রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ঢুকতেই কমলা রঙের উজ্জ্বল আভা চোখে পড়বে। হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এ স্টেডিয়ামের গ্যালারির সব কটি সিটের রং কমলা। এই শহরের আইপিএল দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিও কমলা রঙের। দলটির সমর্থকগোষ্ঠীর নামও ‘অরেঞ্জ-আর্মি’। আজ এমন উজ্জ্বল আবহেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের ১৪১তম ম্যাচটা খেলতে নামবেন মাহমুদউল্লাহ, যা দেশের হয়েও তাঁর শেষ টি-টোয়েন্টি হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা সাবেক এই অধিনায়কের জন্যই আজ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটা জিততে চাইবে নাজমুল হোসেনের দল। প্রথম দুই ম্যাচ হারায় অবশ্য সিরিজ আগেই হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। তবু নিয়মরক্ষার ম্যাচে একটা জয় হতে পারে মাহমুদউল্লাহর জন্য দলের বিদায়ী উপহার। মাহমুদউল্লাহ নিজেও চাইবেন দারুণ কিছু করে এই সংস্করণকে বিদায় বলতে। ২০২১ সালে হারারেতে যেমন অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন। আজ হায়দরাবাদে এমন কিছু করতে পারলে তো দারুণ ব্যাপারই হবে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারত সফরে বাংলাদেশের এই শেষ ম্যাচের আগে মাহমুদউল্লাহই মূল চরিত্র। বিশেষ করে গতকাল হায়দরাবাদে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরাও অপেক্ষায় ছিলেন—মাহমুদউল্লাহ কখন অনুশীলনে আসেন। শেষ টি-টোয়েন্টির আগে তাঁর শেষ অনুশীলনের ছবিটাই তো আজ দেশের পত্রিকায় খেলার পাতার ‘ডিমান্ড’; কিন্তু ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় মাহমুদউল্লাহ মাঠেই এলেন না। হোটেল তাজ কৃষ্ণতেই দিনটা কাটালেন। মাঠে এলেন নাজমুল হোসেন, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, শেখ মেহেদী হাসান, রকিবুল হাসান ও তানজিদ হাসান। এই সফরে দলের সঙ্গে থাকা ইবাদত হোসেনও ছিলেন গতকাল অনুশীলনে। ক্রিকেটাররা মাঠে থাকা অবস্থায়ই তিনবার বৃষ্টি এল। তিনবার মাঠ কাভারে ঢাকা পড়ল।
আজও বৃষ্টির শঙ্কা আছে। সন্ধ্যায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটায় সেটা কতটা প্রভাব ফেলে, সেটাই দেখার বিষয়। আবার ভয় আছে ছক্কা-বৃষ্টিরও। গোয়ালিয়র, দিল্লির মতো হায়দরাবাদও বড় স্কোরের মাঠ। বাউন্ডারি কিছুটা বড় হলেও এ মাঠের উইকেটকে হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এক মাঠকর্মী ‘হায়দরাবাদ হাইওয়ে’র সঙ্গে তুলনা করলেন। সর্বশেষ আইপিএলে ছয়টি ম্যাচ হয়েছে এ মাঠে। এর মধ্যে চারটিতেই প্রথম ইনিংসে রান হয়েছে ২০০–এর বেশি। যে দুটি ম্যাচে ২০০–এর কম রান হয়েছে, সেগুলোতে তাড়া করতে নেমে হেসেখেলে জিতেছে সানরাইজার্স। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে সানরাইজার্সের ৩ উইকেটে ২৭৭ রানও এই মাঠেই।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বড় স্কোরই হয়েছে এই মাঠে। ভারতের দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে একটিতে অস্ট্রেলিয়া ১৮৬ রান করেছে হেরেছে, অন্যটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছে ২০৭ রান করে।
আর বড় স্কোরের উইকেটে বাংলাদেশ স্বাগতিকদের চেয়ে কতোটা পিছিয়ে, তা প্রথম দুই ম্যাচেই দেখা গেছে। দুই ম্যাচের একটিতেও ১৫০ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। কেন পারছে না বাংলাদেশ, সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিতে গতকাল বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ নিক পোথাস প্রথমে বললেন অভিজ্ঞতার ঘাটতির কথা, ‘আমরা দারুণ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে খেলছি। দুই দলের পার্থক্য দেখলে বোঝা যাবে সব। টপ অর্ডারে দেখুন ইমন (পারভেজ হোসেন) মাত্র দুই ম্যাচ খেলেছে। হ্যাঁ, আমাদের দলে অভিজ্ঞরাও আছে।’ পরে অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারিনি। অবশ্যই ১৭০-১৮০ রান করতে পারতাম। আমাদের আরও বেশি রান করা দরকার ছিল। দারুণ উইকেট ছিল। ভারতও অনেক ভালো বল করেছে। আমরাও ম্যাচের অনেক সময়ে অনেক সুযোগ নিতে পারিনি।’
তবে বাংলাদেশ দলকে শুধু এই সিরিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বিচার করতে রাজি নন পোথাস, ‘আমরা গতকাল এবং আজ কী ঘটেছে, তা মনে রাখি ভালোই; কিন্তু গত ১২ মাসে কী ঘটেছে, তা মনে করতে পারছি না। গত ১২ মাসে অনেক উন্নতি হয়েছে। ফলে সেটা মেনে নিন এবং কৃতিত্ব দিন।’
হতাশার এই ভারত সফর থেকে ইতিবাচক কিছুই খুঁজে নিতে চান পোথাস, ‘এখানে অনেক কিছু শেখা হয়েছে আমাদের। শিক্ষাটা নিষ্ঠার সঙ্গে নিতে হবে। ভারতের মতো জায়গায় এসে আপনি যা শিখবেন, সেটাই আপনাকে সামনে এগিয়ে নেবে। কারণ, ভারত আপনাকে জানিয়ে দেবে আপনার কোথায় উন্নতি করতে হবে। ফলে সব সময় আপনাকে চোখ–কান খোলা রাখতে হবে।’
এখন এই শিক্ষাসফরের শেষটা কেমন হয়, সেটা দেখার অপেক্ষা।