টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে নিউইয়র্কের ড্রপ ইন পিচে না হয় রান তোলা কঠিন ছিল। কিংবা মিরপুরের মতোই সেন্ট ভিনসেন্টের পিচও ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল বধ্যভূমি।
তবে সুপার এইট পর্বে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচই হয়েছে ভালো পিচে। শেষ আটের লড়াইয়ে প্রথম ৩ ম্যাচেই আগে ব্যাট করা দল ন্যূনতম ১৮০ করে তুলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ খেলতে নামতেই সেই ধারায় ছেদ পড়েছে।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে ১৪০ রান। লক্ষ্যটা হেসেখেলে তাড়া করার পথে ছিল অস্ট্রেলিয়া। দলটি ১১.২ ওভারেই ১০০ ছুঁয়ে ফেলেছিল। আরেক দফা বৃষ্টির বাগড়ায় আর খেলা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডিএলএস পদ্ধতিতে ২৮ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয় অস্ট্রেলিয়াকে।
যে পিচে ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা অনায়াসে শট খেলে গেলেন, সেই পিচেই ভুগতে দেখা গেল তানজিদ হাসান, লিটন দাস, সাকিব আল হাসানদের। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ১৩ ম্যাচ পর চলিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেললেও সেটা টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারেনি (৩৬ বলে ৪১ রান, স্ট্রাইক রেট ১১৩.৮৯)।
অথচ গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের ৩টিতেই জিতে আত্মবিশ্বাসীদের তুঙ্গে থেকেই সুপার এইটে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ব্যাটসম্যানদের ওপর তেমন কোনো চাপও ছিল না। তবু ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না কেন?
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুলকে প্রশ্নটা করা হলে তিনি জানান, এর উত্তর তাঁর জানা নেই, ‘কেন পারছি না, সেটা বলা মুশফিক। আমার কাছে মনে হয়, দলের সবার সেই (বড় ইনিংস খেলার) সামর্থ্য আছে। অতীতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় করেও দেখিয়েছে। কিন্তু (বিশ্বকাপে) কেন হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই। সবাইকে তার স্বাভাবিক খেলাটা খেলার স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই হচ্ছে না।’
সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশকে সুপার এইটের শেষ দুটি ম্যাচ জিততেই হবে। আগামীকাল অ্যান্টিগাতেই নাজমুল–সাকিবদের প্রতিপক্ষ রোহিত–কোহলি–বুমরাদের ভারত। কাল রাতে আফগানিস্তানকে ৪৭ রানে হারিয়ে ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশকেও একটা প্রচ্ছন্ন বার্তা দিয়ে রেখেছে। মঙ্গলবার শেষ ম্যাচটি আফগানদের বিপক্ষে। রশিদ–নবীদের দলকেও খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
সামনের ম্যাচ দুটি নিয়ে নাজমুল বলেছেন, ‘দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার আছে। দুটি ম্যাচই জিতলে পারলে আমরা আরও ভালো অবস্থানে যাব। অবশ্যই প্রত্যেক ম্যাচই আমরা জেতার জন্য খেলব। দলের কাছে আমার চাওয়া, সবাই যেন স্বাধীনভাবে খেলে। কিন্তু এখন যেভাবে ব্যাট করছি, তা আবার করলে জয় পাওয়া খুব কঠিন।’
বাংলাদেশ যে ধরনের পিচ খেলে থাকে, নিউইয়র্ক আর সেন্ট ভিনসেন্টে নিজেদের আগের ৩ ম্যাচের পিচ ছিল অনেকটা সেই রকম। সেন্ট ভিনসেন্টে টানা ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়ায় সেখানকার কন্ডিশনের সঙ্গেও দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছিল দল। কিন্তু অ্যান্টিগার পিচ ব্যাটিং সহায়ক। সেখানকারও ছিল আলাদা। এমন পিচে আরও বেশি রান করতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে নাজমুলের কণ্ঠে, ‘এখানকার কন্ডিশন একেবারেই আলাদা। আগের ম্যাচে (নেপালের বিপক্ষে) বল ঘুরেছে। কিন্তু আজকের উইকেট ফ্ল্যাট ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল। আমরা আগের চেয়ে ভালো ব্যাটিং করেছি ঠিকই। তবে আমাদের ১৬০ থেকে ১৭০ রান করা উচিত ছিল।’
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগে অ্যান্টিগায় আরেকটি ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। নামিবিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচটি তারা জিতেছে আরও দাপট দেখিয়ে, ৯ উইকেট আর ৮৬ বল হাতে রেখে!
অ্যান্টিগার পিচ ও কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে না পারার কারণেই কি হেরে গেল বাংলাদেশ—অস্ট্রেলিয়ার এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নে নাজমুলের উত্তর, ‘না, আমি তেমনটা মনে করি না। (পেশাদার) খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের সব ধরনের উইকেটেই মানিয়ে নিতে হবে। উইকেট বেশ ভালো ছিল। কিন্তু আমরা পরিকল্পনামাফিক খেলতে পারিনি। বিশেষ করে নতুন বলে পাওয়ারপ্লেতে ভালো করতে পারিনি। শেষ ৫–৬ ওভারে ফিনিশিংও ভালো হয়নি। এ সময় আমরা অনেক উইকেট হারিয়েছি। শেষটা ভালো করতে পারলে ১৬০ থেকে ১৭০ রান হতে পারত।’
এই বিশ্বকাপ শেষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। বয়স ৩৮ ছুঁই ছুঁই হলেও এখনো বিস্ফোরক ইনিংস উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আজকের ম্যাচেও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর তাঁর। বৃষ্টিতে শেষবার ম্যাচ থামার আগে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ বলে অপরাজিত ছিলেন ৫৩ রানে।
ওয়ার্নারের মতো বড় মাপের খেলোয়াড়কে থামাতে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ছিল কি না—এ ব্যাপারে নাজমুলের উত্তর, ‘আমরা জানি তিনি কী করতে পারেন। ১৫–১৬ বছর ধরে তিনি সেটাই দেখিয়ে চলেছেন। বড় মাপের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শিখতে হবে। কিন্তু যে কথা আগেও বললাম, আজ আমাদের পরিকল্পনাগুলো সফল হয়নি।’