হ্যাগলি ওভালে টসের পরই প্রশ্নটা তুলেছে নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম। স্বাগতিক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন টস জিতে কেন ব্যাটিং নিলেন? শিশিরের কারণে পরে ফিল্ডিং করার সময় বল ধরতে তো সমস্যা হবে! ঘটেছেও ঠিক তা–ই।
রুমাল দিয়ে বল ও হাত মুছতে দেখা গেছে ইশ সোধি ও টিম সাউদিদের। তবে শিশিরের কারণে সমস্যা তো পরে হয়েছে। তার আগে ব্যাটিংয়ের সমস্যাই ঠিক করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৪৭ রানের সাদামাটা সংগ্রহ তুললে ফিল্ডিংয়ে নামার আগেই তো উইলিয়ামসনদের মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকার কথা!
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ধরা হয় স্তম্ভ হিসেবে। কোনো দিন দুজনেই দুর্দান্ত খেলেন, আবার কোনো দিন কেউ একজন আগেভাগে আউট হয়ে গেলেও ধরে খেলেন আরেকজন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে কাল বাবর যেমন ২২ রানে আউট হলেও রিজওয়ান ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। আজ ভূমিকাটা বদল হয়েছে। টিম সাউদির বলে ৪ রানে রিজওয়ান এলবিডব্লিউ হওয়ার পর এক প্রান্তে হাল ধরেন বাবর। অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ১০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল পাকিস্তান।
নিউজিল্যান্ড দল চোটে এমনিতেই জেরবার। ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল কাল ছিটকে পড়ার পর পেসার লকি ফার্গুসনও চোটের কারণে বাদ পড়েন। আরেক স্পিনার মিচেল স্যান্টনারও পারিবারিক কারণে খেলতে পারেননি। বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে সোধিকে পেয়েছেন উইলিয়ামসন।
ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে বেশ শান্ত ছিলেন বাবর। তৃতীয় ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে তিন চার মেরে ছান্দসিক ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেন পাকিস্তান অধিনায়ক। পঞ্চম ওভারে রিজওয়ান আউট হওয়ার পর মাঝে দুই বলের ব্যবধানে শান মাসুদকে তুলে নেন কিউই পেসার ব্লেয়ার টিকনার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাসুদ (০)।
এরপর চারে লেগ স্পিনার শাদাব খানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বেশ চমকেই দেয় পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে আসল চমকটা পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। বাবরের সঙ্গে ৪২ বলে ৬১ রানের জুটিটাই পাকিস্তানের জয়ের ভিত—যেখানে বাবরের অবদান ২০ বলে ২৫, শাদাবের ২২ বলে ৩৪!
ইশ সোধি থেকে জিমি নিশাম কাউকেই ছাড়েননি শাদাব। বাজে বল পেলেই মারার চেষ্টা করেছেন। ২ ছক্কা ও ২ চারে সাজানো শাদাবের ইনিংসটি ১৩তম ওভারে শেষ হয় টিকনারের বলে। পয়েন্টে ক্যাচ দেন শাদাব। জয়ের জন্য পাকিস্তানের তখন ৪৬ বলে ৫০ রান দরকার। স্রেফ উইকেটে টিকে থাকলেই হবে।
এখান থেকে মোহাম্মদ নওয়াজের সঙ্গে ২৮ বলে ২৬ এবং হায়দার আলীর সঙ্গে ৮ বলে ২৫ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন বাবর। ১৯ বলে ১৭ রান করা নওয়াজ ১৭তম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হন। হায়দার আলী এসে ১ ছক্কা ১ চারে ২ বলে ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া বাবর ১১ চারে ৫৩ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচসেরাও পাকিস্তান অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২ উইকেট টিকনারের।
ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। পাওয়ার প্লে–তে উঠেছে মাত্র ৪২ রান। ওপেনার ফিন অ্যালেনকেও (১৩) তৃতীয় ওভারে হারায় নিউজিল্যান্ড। মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে আউট হন। সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন ডেভন কনওয়ে।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই। একটি জুটিতে উঠেছে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান। দ্বিতীয় উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়েন ডেভন কনওয়ে ও উইলিয়ামসন। চতুর্থ উইকেটে ২৫ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন মার্ক চাপম্যান ও গ্লেন ফিলিপস। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ১৬ বলে ৩২ রান করেন চাপম্যান। ৩১ রান করে আউট হন উইলিয়ামসন। ৩ উইকেট নেন পাকিস্তানের পেসার হারিস রউফ।