গতকাল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পারফরম্যান্স দেখে মনে হতে পারে পুরো দলটিই খারাপ খেলেছে। আসলে শুরুতে লিটন দাসের অসম্ভব ধীরগতির ইনিংসের বোঝা পুরো দলকেই বইতে হয়েছে। এত ভালো উইকেটে ১৪০ রানের পুঁজি সামলানোর মতো অবস্থা বোলারদের না থাকারই কথা। অস্ট্রেলিয়াকে কোনো ঝুঁকিই নিতে হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে গতকাল হতাশাজনক একটা দিন গেছে।
আমরা যদি একই পথে হাঁটি, তাহলে মনে হয় না পারফরম্যান্সটা ভারতের বিপক্ষেও বদলাবে। একটা জিনিস দেখেছি, বিশ্বকাপে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের ফর্মে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বারবার সেটি ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ম্যাচগুলোতে এটি থেকে সরে আসা উচিত।
নাজমুল রান পেয়েছে অবশেষে, তার মধ্যে একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধের ব্যাপার ছিল। তানজিদ ধারাবাহিক না হলেও মোটের ওপর ভালো খেলেছে। তবে লিটনকে বাইরে রাখার সময় এসেছে। যদি তাকে খেলাতেই হয়, অন্য কোনো পজিশন দেওয়া হোক। যারা রান করছে, যারা লড়াইটা করতে চাচ্ছে, তাদের সামনে আনা উচিত। তাওহিদ হৃদয়কে আমার মনে হয় আরও বেশি বল খেলতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাহলে হয়তো লড়াই করার একটা পুঁজি পাওয়া যাবে।
যদি সব সময় একটা সংশয়ের মধ্যে থাকতে হয় যে শুরুতেই বুঝি একটি উইকেট গেল, এই বুঝি টপ অর্ডারের দুটি উইকেটই চলে গেল, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলে আসলে ড্রেসিংরুমে একধরনের আতঙ্ক ছড়ায়। বিপক্ষ দল যা নয় তার চেয়েও বেশি সক্ষম মনে হয়। লড়াই করার মতো স্কোরটিও তখন পাওয়া যায় না।
ভালো উইকেটে এমনিতেও বোলিং করা বেশ কঠিন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ দলে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান থাকলে। ভারতের বিপক্ষে ব্যাপারটি আরও কঠিন হবে। কারণ, তারা ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে বেশ দাপুটে একটা দল। ওদের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা যে খুব একটা রান পাচ্ছে তা নয়, এরপরও আফগানিস্তানকে তারা বড় ব্যবধানে হারিয়েছে। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা ফর্মে ফিরলে তো কথাই নেই।
দলে গতকাল যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সে ভাবনাটি কোথা থেকে এসেছে নিশ্চিত নই। মেহেদী হাসান যে জাকের আলীর মতোই ব্যাটিং করতে পারবে, সেটি ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। মেহেদী একজন বোলার, যে ব্যাটিংটা পারে বা ব্যাট চালাতে পারে। ব্যাটিংয়েই যেহেতু দুর্বলতা, সেহেতু বাড়তি একজন ব্যাটসম্যানই খেলানো উচিত।
ফর্মের বাইরে থাকা ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ভারতের মতো এমন ধারালো একটা বোলিং আক্রমণের সঙ্গে কতটা সুবিধা করতে পারে, সে সংশয়ও থেকে যায়। যেখানে যশপ্রীত বুমরার মতো একজন বোলারও আছে।
প্রথম পর্ব থেকে অর্জিত আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ দেখতে না পাওয়া ছিল হতাশাজনক। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে লড়াইটা তখনই করা যাবে, যখন শুরু থেকে ইতিবাচক খেলা যাবে। সেটি করার উপায় মনে হচ্ছে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনা। প্রথম ম্যাচ ওভাবে হেরে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে অনেকটাই। ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক কোনো ফল না এলে সেমিফাইনালের স্বপ্নটাও বাদ দিতে হবে।
লেখক: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক