ফাইনালে কামিন্সের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন অশ্বিন
ফাইনালে কামিন্সের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন অশ্বিন

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কৌশলে ‘বিস্মিত’ ও ‘হতবাক’ অশ্বিন, করলেন প্রশংসা

বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ানদের কৌশল দেখে ‘বিস্মিত’ ও ‘হতবাক’ হয়ে গিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়ানরা বোলিং নেবে, এমনটি একেবারেই ভাবতে পারেননি তিনি। দুই ইনিংসের মাঝে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির দেওয়া ব্যাখ্যা শুনেও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অশ্বিন। ম্যাচের কৌশল ও এর বাস্তবায়নের কারণে শিরোপা তাদেরই প্রাপ্য, এমনও বলেছেন ভারতের অফ স্পিনার।

বিশ্বকাপ দলে থাকলেও চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের প্রথম ম্যাচটিই শুধু খেলেছিলেন অশ্বিন। তবে বিশ্বকাপের পর টুর্নামেন্টের বিশ্লেষণ করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি। সেখানেই ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত ‘মাস্টারক্লাস’-এর দারুণ প্রশংসা করেছেন অশ্বিন। বলেছেন, ‘ফাইনালে কৌশলগত দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ছিল অসাধারণ। তাদের ফাইনালে ট্যাকটিকস দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম।’

তাঁর সে বিস্ময়ের শুরু টসে জিতে নেওয়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই। অশ্বিন বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস বলে, বড় ফাইনালে টসে জিতে তারা বলে, “আমরা ব্যাটিং করব, মেট”। আমি প্রার্থনা করছিলাম, অস্ট্রেলিয়া সেটিই করুক। কারণ অনেকেই বুঝবে না, আহমেদাবাদের (পিচের) মাটি ছিল ওডিশার মতো, মানে দেশের পূর্ব দিকে যেকোনো জায়গার মাটি নিলে এমন আচরণই করবে। অন্য যেকোনো পিচে যদি হাঁটুসমান বাউন্স থাকে, এখানে আরও নিচে থাকে। বাউন্স কম থাকবে, কিন্তু মাটি ভাঙবে না, কারণ এটি ময়েশ্চার ধরে রাখবে।’

অনুশীলনে রবিচন্দ্রন অশ্বিন

ইনিংসের মাঝে পিচ ভাঙবে কি না, সেটি পরীক্ষা করতে নেমেছিলেন অশ্বিন। বেইলির সঙ্গে তাঁর দেখা সেখানেই। কেন অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং নিল না, এর জবাবে বেইলি অশ্বিনকে বলেছেন, ‘আমরা অনেক দিন আইপিএল ও দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছি (এখানে)। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, লাল মাটির হলে পিচ ভাঙত, কিন্তু কালো মাটির পিচে ফ্লাডলাইটে ব্যাটিং সহজ হয়। লক্ষ্ণৌয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে লাল মাটির পিচ ছিল, যেখানে শুধু সিম হয়েছে তা নয়, সময় গড়ানোর সঙ্গে টার্নও মিলেছে। লাল মাটির পিচে শিশির তেমন প্রভাব ফেলে না, কিন্তু কালো মাটির পিচে বিকেলে টার্ন ভালো থাকে, রাতে একদম ‘পাটা’ হয়ে যায়, যেন সিমেন্ট দিয়ে তৈরি।’

অশ্বিন বলেন, ‘আমি এ ব্যাখ্যা শুনে একেবারে হতবাক হয়ে গেছি। দেখুন, আইপিএল ও ভারতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে ঠেকেছে। তারা একেবারে ঠিকঠাক পিচ পড়তে পারছে।’ পিচ বদলানোর অভিযোগকেও হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘অন্য দেশের সাংবাদিকেরা হয়তো মন্তব্য করছেন, পিচ বদলানো হয়েছে বা এমন কিছু, কিন্তু এগুলো হাস্যকর। ভারত একটি বিশেষ দেশ। ভারতের বিভিন্ন জাগায় ভিন্ন ভিন্ন মাটি থাকে—কালো মাটি, একটু কম কালো মাটি, কালো, কাদামাটি ও লাল মাটির মিশ্রণ, একেবারে লাল মাটি, বালুমিশ্রিত লাল মাটি, আরও অনেক কিছু। এক আহমেদাবাদেই তিন-চার ধরনের মাটির পিচ আছে। ফলে জর্জ বেইলি পিচ নিয়ে আমাকে যা বলেছে, তাতে আমি হতবাক হয়ে গেছি।’

শুধু টসে জিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বোলিংয়েরও দারুণ প্রশংসা করেন অশ্বিন, ‘ওয়ানডে বোলার হিসেবে প্যাট কামিন্স ভুগছিল। কিন্তু ফাইনালের ৪-৫ ম্যাচ আগে থেকে তার ৫০ শতাংশ বলই ছিল কাটার। আমি জানি না, টেলিভিশনে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে কি না, কিন্তু সে অফ স্পিনারের মতো ফিল্ডিং সাজিয়েছিল (ফাইনালে)—অফ সাইডে ৪ জন, অন সাইডে ৫ জন। ১০ ওভারের পুরো স্পেলে সে স্টাম্প লাইনের (বাইরে) ৬ মিটারের মধ্যে মাত্র ৩টি বল করেছে, মূলত ব্যাটারকে ড্রাইভ করার মতো ফুললেংথেও করেনি। ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছে।’

অশ্বিন এরপর যোগ করেন, ‘স্টাম্প লাইনের বলের জন্য ৫ জন ফিল্ডার ছিল—স্কয়ার লেগ, মিডউইকেট, ডিপ স্কয়ার লেগ, মিড অন ও লং অন। পুরো ১০ ওভারই সে করেছে মিড অফে কোনো ফিল্ডার না রেখেই। টসে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি ম্যাচজয়ী স্পেল করেছে কামিন্স।’  

শিরোপাটি অস্ট্রেলিয়ার প্রাপ্য, মনে করেন অশ্বিন

ওয়ানডে ম্যাচে এমন বোলিং মোটেও সহজ নয়, অশ্বিন মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘টেস্ট ম্যাচে হয়তো করা যায়, লেগ সাইডে কয়েকটি বল গেলেও আম্পায়ার ওয়াইড দেবেন না। কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে কোনো ওয়াইড না দিয়ে, ব্যাটসম্যানকে ড্রাইভ করতে না দিয়ে এমন করাটা দুর্দান্ত। দুর্দান্ত কৌশল এবং বাস্তবায়ন ছিল এটি, (শিরোপা) তাদের প্রাপ্য।’

অস্ট্রেলিয়ানদের এমন কৌশল ও বাস্তবায়নেই ভেস্তে গেছে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। অশ্বিনের ভাষায়, ‘ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে আমরাই জিতব। কিন্তু ম্যাচ শেষের পর একেবারে ভেঙে পড়েছি আবেগের দিক দিয়ে। সাধারণত ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই মানুষের প্রতিক্রিয়াটা টের পাই। কিন্তু আমাদের—খেলোয়াড়দের এটি আঘাত করে ঘুম থেকে ওঠার পর। “এটা এমন হতে পারত”, এমন দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে চোখের সামনে, এমনকি স্বপ্নেও হানা দেয়।’