মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে যা হওয়ার কথা ছিল, সেটাই হচ্ছে। রাচিন রবীন্দ্রর অসাধারণ এক দ্বিশতকে দ্বিতীয় দিনটাও নিজেদের করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে ৬ জনের অভিষেক হওয়া ‘নতুন দল’ দক্ষিণ আফ্রিকার ধোঁকার কথা ছিল, ধুঁকছে তারা। প্রথম ইনিংসে কিউইদের ৫১১ রানের জবাবে ৪ উইকেটে ৮০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে প্রোটিয়ারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ধুঁকতে থাকা এই দিনেও দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন তাদের অভিষিক্ত অধিনায়ক নিল ব্র্যান্ড। অভিষেকে অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট এখন সেরা বোলিং তাঁর। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ১১৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন ব্র্যান্ড। তাঁর আগে রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশের নাঈমূর রহমানের। ২০০০ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে অধিনায়ক হিসেবে নাঈমূরও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। তবে সেটা ১৩২ রানে।
২০২১ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়া রবীন্দ্রর এই টেস্টের আগে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল অপরাজিত ১৮ রানের। এই ম্যাচের আগে তিনি খেলেছেন ৩টি টেস্ট। ২০২২ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম কিউইদের হয়ে টেস্ট খেলতে নেমেছেন গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে অসাধারণ ব্যাটিং করা রবীন্দ্র। ওয়ানডেতে এর আগে তিনটি শতক করা রবীন্দ্র টেস্ট ক্যারিয়ারে পাওয়া শতকটিকেই পরিণত করেছেন দ্বিশতকে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে গতকাল সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ১১৮ রানে অপরাজিত থাকা রবীন্দ্রই এখন প্রথম শতকে সর্বোচ্চ রান করা নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান। ব্র্যান্ডের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৬৬ বলে ২৬ চার ও ৩ ছয়ে ২৪০ রান করেছেন রবীন্দ্র।
গতকাল রবীন্দ্র তাঁর আদর্শ কেইন উইলিয়ামসনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেছিলেন। আজ উইলিয়ামসন বেশিক্ষণ টেকেননি। তবে রবীন্দ্র খেলে গেছেন। ২৭০ বলে পূর্ণ করেন ১৫০ রান। তাঁর ডাবল সেঞ্চুরিটি আসে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিষিক্ত অধিনায়ক নিল ব্র্যান্ডকে কাট করে নেওয়া সিঙ্গেলে। ৩৪০ বলে ২০০-তে পৌঁছান তিনি।
রবীন্দ্র দ্বিশতক পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে। দেশের মাটিতে ২০০ রানের ইনিংস খেলা ১৪তম কিউই ব্যাটসম্যান তিনি। এ ইনিংসটি খেলে রবীন্দ্র নিউজিল্যান্ডের আরও একটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঢুকে গেছেন। এর আগে মাত্র তিনজন কিউই ব্যাটসম্যানই ক্যারিয়ারের প্রথম শতকটিকেই ২০০ পর্যন্ত টানতে পেরেছেন। ১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মার্টিন ডন্নেলি, ১৯৯৯ সালে ম্যাথু সিনক্লেয়ারের পর ক্যারিয়ারের প্রথম শতককে দ্বিশতকে রূপ দিয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। সিনক্লেয়ার ও কনওয়ে দ্বিশতক করেছিলেন নিজেদের অভিষেকেই।
নিউজিল্যান্ডের রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার শুরুটা করেছিলেন ইতিবাচকভাবেই। কিন্তু দলের ২৬ রানে অধিনায়ক ব্র্যান্ড বিদায় নেন। দলকে ওই একই রানে রেখে ফেরেন আরেক অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান রেনার্ড ফন টন্ডারও। ৩০ রানে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় উইকেট। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ডেভিড বেডিংহাম ও জুবাইর হামজা ৪৪ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি ভাঙে হামজার আউটে। এরপর অবশ্য আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে দিনটি পার করে দেন বেডিংহাম ও কিগান পিটারসেন। কিন্তু ফলোঅন এড়াতে এখনো ২৩১ রান প্রয়োজন প্রোটিয়াদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫১১ (ল্যাথাম ২০, কনওয়ে ১, উইলিয়ামসন ১১৮, রবীন্দ্র ২৪০, মিচেল ৩৪, ব্লান্ডেল ১১, ফিলিপস ৩৯, স্যান্টনার ২, জেমিসন ৮*, হেনরি ২৭, সাউদি ০; ব্র্যান্ড ৬/১১৯, সোয়ার্ট ২/৬১, পিটারসন ১/৯৮, মোরেকি ১/১১০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২৮ ওভারে ৮০/৪ (মুর ২৩, ব্র্যান্ড ৪, টন্ডার ০, হামজা ২২, বেডিংহাম ২৯*, পিটারসেন ২*; জেমিসন ২/২১, স্যান্টনার ১/১৩, হেনরি ১/১৫, সাউদি ০/৩১)।