নিউজিল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ায় উপমহাদেশীয় দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী? উত্তরটা মনে হয় আপনার ঠোঁটের ডগায় এসে আছে—পেস আর বাউন্স। অথচ ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কিনা হাঁসফাঁস করলেন স্পিনে!
পাওয়ারপ্লেতে কিউই পেসারদের মোটামুটি সামাল দিয়ে ফেলার পর বাংলাদেশের ইনিংস তো পথ হারিয়ে ফেলল দুই কিউই স্পিনার ইশ সোধি ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের বোলিংয়েই।
পুরস্কার বিতরণীতে এসে সাকিব আল হাসানও যেন খুঁজছিলেন এর ব্যাখ্যা, 'শুরুটা আমরা ভালোই করেছিলাম। এরপর মিডল ওভারে ওদের কোয়ালিটি স্পিনারদের সামলাতে পারিনি।'
কোয়ালিটি স্পিনার? হ্যাঁ, ইশ সোধি অবশ্যই এই স্বীকৃতি পেতে পারেন। ৩১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৭৭তম ম্যাচে আজ ১০০ টি-টোয়েন্টি উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন এই লেগ স্পিনার। কিন্তু ব্রেসওয়েল? এই অফ স্পিনারের মূল পরিচয় তো ব্যাটিং অলরাউন্ডার। আরেকটি পরিচয়ও আছে। তিনি উইকেটকিপিং–ও করেন। অফ স্পিন বোলিংয়ে অনিয়মিতই। পুরস্কার বিতরণীতে এসে নিজেও ব্যাটসম্যান–সত্ত্বাটাকেই বড় করে দেখালেন। কিন্তু এই ম্যাচে ব্যাটিংই তো করেননি, ব্রেসওয়েল ম্যাচ–সেরা হয়েছেন মাত্র ১৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে। অষ্টম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর যখন ১ উইকেটে ৫৩, লিটন দাসকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে বেপথু করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংসকে। পরে আউট করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলীকেও।
গতকাল যে উইকেটে পাকিস্তান–নিউজিল্যান্ড ম্যাচ হয়েছিল, সেই উইকেটেই আজ বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড। ব্যবহৃত উইকেটে স্পিনারদের একটু বাড়তি সুবিধা পাওয়ারই কথা। কিন্তু তা এমন কিছু ছিল না, যার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরিচয় নেই। সোধি ও ব্রেসওয়েল দুজনই 'ইনটু দ্য উইকেট' বল করেছেন। হ্যাগলি ওভালের আড়াআড়ি বাউন্ডারি অনেক বড় বলে নিচু হয়ে আসা স্পিন বোলিংয়ে বাউন্ডারি মারাও সহজ ছিল না। কিন্তু সেই চেষ্টা করতে গিয়েই আউট হয়েছেন বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। সাকিব নিজেও যে ভুলটা স্বীকার করলেন, 'আমরা একটু বেশিই বড় শট খেলার চেষ্টা করেছি। সেটা করতে গিয়ে বাড়তি কিছু উইকেট হারিয়েছি। '
প্রথম ম্যাচে না খেলে আলোচনায় ছিলেন সাকিব, এই ম্যাচে ৭ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এর আগে মাত্র দুবারই ৭ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন, দুবারই ২০১৮ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে। ম্যাচ শেষে এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে সাকিব বলেছেন, 'আমার ওপরেই নামার কথা ছিল। কিন্তু ওদের দুই স্পিনারের বোলিংয়ের সময় দুজন বাঁহাতি (একজন আফিফ হোসেন) ক্রিজে রাখতে চাইনি। আমরা বাঁ হাতি-ডানহাতি সমন্বয়টা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আজ কাজে লাগেনি।'
বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের কথা উঠলে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে টপ অর্ডার ব্যর্থতার বিষয়টি। জাতীয় দলে ফেরার পর টানা ৪ ম্যাচ ব্যর্থ হওয়ার পর আজ বাদ পড়েন সাব্বির রহমান। তাঁর বদলে দলে আসা নাজমুল হোসেন ৩৩ রান করে বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার। তাঁর সৌজন্যে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ৪১ রান। কিন্তু এই ভিত্তিটা কাজে লাগাতে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানে। সেটিও সম্ভব হতো না যদি না নুরুল হাসানের ব্যাট থেকে শেষের দিকে ১২ বলে ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংসটি না আসত।
কিন্তু নুরুলের জন্য আরও ভালো মঞ্চ গড়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। সাকিবের আক্ষেপ সেখানেই, 'এটা নিয়ে অনেক কথাই বলছি। আমাদের টপ থ্রি থেকে একজনকে ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে হবে। আমরা এটাই চাই। এখনো সেটা হচ্ছে না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে যাব পরের দুই ম্যাচে। গত দুই ম্যাচে বোলাররা ভালো করেছে। ফিল্ডাররাও তাদের সমর্থন দিচ্ছে। এই দুটি জায়গায় আমরা ভালো করছি। ব্যাটিংয়ে উন্নতি দরকার। সেটা নিয়েই কাজ করে যাব।'
টপ থ্রি থেকে একজনের ১৫–১৬ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করার যে চাওয়ার কথা বলেছেন সাকিব, তা টি–টোয়েন্টিতে ভালো করার পূর্বশর্তগুলোর একটি। মিরাজ দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে যাওয়ার পর তা পূরণ করতে হতো নাজমুল বা লিটনকে। কিন্তু ৯ ওভার শেষে দুজনই তো ড্রেসিংরুমে।
ত্রিদেশীয় এই সিরিজে বাংলাদেশের আরও দুটি ম্যাচ বাকি। পকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের আরও একবার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকছে। বিশ্বকাপের আগে জয়ের আত্মবিশ্বাস অর্জনের ব্যাপার আছে। সাকিব সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন, 'হারতে থাকলে তো দলের এনার্জি ধরে রাখা কঠিন। তবে বিশ্বকাপের জন্য আমাদের পরের দুটি ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জিততে পারলে ভালো ছন্দ নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে পারব।'
প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স মনে রাখলে তা অবশ্য একটু কষ্টকল্পনাই মনে হয়!