চার মারতে গিয়ে ছক্কা মেরেছেন লোকেশ রাহুল। তাই ভারতকে জেতালেও নিজের সেঞ্চুরির সমীকরণ মেলাতে পারেননি।
চার মারতে গিয়ে ছক্কা মেরেছেন লোকেশ রাহুল। তাই ভারতকে জেতালেও নিজের সেঞ্চুরির সমীকরণ মেলাতে পারেননি।

ছক্কা নয়, চার মারতে চেয়েছিলেন রাহুল

টসে হেরে আগে ফিল্ডিং পাওয়া ভারতীয় দল তখন মাঠে ঢুকবে ঢুকবে করছে। তার আগে সীমানার বাইরে দলের সবাই গোল হয়ে শেষ মুহূর্তের মিটিং সারছেন। মিটিংয়ের মধ্যমণি হিসেবে দেখা গেল রবীন্দ্র জাদেজাকে।

কারণটা অনুমান করা খুব কঠিন কিছু নয়। আইপিএলে দুই দফা মিলিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলছেন। চিপকের এই এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম জাদেজার ঘরের মাঠ। আর ঘরের ছেলে ‘জাড্ডু’র চেয়ে এই মাঠ ভারতীয় দলের আর কে ভালো চেনে!

কতটা চেনেন, সেই প্রমাণ অবশ্য পরে বল হাতেই দিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। বিশেষ করে স্টিভেন স্মিথকে করা ইনিংসের ২৮তম ওভারের প্রথম বলটা। মিডল ও লেগ স্টাম্প বরাবর পিচ করে বড় টার্ন নিয়ে স্মিথের অফ স্টাম্পের বেল উড়িয়ে দেওয়া বলটা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা বল কি না, সেই আলোচনা হতেই পারে।

চতুর্থ উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি গড়েছেন কোহলি–রাহুল। এই জুটিতেই শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ভারত

স্মিথ তখন মারনাস লাবুশেনকে নিয়ে ৭৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়া ইনিংস মেরামতের কাজ করছিলেন। স্মিথের পর সেই লাবুশেনও হলেন জাদেজার শিকার। এরপর ফিরিয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারিকেও। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট জাদেজার। অস্ট্রেলিয়াকে যে মাত্র ১৯৯ রানে আটকে রাখল ভারত, তাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তো তাঁরই।

চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলে হওয়ার পুরো সুবিধা যে এ ম্যাচে পেয়েছেন, সেটি স্বীকার করেছেন জাদেজাও। ইনিংস বিরতিতে খেলা সম্প্রচারকারী টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাঁহাতি এই স্পিনার বলেছেন, ‘আমি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলি। তাই এখানে কন্ডিশন কী রকম থাকবে, সেটা খুব ভালোভাবে জানি। যখন উইকেট দেখছিলাম, তখনই ভেবেছিলাম যে আজ ২-৩টা উইকেট পেতে পারি আমরা। সৌভাগ্যক্রমে সেটা পেয়েছি।’

৩ উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা

ভাগ্যের সাহায্য তো মাঝেমধ্যে লাগেই। তবে উইকেট বুঝে সেখানে সে অনুযায়ী বোলিং করতে পারাটাও বড় গুণ। জাদেজা কীভাবে সেটা করেছেন, বললেন নিজেই, ‘আমি শুধু স্টাম্পে বল করার চেষ্টা করেছি। টার্ন ছিল পিচে। তবে কোন বল পড়ে সোজা যাবে আর কোন বল ঘুরবে, সেটা বোঝা কঠিন ছিল। অনেক বল হঠাৎ করে ঘুরছিল আজকে (গতকাল)। আমি গতি মেশানোর চেষ্টা করেছি।’

এ রকম উইকেটে রান তাড়া করতে গেলে কী করতে হবে, সেটাও সতীর্থদের বলেছেন জাদেজা, ‘মাঠে নেমে স্রেফ সাধারণ ক্রিকেট খেলতে হবে। চমকপ্রদ কিছু করার প্রয়োজন নেই। তাহলেই সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে।’

তাড়া করতে নেমে ভারতীয় টপ অর্ডার অবশ্য জাদেজার সেই পরামর্শ কাজে লাগানোর আগেই হ্যাজলউড-স্টার্কের তোপে ধসে গেছে। রোহিত শর্মা, ইশান কিষান ও শ্রেয়াস আইয়ার কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। তবে এরপর যে ব্যাটিংটা দরকার ছিল, সেটা করেছেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই দুজন মিলে গড়েছেন ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটি।

শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে যখন মাঠ ছাড়ছেন, লোকেশ রাহুল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থেকে অপরাজিত। সেঞ্চুরিও হতে পারত, যদি ৯১ রানে থাকা অবস্থায় তাঁর ছক্কায় ভারত ম্যাচ না জিতে যেত। ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়ার পর ইয়ান বিশপের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাহুল সেটাই বলেছেন, ‘আমি হিসাব করছিলাম কীভাবে সেঞ্চুরিটা করতে পারি। ওই শটটা ছক্কা না হয়ে চার হলে আমি আরেকটা শট খেলার সুযোগ পেতাম। পরের শটে ছক্কা হলেই হতো। আশা করি পরে কখনো সেঞ্চুরি পাব।’

ভারতও নিশ্চয়ই রাহুলের কাছ থেকে এমন ইনিংস আরও চাইবে, চাইবে তাঁর সেঞ্চুরিও।