আগের ম্যাচেও আউট হয়েছিলেন কোনো রান না করেই। সৌম্য সরকারকে কেন আবার জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছে—স্বাভাবিকভাবেই সে প্রশ্ন উঠেছিল আবার। নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই সৌম্যই পেলেন শতকের দেখা। আক্ষরিক অর্থেই সৌম্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস, তাঁর ১৬৯ রানের রেকর্ড রানের ইনিংসে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ তুলেছে ২৯১ রান।
নিউজিল্যান্ডে সৌম্যর সুখস্মৃতি ছিল আগেও, তবে সেটি ঠিক সীমিত ওভারে নয়। টেস্টে শতক করেছেন, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ছিল ৫১ রানের দুটি ইনিংস। আজ স্যাক্সটন ওভালে পেয়ে গেলেন ওয়ানডে শতকও। শুধু তা-ই নয়, তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ১৫০ পেরিয়েছেন। শট নির্বাচন, টাইমিং, প্লেসমেন্ট—সৌম্য ছিলেন দুর্দান্ত।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, যদিও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন বলেছিলেন জিতলে এমন সিদ্ধান্তই নিতেন তিনি। কিন্তু প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই এনামুল হক, নাজমুল হোসেন ও লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশকে উঁকি দিচ্ছিল আগের ম্যাচের গল্পটাই—জুটি আর বড় ইনিংস খুঁজে ফেরা। বড় ইনিংস তো সৌম্য খেলেছেনই।
জুটি গড়েছেন মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজের পর তানজিম হাসানকে নিয়েও। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়ার আভাস দিয়েছিলেন সৌম্য, হৃদয় তাঁকে ভালো সঙ্গই দিচ্ছিলেন। কিন্তু নন স্ট্রাইক প্রান্তে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে থামতে হয় হৃদয়কে, সে জুটি থামে ৩৬ রানেই। জশ ক্লার্কসনের বলে তাঁর বুট ছুঁয়ে সৌম্যর ড্রাইভ গিয়ে ভাঙে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প। হৃদয়ের আউটের পর তাঁর চেয়েও বেশি হতাশ ছিলেন সৌম্যই।
এরপর মুশফিককে নিয়ে ভিতটা গড়েন সৌম্য। নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার—অভিষিক্ত আদি অশোক ও রাচিন রবীন্দ্রকে দুজনই খেলেন স্বচ্ছন্দ্যে, পেসারদের বিপক্ষেও শটের প্লেসমেন্ট ছিল দারুণ। এ জুটির সময়ই ৫০ পেরিয়ে যান সৌম্য, ২০১৯ সালের পর ওয়ানডেতে যেটি প্রথম তাঁর। দুজনের ৯১ রানের জুটি ভাঙে ডাফির বলে মুশফিক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়াতে। তাঁর উইকেটের পর ছন্দপতন হয় সৌম্যরও, ৫০ থেকে ৬০ রানের মধ্যে দুবার ক্যাচ দিয়ে বাঁচেন, একবার বাঁচেন রিভিউ নিয়ে।
নড়বড়ে সৌম্য বেশি দূর যাবেন, তখন ঠিক সেটি মনে হচ্ছিল না। তবে এদিন সৌম্য যেন নেমেছিলেন সবাইকে ভুল প্রমাণ করতেই। মিরাজকে নিয়ে দ্রুতগতির জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে চাপে ফেলেন আবার, পেয়ে যান শতকও। ওয়ানডেতে নিজের তৃতীয় শতক পূর্ণ করেন অশোকের বলে অফ সাইডে সিঙ্গেল নিয়ে, ১১৬ বলে। এরপর গতি বাড়ান। শতকের পর ১৫০ রানে যেতে তাঁর লাগে আর মাত্র ২৮ বল।
শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসও হয়ে যায় তাঁর। লিটনের ১৭৬ রানের বাংলাদেশ রেকর্ডটাও ভেঙে দিবেন মনে হচ্ছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। তবে তানজিম হাসানের পর রিশাদ হোসেনকে নিয়ে ৩৩ বলে ৫৮ রান যোগ করে বাংলাদেশকে সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ের মতো এক স্কোর এনে দেন ঠিকই। ও’রর্কের করা শেষ ওভারে সৌম্যরটি সহ ৩ উইকেট হারিয়ে ১ বল বাকি থাকতেই থামে বাংলাদেশ।