ও মার্শ মিলেই মারেন ১৮টি। অবশ্য ওই দুজনের পর অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে ছক্কা ছিল মাত্র একটি। ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার দুই ভাগের চিত্রও যেন ফুটে ওঠে তাতে। তবে পাকিস্তান ইনিংসে মারতে পেরেছে মাত্র ৬টি ছক্কা, দুই দলের পার্থক্য বুঝতে সহায়ক সেটিও।