১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে বিশ্বকাপ; যাদের কাছে ক্রিকেট বড় এক আবেগের নাম, একটা খেলার চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রত্যাশিত আমেজ দেখা যাচ্ছে না।
ভারতের ম্যাচ ব্যতীত অন্য ম্যাচগুলোতে গ্যালারি খাঁ খাঁ করছে। ম্যাচগুলোও হচ্ছে একদম একপেশে। চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের ২ রানে ৩ উইকেট হারানোর সময়টুকু বাদ দিলে এখন পর্যন্ত হওয়া ১২ ম্যাচের কোনোটিই জমেনি।
এবারের বিশ্বকাপে উইকেট শিকারের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে। ভারতের পিচগুলোকে স্পিনস্বর্গ বলা হয়ে থাকলেও বাস্তবতা পুরোপুরি আলাদা।
দিল্লিতে আজ ইংল্যান্ড–আফগানিস্তান ম্যাচ শুরুর আগপর্যন্ত বোলাররা ১৬৯ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে ১০৬টিই নিয়েছেন পেসাররা; যা বোলারদের নেওয়া মোট উইকেটের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ, শতাংশের হারে ৬২.৭২।
দিনের ম্যাচগুলোতে ফাস্ট বোলাররা পুরোনো বলে যেমন রিভার্স সুইং পাচ্ছেন আবার ফ্লাড লাইটের আলোয় পাচ্ছেন মুভমেন্ট। সব মিলিয়ে গতি দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বেশ ভালোই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।
পেসারদের মধ্যে কজন গতির ঝড় তুলতেও শুরু করেছেন। সবচেয়ে দ্রুতগতির বল করাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন মার্ক উড। ইংল্যান্ডের ৩৩ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার ৫ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে একটি বল করেছেন ১৫৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে। এখন পর্যন্ত এটাই এবারের বিশ্বকাপে দ্রুততম ডেলিভারি।
দ্বিতীয় দ্রুততম বলটি করেছেন পাকিস্তানের হারিস রউফ। তাঁর বলটির গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। উড ও রউফই শুধু ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পেরেছেন।
তবে গতিতে শীর্ষ পাঁচে যাঁদের আশা করা হয়েছিল, সেই শাহিন আফ্রিদি ও যশপ্রীত বুমরা নেই। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৪৪ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়ে আফ্রিদি আছেন দশে, তাঁর চেয়ে কিঞ্চিৎ জোরে (১৪৪.৪ কিমি/ঘণ্টা) বল করে বুমরা আছেন নয়ে।
আফ্রিদির গতি কমে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিস, রমিজ রাজা, শোয়েব মালিকরা। সেই দুশ্চিন্তাই সত্যি হতে চলেছে। বরাবরই গতি আর সুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলা আফ্রিদি বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচ খেলে ফেললেও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় শীর্ষ ১৫ তেও নেই!
বুমরার গতি কিছুটা কমে যাওয়ার কারণ অবশ্য ভিন্ন। পিঠে অস্ত্রোপচার করিয়ে ১১ মাস পর গত আগস্টে ভারতীয় দলে ফিরছেন এই তারকা পেসার। আরেক দফা চোট এড়াতে গতির চেয়ে বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছেন তিনি।
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলিংয়ে উড ও রউফের পর আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জেরাল্ড কোয়েৎজি (১৪৯ কিমি/ঘণ্টা), নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন (১৪৮ কিমি/ঘণ্টা) ও অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক (১৪৭ কিমি/ঘণ্টা)।
তাঁদের মধ্যে ফার্গুসন ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছিলেন গত পরশু চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের ৮ উইকেটের অনায়াস জয়ের দিনে ফার্গুসন আউট করেছিলেন তানজিদ হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও তাঁর হাতে উঠেছিল।
তবে সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে দ্রুততম বোলিংয়ের তালিকার ধারেকাছেও নেই উড-হারিসরা। এ তালিকায় সবার ওপরে কে, সেটা নিশ্চয় জানেন! শোয়েব আখতার ছাড়া আর কে? ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১.৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল ছোড়া শোয়েবের ওই ডেলিভারি শুধু বিশ্বকাপ কেন, ক্রিকেট ইতিহাসেরই দ্রুততম।