দুই ভাই স্যাম কারেন (বাঁয়ে) ও টম কারেনের (ডানে) সঙ্গে বেন কারেন
দুই ভাই স্যাম কারেন (বাঁয়ে) ও টম কারেনের (ডানে) সঙ্গে বেন কারেন

দুই ভাই নয়, বাবার পথে হেঁটে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলবেন বেন কারেন

আপাদমস্তক ক্রিকেট পরিবার বলতে যা বোঝায়, কারেন পরিবার তেমনই। এই পরিবারের তিন প্রজন্ম ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবার তাঁদেরই একজন বেন কারেনের জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে যেতে পারে।

বেন কারেনের পরিচয় নতুন করে না দিলেও চলত। তবু আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ২৮ বছর বয়সী বেনের দাদা প্যাট্রিক কারেন ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার, বাবা কেভিন কারেন জিম্বাবুয়ের হয়ে ১১টি ওয়ানডে খেলেছেন, তাঁর দুই ভাই টম কারেন ও স্যাম কারেন খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ভাইদের মতো বেনও তাঁর ঘরোয়া ক্যারিয়ার ইংল্যান্ডে শুরু করেছিলেন। তবে জাতীয় দল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বাবার পথে হেঁটে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট (জেডসি) জানিয়েছে, তারা নতুন প্রতিভাকে সুযোগ দিয়ে দলকে পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার, সবই পূরণ করেছেন বেন কারেন। নির্বাচকেরা এখন তাঁকে চাইলেই জাতীয় দলে নিতে পারেন। জিম্বাবুয়ে দলে সুযোগ পেলে আগামী নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হতে পারে তাঁর। এমনকি আগামী বছর নটিংহামে ইংল্যান্ড–জিম্বাবুয়ে টেস্টে দুই ভাই টম কারেন কিংবা স্যাম কারেনেরও মুখোমুখি হতে পারেন।

জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করে আলোচনায় এসেছেন বেন কারেন

১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের হয়ে ১১টি ওয়ানডে খেলেছেন কারেন ভাইদের বাবা কেভিন কারেন। এরপর কাউন্টি ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে চলে যান ইংল্যান্ডে। কাউন্টি ক্লাব নর্দাম্পটনের হয়ে খেলার সময় সেখানেই ১৯৯৬ সালে জন্ম হয় বেন কারেনের। জন্মসূত্রে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক।

তবে বাবা কেভিন কারেন ২০০০ সালের দিকে কোচিং করাতে আবারও জিম্বাবুয়েতে ফেরেন। সঙ্গে পরিবারকেও সেখানে নিয়ে যান। কারেন ভাইদের শৈশবের অনেকটা সময় তাই আফ্রিকার দেশটিতে কেটেছে। ২০১২ সালে জিম্বাবুয়ের মুতারে শহরে জগিং করতে বেরিয়ে আকস্মিকভাবে মারা যান কেভিন কারেন।

বাবার মুত্যুর পর কারেন ভাইয়েরা ইংল্যান্ডে ফিরে যান। বড় ভাই টম ও ছোট ভাই স্যাম কাউন্টি ক্লাব সারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। আর মেজ জন বেন যোগ দেন বাবার ক্লাব নর্দাম্পটনে।

কারেন ভাইদের বাবা কেভিন কারেন ২০১২ সালে মারা গেছেন

টম ও স্যাম একপর্যায়ে ইংল্যান্ড জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়ে যান। দেশের হয়ে পান বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। পেসার টম ছিলেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। আর পেস বোলিং অলরাউন্ডার স্যাম ছিলেন ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের অপরিহার্য অংশ; টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারটা স্যামের হাতেই উঠেছিল।

তবে বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলেও অ্যালেক্স হেলস, জেসন রয়, ডেভিড ম্যালান, জনি বেয়ারস্টোদের ভিড়ে ইংল্যান্ড দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার আশা ছেড়ে দিয়ে তাই ২০২২ সালে বাবা–দাদার দেশ জিম্বাবুয়ে গিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগী হন। দেশটির প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা লোগান কাপের গত মৌসুমে মিড ওয়েস্ট রাইনোসের হয়ে ৪৫৮ রান করে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তাদের দৃষ্টি কাড়েন। সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি ম্যাচে অপরাজিত ফিফটি করেন।

বাবা–মা ও দাদার জন্ম জিম্বাবুয়েতে। শৈশবের লম্বা সময় কাটিয়েছেন সেই দেশে। আর দুই বছর ধরে সেই দেশেই থাকছেন। শুধু দেখার বিষয় ছিল ঘরোয়া প্রতিযোগিতার পারফরম্যান্স। সবকিছুতেই উতরে যাওয়ায় জিম্বাবুয়ে দলে সুযোগ পেতে বেন কারেনের আর কোনো বাধা নেই।

জিম্বাবুয়ে দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বেন কারেন ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে বলেছেন, ‘এটা অসাধারণ এক গল্প হবে, তা–ই না? যখন সুযোগ আসবে, তখন লুফে নিতে হবে। সত্যি সত্যিই এটা হলে (জিম্বাবুয়ে দলে সুযোগ পেলে) তা আমার জন্য বেশ অদ্ভুত, বিশেষ এবং মিশ্র আবেগের হবে। সম্ভবত আমি মায়ের কথা ভাবব। মনে হচ্ছে আমার চেয়ে মা–ই বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠবেন।’

মায়ের সঙ্গে তিন ভাই বেন, স্যাম ও টম কারেন

জিম্বাবুয়েকে প্রতিনিধিত্ব করার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কারেন পরিবারের বৃত্ত পূরণ করতে চান বেন, ‘আমি ইংল্যান্ড–জিম্বাবুয়ে দুই দেশেই বাস করেছি। তবে আমার অনুমান জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই আমার যোগসূত্র বেশি শক্তিশালী। আমি সেখানে বেড়ে উঠেছি, শৈশবের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি এবং আমার বাবা–মায়ের জন্মও সেখানে।’