মিরপুর টেস্ট শুরুর আগে মাইলফলকটি থেকে ৩৯ রান পিছিয়ে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সেটি হয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু ১১ রানে আউট হওয়ায় অপেক্ষা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসের। দূরত্ব ছিল ২৮ রানের।
আজ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে শেষ সেশনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬তম ওভারে ডেন পিটকে চার মেরে সে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলেন মুশফিক। ব্যক্তিগত ২৯ রানে পৌঁছানোর পাশাপাশি দেখা পান সেই মাইলফলকটিরও—বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রানের চূড়া ছুঁলেন মুশফিক।
বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট দলে ম্যাচসংখ্যা ও অভিষেকের সময় বিচারে মুশফিকই অভিজ্ঞতম। ৯৩ টেস্টের (এই ম্যাচসহ) অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুশফিকের এই সংস্করণে অভিষেক ২০০৫ সালে। ক্যারিয়ারের ১৭২তম ইনিংসে এসে ৬ হাজার রানের দেখা পেলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ৭৪তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন মুশফিক।
এই তালিকায় দ্রুততম ব্যাটিংয়ে শেষ কথা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান। ৬৮তম ইনিংসে মাইফলকটির দেখা পেয়েছিলেন অবিশ্বাস্য ৯৯.৯৪ ব্যাটিংগড়ের মালিক। ১৫০তম ইনিংসে একই মাইলফলকের দেখা পাওয়া ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচ দ্রুততমের তালিকায় ৫০তম।
তবে ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে মুশফিকের মিল রয়েছে একটি হিসাবে। ১৯ বছর ৪ মাস ২৬ দিন লেগেছিল ডনের এই মাইলফলকে পৌঁছাতে। মুশফিকেরও লাগল ১৯ বছর, সঙ্গে ৪ মাস ও আরও ২৬ দিন। তবে এই মিলের যৌক্তিকতা নেই বললেই চলে।
২০ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫২ টেস্ট খেলা ব্র্যাডম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৩৮ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে ১৯৪৬ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত টেস্ট খেলতে পারেননি। অর্থাৎ ৮ বছরের বেশি সময় টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছে ব্র্যাডম্যানকে।
মুশফিকের ১৯ বছর লাগার পেছনে বড় দলগুলোর খেলোয়াড়দের তুলনায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কম টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়াও একটি কারণ। তাঁর নিজের কথাই ধরুন, ২০০৫ সালে অভিষেকের পর ২০০৯ পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১৬টি টেস্ট। ২৩.৪ গড়ে করেছেন ৬৭৯ রান। সেঞ্চুরি নেই।
২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন মুশফিক। এ সময় ৩৮.৮ গড়ে ৫৩ টেস্টে করেছেন ৩৫৩১ রান। সেঞ্চুরি ৬টি, সর্বোচ্চ অপরাজিত ২১৯। এরপর ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত ২৪ টেস্টে ৪৯.৮ গড়ে করেছেন ১৭৯৩ রান। সেঞ্চুরি ৫টি।
মিরপুরে আজ দ্বিতীয় দিনে আলোর স্বল্পতায় খেলা একটু আগেভাগেই শেষ করেন আম্পায়াররা। খেলা আরও কিছুক্ষণ চললে হয়তো আরও একটি মাইফলকের দেখা পেতেন ৩১ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক। দরকার ছিল মাত্র ২ রানের। সেটি হলেই তিন সংস্করণ মিলিয়ে এক ভেন্যুতে ৫ হাজার রানের মাইলফলক গড়তেন মুশফিক। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আপাতত ১৫৫ ম্যাচে (১৬৯ ইনিংস) ৪৯৯৮ রান মুশফিকের, কাল টেস্টের তৃতীয় দিনে হয়তো মাইলফলকটি ছুঁয়েও ফেলবেন। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এক ভেন্যুতে এত বেশি রান নেই আর কারও।
মজার বিষয়, এই তালিকায় শীর্ষ চারজনই বাংলাদেশি এবং ভেন্যুও একই—শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। সেখানে ১৪৪ ম্যাচে (১৫৭ ইনিংস) ৪৭৮৬ রান নিয়ে দুইয়ে সাকিব আল হাসান। ১২৪ ম্যাচে (১৩৯ ইনিংস) ৪৫২৯ রান নিয়ে তিনে তামিম ইকবাল। চতুর্থ মাহমুদউল্লাহ এই ভেন্যুতে ১৩৬ ম্যাচে (১৩০ ইনিংস) ৩৫৯৭ রান করেছেন।
তবে শুধু টেস্ট বিচারে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় মুশফিক শীর্ষ দশেও নেই। কলম্বোর এসএসসি গ্রাউন্ডে ২৭ টেস্টে ২৯২১ রান নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে লঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে। তালিকার দুইয়েও জয়াবর্ধনে—গল স্টেডিয়ামে ২৩ ম্যাচে করেছেন ২৩৮২ রান। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২৭ টেস্টে ১৮৫৩ রান নিয়ে তালিকায় ১১তম মুশফিক। তবে শীর্ষ দশের তালিকায় বর্তমান সময়ের ক্রিকেটার মাত্র তিনজন—ম্যাথুস, জো রুট ও দিমুথ করুণারত্নে। অর্থাৎ বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় মুশফিক চতুর্থ। গলে ৩১ ম্যাচে ২০৮১ রান করে এই তালিকায় শীর্ষে লঙ্কান অলরাউন্ডার ম্যাথুস। ২২ ম্যাচে ২০২২ রান করে লর্ডসের ‘রাজা’ রুট দুইয়ে। গলে ২২ ম্যাচে ১৯৮৩ রান নিয়ে তিনে করুণারত্নে।
টেস্টে সর্বোচ্চ রানে মুশফিককে ধরতে বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানদের বেশ কষ্টই হবে। ১৭২ ইনিংসে মুশফিকের রানসংখ্যা ৬০০৩। ১৩৪ ইনিংসে ৫১৩৪ রান করা তামিম এই তালিকায় দ্বিতীয় হলেও সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন গত বছর এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ৩৫ বছর বয়সী তামিম এই সংস্করণে আর ফিরবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
১৩০ ইনিংসে ৪৬০৯ রান করা সাকিবের এই টেস্ট খেলে অবসর নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে কানপুর টেস্টই হয়ে গেছে সাকিবের সর্বশেষ টেস্ট। ১২৩ ইনিংসে ৪২৬৯ রান নিয়ে চতুর্থ মুমিনুল হক। মুশফিকের সঙ্গে তাঁর ১৭৩৪ রানের ব্যবধান।