সিলেটে টি–টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে অনুশীলনে রশিদ খানরা
সিলেটে টি–টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে অনুশীলনে রশিদ খানরা

সিলেট থেকেই শুরু রশিদদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি

প্রশ্নটা খুব মন দিয়ে শুনছিলেন রশিদ খান। কিন্তু উত্তর দিতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে রিভলভিং চেয়ারে বসে ছিলেন, সেটি কোনো কারণে নিচে দেবে এল। রশিদও নেমে গেলেন নিচের দিকে। এতটাই যে সামনে থাকা বিভিন্ন চ্যানেলের মাইক্রোফোনের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছিল তাঁর মুখটাই।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দৌড়ে গিয়ে চেয়ার ঠিক করে দিলেন বিসিবির এক কর্মী। ঠিকঠাক হয়ে বসার পর রশিদের উত্তরটা হলো রসিকতা মেশানো, ‘হয়তো চেয়ার আপনার প্রশ্নটা পছন্দ করেনি (হাসি)।’

রসিকতা, তবে তাতেও যেন কোথাও একটা কর্তৃত্বের সুর। এরপর পুরো সংবাদ সম্মেলনেই রশিদের কথা থেকে মনোযোগই সরানো যাচ্ছিল না। আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক, একটা নতুন সিরিজ শুরুর আগে নিজের দল ও প্রতিপক্ষ নিয়ে যা যা বলার কথা, ঠিক সেসবই বলছিলেন তিনি। কিন্তু আফগান অধিনায়কের সেই স্বাভাবিক কথাগুলোতেই অদ্ভূত এক সম্মোহনী শক্তি ছিল, যেটি তাঁর মনোযোগী স্রোতা হতে বাধ্য করল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে।

সংবাদ সম্মেলনে রশিদ খান

এ বছরটা ওয়ানডে বিশ্বকাপের হলেও আগামী বছরে আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী জুনেই যৌথভাবে সেটি আয়োজন করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সামনে রেখেও তাই সিলেটে আগামীকাল শুরু বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টি-টোয়েন্টির সিরিজটি আফগানিস্তানের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির মতোই। সিরিজের ফল নিয়ে তাই ভাবছেন না রশিদ, ‘এটা আমাদের জন্য বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। আমি ফল নিয়ে ভাবছি না, দলের ওপর চাপও দিতে চাই না। আমরা প্রস্তুতি নেব এক শ ভাগ, তাহলেই বেশির ভাগ সময় আপনি সঠিক ফল পাবেন। মূল লক্ষ্য হলো প্রতিদিনই উন্নতি করা।’

দলের উন্নতির জায়গাটাও জানিয়ে দিয়েছেন রশিদ। স্পিন ও পেসের সমন্বয়ে গড়া আফগান বোলিং নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান আছেন, যা একটু ঘাটতি, সেটা মিডল অর্ডারে। রশিদের দৃষ্টি সেই ঘাটতি দূর করার দিকেই, ‘আমাদের দক্ষতা আছে, প্রতিভাও আছে। এখন ব্যাটিং ভালো করাটা জরুরি। যদি মাঝের ওভারের জন্য কয়েকজন ব্যাটসম্যান পেয়ে যাই, তাহলে আমরা আরও ম্যাচ জিতব।’

সে জন্য আফগানদের নিয়মিত ভালো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে হবে। যদিও সে সুযোগ তারা খুব একটা পায় না বললেই চলে। তবে রশিদের কাছে সে সমস্যারও সমাধান আছে, ‘ওয়ানডেতে যারা ভালো খেলেছে, তারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিদেশি লিগ খেলে। গুরবাজ ও ইব্রাহিম সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উন্নতি করেছে। আগামী ৩-৪ বছরে এই জায়গাতে আমরা আরও ভালো করব। আমি খুবই রোমাঞ্চিত; কারণ, আমরা ভালো ফাস্ট বোলারও পাচ্ছি। এখন স্পিনাররা ভালো ভিত্তি পাবে।’

অনুশীলনে রশিদ খানরা

সংবাদ সম্মেলনে এসেছে আফগানিস্তান ক্রিকেটারদের প্রতিভার প্রসঙ্গও। রশিদও বললেন, আফগানিস্তানের ক্রিকেটের উত্থানে বড় ভূমিকা এই সহজাত প্রতিভাদেরই, ‘ছোট বাচ্চারা খেলা শুরু করলে তাদের প্রথমে মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো হয়। এরপর তারা ভালো ক্রিকেটারে পরিণত হয়। তাদের মধ্যে যারা প্রতিভাবান, তারাই হয়ে ওঠে সেরা ক্রিকেটার।’

আফগানিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট এক সময় অতটা শক্তিশালী ছিল না। নবীন ক্রিকেটারদের ওপরে উঠে আসার সুযোগটাও তাই ছিল সীমিত। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, যেটা আশাবাদী করছে ক্রিকেটের ছোট দেশের বড় তারকা রশিদ খানকে, ‘একটা সময় আমাদের কোনো সুযোগ–সুবিধা ছিল না, ঘরোয়া ক্রিকেটও ছিল না ক্রিকেটারদের সহজাত প্রতিভাই আফগানিস্তানকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এখন আমাদের সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা আছে। আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগ যখন আফগানিস্তানে চলে আসবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো শক্তিশালী হবে, তখন দেখবেন আফগানিস্তান দলও অন্য রকম ক্রিকেট খেলবে।’