প্রথম দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় আসরেও উঠেছিল ফাইনালে। অথচ বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতাপশালী সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার ২০২৩ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়েই অনিশ্চয়তায়। সরাসরি জায়গা করতে না পেরে খেলতে হচ্ছে বাছাইপর্বে, যে বাছাইপর্ব ক্যারিবীয়রা সহজেই টপকে যেতে পারবে বলে ধারণা ছিল অনেকের।
কিন্তু শনিবার জিম্বাবুয়ের কাছে ৩৫ রানে হেরে নিজেদের কঠিন সমীকরণে ঠেলে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বয়ং প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামিই বলেছেন, তাঁর দলের বিশ্বকাপ টিকিট পাওয়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে পরিমাণ ক্যাচ মিস ও ব্যাটিংয়ে ইনিংস বড় করার সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন, তাতে ক্রিকেট–ঈশ্বরই দলটিকে শাস্তি দিয়েছেন।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টসে জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগানোর যে চিন্তা থেকে ফিল্ডিং নেওয়া, আলজারি জোসেফ, জেসন হোল্ডাররা সেটা আদায়ও করে নেন। কিন্তু ফিল্ডিং দুর্বলতার কারণে সুবিধা তোলা যায়নি। ১ ও ৭ রানে দুবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সিকান্দার রাজা, যিনি শেষ পর্যন্ত দলীয় সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। রাজার দুটিসহ সব মিলিয়ে মোট ৪টি ক্যাচ মিস করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আবার ২৬৮ রান তাড়ায় একটা পর্যায়ে ২ উইকেটে ১১০ রান তুলে ফেলেছিলেন কাইল মেয়ার্স-শাপ হোপরা। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে খেই হারিয়ে ২৩৩ রানে আটকে যায় পুরো ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ স্যামির মনে হচ্ছে, ক্রিকেটাররা পুরো বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি, ‘আপনি যখন এ ধরনের ফিল্ডিং করবেন, তারপর একটা ভালো জায়গায় গিয়ে ম্যাচটাকে হালকাভাবে নিয়ে নেবেন, তখন ক্রিকেট–ঈশ্বর আপনাকে শাস্তি দেবেনই। এ কথাটা আমি ওদের ড্রেসিংরুমে বলব। জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল না। আমরা আজ (গতকাল) জয়ের জন্য খেলিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে ফিল্ডিং–বিষয়ক আরেকটি প্রশ্নেও প্রকৃতির বিচারের কথা তুলে আনেন ক্যারিবীয়দের দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ে নেতৃত্ব দেওয়া স্যামি, ‘আপনি যদি প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দিয়ে যেতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট–ঈশ্বর আপনাকে ছাড়বেন না। আজ (গতকাল) আমাদের সঙ্গে সেটাই হয়েছে।’
এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০১৯ আসরের মতো এবারও অংশ নেবে ১০টি দল, যার মধ্যে স্বাগতিক ভারতসহ ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ ৮ দল এরই মধ্যে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে। বাকি দুটি দল চূড়ান্ত হবে বাছাইপর্ব থেকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডসহ মোট ১০টি দল জিম্বাবুয়ের মাটিতে বাছাইপর্ব খেলছে। এখানে প্রথমে পাঁচটি করে দল দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে। গ্রুপের শীর্ষ তিনটি করে মোট ৬ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে সুপার সিক্স। আর সুপার সিক্সে দলগুলোর প্রতিপক্ষ হবে অপর গ্রুপ থেকে উঠে আসা তিন দল। সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে বাছাইপর্বের ফাইনালে জায়গা করা দুই দলই খেলবে বিশ্বকাপে।
১৮ জুন হারারেতে শুরু হওয়া বাছাইপর্বে এখনো গ্রুপ পর্যায়ের খেলা চলছে। ‘এ’ গ্রুপে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব ম্যাচও শেষও হয়নি। এখনো নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি শাই হোপদের। গ্রুপে থাকা নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার সুপার সিক্স নিয়ে ভাবনা নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরই মধ্যে গ্রুপ থেকে সুপার সিক্সে জায়গা হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের। কিন্তু ক্যারিবীয়দের যা দুশ্চিন্তার জায়গা, সেটি জিম্বাবুয়ের কাছে হারের কারণে।
নিয়মানুযায়ী সুপার সিক্সে উঠে গেলেও গ্রুপ পর্বের কিছু পয়েন্ট সঙ্গে থাকবে। এই পয়েন্টগুলো হচ্ছে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে আসা দলের বিপক্ষে ম্যাচের পয়েন্ট। অর্থাৎ, ‘এ’ গ্রুপ থেকে সুপার সিক্সে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে থাকবে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের পয়েন্ট। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হেরে যাওয়ায় দুটি পয়েন্ট তাদের কম থাকবে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যারিবীয়রা নেদারল্যান্ডসকে হারাতে পারলে সুপার সিক্সে উঠবে দুই পয়েন্ট নিয়ে। কিন্তু নেদারল্যান্ডস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলের বিপক্ষেই জয় থাকায় জিম্বাবুয়ে উঠবে ৪ পয়েন্ট নিয়ে।
বেশি পয়েন্ট নিয়ে সুপার সিক্স পর্ব শুরু করায় স্বাভাবিকভাবেই শীর্ষ দুইয়ে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে জিম্বাবুয়ের। অপর গ্রুপ থেকে চার পয়েন্ট নিয়ে সুপার সিক্সে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা থাকা শ্রীলঙ্কাও এগিয়ে থাকবে।
আর এখানেই পিছিয়ে থাকবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে কারণে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের কাছে হারটা ভীষণ পোড়াচ্ছে ড্যারেন স্যামিকে। ম্যাচের পর ক্যারিবীয় কোচ ‘খুবই হতাশ’ উল্লেখ করে একপর্যায়ে বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপের পথটাকে আরও কঠিন করে তুলেছি। তবে এখনই আমি হাল ছাড়ছি না। ছেলেদের আমি ভালো করার জন্য উৎসাহিত করে যাব। কারণ এখান থেকে যে ট্রেনযাত্রা আমরা শুরু করেছি, সেটা কিন্তু চলছেই। যারা এই ট্রেনে যাত্রী হতে চায়, তাদের টিকিট অফিসে গিয়ে টিকিট কাটতে হবে। তবে এই মুহূর্তে অনেকেই টিকিট কিনছে না।’