টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে অধিনায়কত্বও ফিরে পেলেন সাকিব আল হাসান। তাঁকে ওয়ানডে অধিনায়ক করে আবারও তিন সংস্করণে একই অধিনায়কের চক্রে ফিরে গেল বিসিবি। এর ফলে একটা চক্রপূরণই হলো আজ।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এ সংস্করণে বাংলাদেশকে প্রথমবার নেতৃত্ব দেন সাকিব। সে সফরে টেস্ট সিরিজে চোটে পড়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, যাঁর সহকারী অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। অধিনায়কত্বের প্রথম মেয়াদে মূলত মাশরাফির অনুপস্থিতিতেই দায়িত্ব পালন করছিলেন সাকিব।
২০১১ বিশ্বকাপেও শেষ পর্যন্ত খেলা হয়নি মাশরাফির, অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল সাকিবকেই। ঘরের মাঠের সে বিশ্বকাপ ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ মিশ্র অনুভূতির। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার স্মৃতি যেমন আছে, তেমনি বাংলাদেশ হারিয়েছিল ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকে।
২০১০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই মাশরাফি আবার চোটে পড়লে অধিনায়কত্ব করতে হয় সাকিবকে। সাকিবের নেতৃত্বেই নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ, যেটি সে সময়ে ছিল দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অর্জন। বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ এবং এরপর জিম্বাবুয়ের মাটিতে তাদের বিপক্ষে সিরিজেও অধিনায়ক ছিলেন সাকিব।
তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পরই অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাকিব। সে সময় বিসিবি বলেছিল, সিরিজটিকে সাকিবরা নাকি ‘সিরিয়াসলি’ নেননি। যথাযথভাবে দলকে নেতৃত্ব না দেওয়ার অভিযোগও করেছিল বিসিবি।
সাকিব সে খবরটি পেয়েছিলেন সাংবাদিকদের কাছেই, যিনি ছুটি কাটাতে ছিলেন মাগুরায়। প্রতিক্রিয়ায় নির্লিপ্ত সাকিব বলেছিলেন, ‘বোর্ড যা ভালো মনে করেছে, তাই করেছে। এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। বোর্ড নিশ্চয়ই সব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে সিরিজে সাকিবের সহকারী ছিলেন তামিম ইকবাল। সাকিবের সঙ্গে তামিমকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তামিমের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ এনেছিল বিসিবি।
সেই তামিমের জায়গাতেই আবার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ফিরে পেলেন সাকিব। অবশ্য ২০১১ সালে অধিনায়কত্ব হারানোর পর ২০১৫ সালে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন সাকিব—হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের পর মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রথমটিতে স্লো ওভার রেটের কারণে নিষিদ্ধ হতে পারেন ভেবে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফিকে খেলানো হয়নি। পরেরটিতে একই কারণে নিষিদ্ধ ছিলেন মাশরাফি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে মালাহাইডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে সাকিবের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণও এটাই। এরপর অবশ্য টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব ফিরে পান সাকিব। ওয়ানডে অধিনায়কত্বও ফিরে পেলেন আজ।
এবারের আগে বাংলাদেশকে সব মিলিয়ে ৫০টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ২৩টি ম্যাচ জয়ের বিপরীতে তাঁর অধীনে বাংলাদেশ হেরেছে ২৬টি ম্যাচ। একটি হয়েছিল পরিত্যক্ত। মানে ৪৬ শতাংশ ম্যাচ জিতেছেন তিনি। ম্যাচ জয়ের শতাংশে সাকিবের ওপরে আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা (৫৬.৮১) ও তামিম ইকবাল (৫৬.৭৫)।
এর আগে ২০১৫ ও ২০১৯ সালের দুটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি। সর্বশেষ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল স্মরণীয়। তবে আশা জাগিয়েও সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
২০২০ সালে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মাশরাফি, এর পর থেকেই দলের বাইরে এখনকার জাতীয় সংসদ সদস্য। এরপর তামিমকে দায়িত্ব দেয় বিসিবি। তবে সম্প্রতি তামিমকে ঘিরে বেশ নাটকই হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। আফগানিস্তান সিরিজে আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন, এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফিরে আসেন। তবে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণাও দেন। সাকিবকে দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হলো এরপরই।