অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজে একটি ম্যাচেও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ নারী দল। দুই সিরিজেই নিগার সুলতানার দলের ব্যর্থতার মূল কারণ ছিল ব্যাটিংই। ব্যাটিং–ব্যর্থতার সেই দুশ্চিন্তা নিয়েই মেয়েদের এশিয়া কাপ খেলতে আগামীকাল শ্রীলঙ্কায় যাবেন বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে অধিনায়ক নিগার এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের সেমিফাইনালে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশার কথাই শোনালেন আজ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বড় সাফল্য এসেছিল মেয়েদের এশিয়া কাপেই, ২০১৮ সালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। তবে ২০২২ সালে ঘরের মাঠের সর্বশেষ এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে। এবারও অবশ্য ২০১৮ সালের শিরোপা জয়ের সুখস্মৃতি থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজছেন নিগার। মিরপুরে শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এশিয়া কাপ আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য অন্য রকম একটা আবেগের জায়গা। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ জয়ের পর বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটে কিন্তু বড় বিপ্লব (রেভল্যুশন) হয়েছে।’
এবারের টুর্নামেন্টকে আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছেন নিগার, ‘এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ, বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়া যাবে এশিয়া কাপের মাধ্যমে। শেষ দুটি সিরিজ খারাপ গেছে, একটা ম্যাচও জিততে পারিনি। এরপর একটা লম্বা বিরতি গেল, এ সময় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। সেখানে যারা ভালো করেছে, তারা দলে আছে। সর্বশেষ ক্যাম্পেও দেখলাম, সবাই ভালো ছন্দে আছে। আমরা এখন ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’
এশিয়া কাপের লক্ষ্য প্রসঙ্গে নিগার বলেন, ‘সর্বশেষ এশিয়া কাপে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারিনি। এবার স্বাভাবিকভাবেই প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল। এর জন্য আমাদের প্রথম ম্যাচটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, লম্বা সময় ধরে আমরা ভালো করছি না। কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দেখেছি, কিন্তু দল হিসেবে ভালো করিনি। আমাদের মোমেন্টামের জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা ভালো করে শুরু করতে চাই।’
এবারের এশিয়া কাপ দিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জাহানারা আলম ও রুমানা আহমেদ। দুজনের অভিজ্ঞতা দলকে শক্তিশালী করবে বলে বিশ্বাস নিগারের, ‘অভিজ্ঞতা সব সময় কাজে লাগে। তাঁরা দুজনই সর্বশেষ দুটি এশিয়া কাপে খেলেছেন। রুমানা আপু অনেক দিন পর ফিরলেন, জাহানারা আপুও। দুজনই কিন্তু সর্বশেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। এ দুজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আমার মনে হয় দলে অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। আমরা প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে দেখেছি, তাঁরা অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন। এটা দলের জন্য সুবিধা হবে।’
রুমানা ও জাহানারা দলে আসায় লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ের শক্তি বাড়বে, এমন আশা করাই যায়। তাতে দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা হয়তো আরেকটু স্বাধীনভাবে খেলতে পারবেন। তবে ব্যাটিংয়ের সমস্যাটা যে ছোট নয়, তা অধিনায়কের কথাতেই স্পষ্ট, ‘ব্যাটিং একটা দৃশ্যমান সমস্যা। আমরা সবাই মিলে এটা নিয়ে কাজ করছি। খেলোয়াড়দের মধ্যে দক্ষতার কোনো সমস্যা নেই। অনেক সময় হচ্ছে, অনেক সময় হচ্ছে না। কেউ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে করছে, বাকি ম্যাচে করতে পারছে না। এই ধারাবাহিকতাটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এখন আসলে দেখার বিষয়, সেটাকে কতটা পারফরম্যান্সে প্রতিফলিত করতে পারব।’
প্রধান কোচ হাশান তিলকরত্নেও একই সুরে কথা বললেন, ‘আমাদের প্রথমে মেনে নিতে হবে, আমরা সম্প্রতি ভালো ক্রিকেট খেলিনি। তবে আমার সে আত্মবিশ্বাস আছে যে তাদের মধ্যে সে দক্ষতা ও সামর্থ্য আছে ভালো করার।’ ব্যাটারদের ব্যর্থতার একটা কারণ অবশ্য তিনি খুঁজে বের করেছেন, ‘আমি মনে করি, এটা ব্যর্থতার ভয়। আমরা সবাই জানি, ওরা প্রত্যেকেই ভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। আমাদের ওদেরকে সাহস দিতে হবে। আমরা সম্প্রতি ভালো খেলছি না ঠিক আছে, তবে দলের সামর্থ্যে আমার আস্থা আছে।’
মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নতিতে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রশ্নও এসেছে আজকের সংবাদ সম্মেলনে। বিসিবির উইমেন উইংসের প্রধান হাবিবুল বাশার জানান, এ বছর না হলেও আগামী বছর মেয়েদের ক্রিকেটেও আসতে পারে বিপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, ‘আমাদের মেয়েদের ক্রিকেট (তাতে) উপকৃত হবে। এটা সময়ের দাবি। আমি এখনো বলতে পারছি না, এটা হবে কি না। তবে আলোচনা আছে, এটা বলতে পারি। যদি এ বছর না হয়, পরের বছর হবে। শুধু মেয়েদের সুবিধার জন্য নয়, মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য এটা হওয়া দরকার। সব জায়গায় হচ্ছে, আমাদের এখানেও হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’