আবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেই আটকে গেছে আয়ারল্যান্ড
আবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেই আটকে গেছে আয়ারল্যান্ড

আরেকটি বিশ্বকাপেও অনুপস্থিত আয়ারল্যান্ড, সামনে কী

এ বছর ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে খেলতে হলে ১০ দলের বাছাইপর্ব শেষ করতে হবে শীর্ষ দুইয়ে থেকে, মানে সুপার সিক্স পেরিয়ে যেতে হবে ফাইনাল পর্যন্ত। এ টুর্নামেন্টে আবার আছে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, জিম্বাবুয়ের মতো পূর্ণ সদস্য দল—যাদের সাম্প্রতিক সময়ে উন্নতি চোখে পড়ার মতো। আছে স্কটল্যান্ডের মতো ‘অভিজ্ঞ’ সহযোগী দল, যারা প্রায় প্রতিবারই প্রতিপক্ষকে কঠিন লড়াই উপহার দেয় এমন টুর্নামেন্টে। এরকম ফরম্যাটের টুর্নামেন্টে যদি গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচেই ওমানের মতো দলের কাছে হারেন, তাহলে বেরিয়ে যাওয়ার দুয়ারে তো এক পা দিয়েই রাখলেন! এরপর থেকে আপনার ভাগ্য ঝুলবে সুতোর ওপর।

আয়ারল্যান্ড অবশ্য বেশিক্ষণ ঝুলে থাকেনি। ওমানের পর স্কটল্যান্ডের কাছে হার, এরপর গতকাল শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে তারা। ফলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে অনুপস্থিত থাকবে দলটি। ২০০৭ সালে প্রথমবার এসেই বিশ্বকাপে চমক দেখানো দলটি পরের আসরেও হারিয়েছিল ইংল্যান্ডের মতো দলকে। ২০১৫ সালে আইরিশদের কবলে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ১০ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করে আয়ারল্যান্ডের মতো দলগুলোর গলা এক রকম চেপেই ধরে আইসিসি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে তো সেটিই মেনে নিতে হবে। আয়ারল্যান্ডও স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছে তা। তবে বাছাইপর্বের এই বাধাটা পেরোতে পারছে না। আয়ারল্যান্ডের ভাগ্য দেখুন। সহযোগী দেশ হিসেবে টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলার পর যখন আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পেল দলটি, এরপরই টানা দুটি বিশ্বকাপে অনুপস্থিত থাকতে হচ্ছে!

অথচ বিশ্বকাপ সুপার লিগের শেষ সিরিজেও সরাসরি ভারতে যাওয়ার সুযোগ ছিল তাদের। যদিও কাজটি ছিল বেশ কঠিন—বাংলাদেশকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রায় প্রতি ম্যাচেই হারাতে হতো বড় ব্যবধানে। সেটি দূরের কথা, আয়ারল্যান্ড জেতেনি একটি ম্যাচও। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পার হবে কি, আয়ারল্যান্ড তো ওয়ানডেতে হারের বৃত্ত থেকেই বেরোতে পারছে না। এ নিয়ে টানা সাতটি ম্যাচ হারল তারা, ২০২০ সালের জুলাইয়ের পর থেকে ওয়ানডেতে তাদের জয় মাত্র ৮টি।

এ নিয়ে টানা সাতটি ওয়ানডে হারল আয়ারল্যান্ড

তবে বাছাইপর্বে আয়ারল্যান্ড যেভাবে হেরেছে, সেটি তাদের হতাশা বাড়িয়ে দেওয়ারই কথা। ওমানের কাছে ২৮১ রান করে সেটিকে যথেষ্ট মনে করেছিল, অথচ ম্যাচটি হারতে হয় ৫ উইকেটে। স্কটল্যান্ডকে ২৮৭ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর ১৫২ রানে তুলে নিয়েছিল ৭ উইকেট, সেটি তারা হেরে বসে শেষ বলে গিয়ে

সুপার সিক্সে না যাওয়ার হতাশা গতকাল ম্যাচশেষে লুকাননি অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নি, ‘সুপার সিক্সে না যাওয়াটা অনেক হতাশার। তবে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলাটা গর্বের। পরের ম্যাচও সেটি নিয়েই খেলব আমরা।’

কোচ হাইনরিখ ম্যালান অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো দিকে আঙুল তুলতে পারছেন না এমন বিদায়ের পর, ‘কঠিন এক সপ্তাহ গেল। খুবই হতাশার। আমার মনে হয় না একটি বাজে দিক আছে শুধু। কয়েকটি দিক আছে। মেনে নিতে আমাদের সময় লাগবে। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আরও ভালো করতে হবে। আমার মনে হয় না যেভাবে খেলতে চাই, তার ধারেকাছেও ছিলাম শেষ তিন ম্যাচে। অনেক আবেগের ব্যাপার বলে এটি বেশ কঠিন।’

শুধু দল হিসেবে নয়, বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া বোর্ডের জন্যও বড় একটা ধাক্কা হয়েই আসবে আয়ারল্যান্ডের জন্য। বাছাইপর্বে আসার আগে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ক্রিকেট-ঐতিহ্যের কথা ভাবলে, সেটি আইরিশ ক্রিকেটের জন্য মর্যাদার একটি ব্যাপার। তবে অধিনায়ক বলবার্নি তখনোই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের ক্রিকেটের বাস্তবতায় লর্ডসের টেস্টটির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব।

সামনের মাসেই আরেকটি বাছাইপর্ব খেলতে হবে আয়ারল্যান্ডকে

এমনিতেই ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড চলছে আইসিসির ফান্ড থেকে ৫০ লাখ ডলার ঋণ নিয়ে। বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া মানে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হওয়া। অংশগ্রহণ করলেই আইসিসির কাছ থেকে একটা অঙ্ক পাওয়া যেত, এরপর বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে স্পনসরের ব্যাপারও তো ছিল। তবে স্বাভাবিকভাবেই এখন সে সব হচ্ছে না। এরপর আছে রাগবি ও ফুটবলের দেশটিতে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপার। আরেকবার বাধাগ্রস্ত হবে সেটিও।

তবে আপাতত আয়ারল্যান্ড দলের এত কিছু ভাবার সময় নেই। জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ করেই তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য। আগামী মাসে স্কটল্যান্ডে হবে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। সেখানে স্বাগতিক স্কটল্যান্ড ছাড়াও তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, ইতালি ও জার্সি। নাম বিবেচনায় আয়ারল্যান্ডই ফেবারিট, এ টুর্নামেন্ট থেকে মূল আসরে যাবেও দুটি দল। কিন্তু জিম্বাবুয়তে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যা হলো, আয়ারল্যান্ড হয়তো বাড়তি সতর্কই থাকবে স্কটল্যান্ডে গিয়ে।

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি অবশ্য ছিল আশাজাগানিয়াই। প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার টুয়েলভে যাওয়া আয়ারল্যান্ড হারিয়েছিল পরবর্তীতে শিরোপা জেতা ইংল্যান্ডকেও। যদিও সর্বশেষ ২৫টি টি-টোয়েন্টির ১৭টিতেই হেরেছে আয়ারল্যান্ড।

তবে এখন তাদের যা অবস্থা, আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেই আটকে গেলে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট হয়তো এমনভাবে হোঁচট খাবে, যেটি সামলাতে লেগে যাবে আরও অনেক দিন। ২০২৭ সালের আগে অন্তত ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না তাদের, সেটিই তো চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা আরও।