চোট কাটিয়ে তিনি আগেও খেলায় ফিরেছেন। তবে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের এবারের ফেরার অপেক্ষাটা ছিল দীর্ঘদিনের। ৩ মে শুরু জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে ১৮ মাস পর তিনি শুধু জাতীয় দলেই ফিরছেন না, দীর্ঘদিন পর ফিরছেন ক্রিকেট খেলাটাতেই।
একের পর এক চোট সাইফউদ্দিনকে খেলা থেকেই দূরে ঠেলে দিয়েছিল। আগেই বলা হয়েছে, চোটের সঙ্গে সাইফউদ্দিনের ‘সখ্য’ অনেক আগে থেকে। পিঠের ব্যথা কখনো আসে, কখনো যায়। ২৭ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিকেটটা এভাবেই খেলে আসছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে পিঠের পুরোনো ব্যথা একটু বেশিই ভোগাচ্ছিল তাঁকে। ফর্মও ছিল না পক্ষে। জাতীয় দল থেকে তাঁর বাদ পড়াটাও তাই ছিল প্রত্যাশিত। সেবার বিপিএল খেলা হয়নি। ‘ব্যাটসম্যান’ হিসেবে খেলার আকুতি জানালেও কোনো দল আগ্রহ জানায়নি।
চোটের সঙ্গে লড়াই করে গত প্রিমিয়ার লিগে খেলেন অলরাউন্ডার হিসেবে। পিঠের চোটের স্থায়ী সমাধানের জন্য সাইফউদ্দিনকে পাঠানো হয় কাতারের বিখ্যাত এসপেটার স্পোর্টস মেডিসিন হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে তিন মাসের পুনর্বাসনের পর মাঠে ফেরার ছাড়পত্র পান সাইফউদ্দিন। গত অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগে তাঁকে ‘ব্যাটসম্যান’ হিসেবে খেলার সবুজসংকেত দেয় বিসিবির মেডিকেল বিভাগ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোনো দল সেবারও ব্যাটসম্যান সাইফউদ্দিনকে দলে নেয়নি।
অবশেষে সাইফউদ্দিন ফিরেছেন গত বিপিএল দিয়ে, টুর্নামেন্টের মাঝপথে যোগ দেন ফরচুন বরিশালে। প্রত্যাবর্তনটা তিনি রাঙিয়েছেন ব্যাট-বলে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে বরিশালের বিপিএল শিরোপা জেতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে। বিপিএলে ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে গত মার্চের শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে জাতীয় দলে ফেরার দাবিটাকে জোরালো করে তোলেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু নির্বাচকেরা চাইলেন ঘরোয়া পর্যায়ে টানা ক্রিকেটের চাপ সাইফউদ্দিন কতটা নিতে পারেন, আরও কিছুদিন সেটি দেখতে। প্রিমিয়ার লিগে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হয় ১০ ম্যাচ, সেখানে তাঁর শিকার ১৩ উইকেট। ফিটনেসে সন্তুষ্ট হওয়ায় নির্বাচকেরা অবশেষে সাইফউদ্দিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের দলে রেখেছেন।
কিন্তু সাইফউদ্দিনের প্রতিটি প্রত্যাবর্তনেই যে স্বস্তির সঙ্গে থাকে শঙ্কাও! টানা খেলে যেতে পারবেন তো, সেই শঙ্কা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চোটে পড়ে সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেবেন না তো, সেই শঙ্কা। কাতার থেকে ফেরার পর সাইফউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করা বিসিবির ফিজিও মোজাদ্দেদ আলফা সানিকে অবশ্য এবার বেশ আশাবাদী মনে হচ্ছে, ‘ওর কোমরের হাড় ভাঙা ছিল, যেটাকে আমরা স্ট্রেস ফ্র্যাকচার বলি। পেসারদের অ্যাকশন কিংবা লোডিংয়ের কারণে, এই সমস্যা হতে পারে। সাইফউদ্দিনের ক্ষেত্রে অ্যাকশনের কারণে সমস্যা হচ্ছিল। আমরা অ্যাকশন নিয়ে কিছুটা কাজ করেছি। অন্য বিষয়গুলোয় ওর সমস্যা নেই। শুধু বোলিংয়ের একটা বিশেষ পজিশনে গেলেই চাপটা সৃষ্টি হয়। সেটাই এড়ানোর চেষ্টা করেছি।’
সাইফউদ্দিনের খেলায় ফেরা নিয়ে বিসিবির মেডিকেল বিভাগে কঠোর বিধিনিষেধও ছিল। সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে বোলিং করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। যে কারণে বিপিএলের শুরু থেকে তাঁকে পায়নি বরিশাল। মোজাদ্দেদ জানালেন, ওই সময়ের ধৈর্যের ফলই এখন পাচ্ছেন সাইফউদ্দিন, ‘আমরা অনেক সময় নিয়েছি। কারণ, কিছু হাড় জোড়া লাগার ব্যাপার ছিল। এর আগে যতবার ওর পুনর্বাসন হয়েছে, তখন একটু তাড়াহুড়ো হয়েছে। এবার সময় নিয়ে কাজটা করেছি যেন সে লম্বা সময় সুস্থ থাকতে পারে।’
সে ক্ষেত্রে এটি হতে পারে সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় জন্ম। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁর মতো একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অপেক্ষা ছিল দীর্ঘদিনের। তাঁর মতো একজন ক্রিকেটার যেকোনো দলের একাদশ সমন্বয়ে স্বস্তি এনে দিতে পারেন। আর ব্যাটিং অর্ডারের সাতে বা আটে সাইফউদ্দিনের থাকা মানেই ব্যাটিং অর্ডারটা আরেকটু লম্বা ও শক্তিশালী হওয়া। নতুন ও ডেথ ওভারে তাঁর বোলিংও অধিনায়কের আস্থার জায়গা হতে পারে। ২০ ওভারের খেলায় সুস্থ সাইফউদ্দিনকে তাই কে না পেতে চাইবেন!