ডানেডিন থেকে নেলসন, ভেন্যু ভিন্ন হলেও ওয়ানডে সিরিজের দুটি ম্যাচই বাংলাদেশ দলকে প্রায় একই অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজের দুটি ম্যাচেই নাজমুল হোসেনের দলের পরিণতি একই। হারের ধরনও প্রায় অভিন্ন। ডানেডিনে আগে ব্যাটিং করে হার, নেলসনেও তা–ই। তাতে জোড়া হারের দুঃস্বপ্নের সঙ্গে যোগ হলো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আরও একটি ওয়ানডে সিরিজ হারের হতাশা। সে হতাশা নিয়েই কাল বাংলাদেশ দল পা রেখেছে শেষ ওয়ানডের ভেন্যু নেপিয়ারে। আগামীকাল ভোর চারটায় ম্যাকলিন পার্কে মুখোমুখি হবে দুই দল। চার বছর পর এ মাঠে ফিরছে ওয়ানডে ক্রিকেট, ২০১৯ সালে হওয়া সর্বশেষ ম্যাচেও কিউইদের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ।
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য ধবলধোলাই এড়ানো। নিউজিল্যান্ড চাইবে শেষ ম্যাচটাও জিতে তাদের ঝুলিতে আরও একটি ধবলধোলাইয়ের অর্জন যোগ করতে। সেটা হলে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে নিউজিল্যান্ড ষষ্ঠবারের মতো ধবলধোলাই করবে, সব মিলিয়ে সপ্তম। অতীতের এই রেকর্ডেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সটা পরিষ্কার। বাংলাদেশ হয়তো ম্যাচটা কিছু সময় নিয়ন্ত্রণ করবে কোনো বোলারের একটা ভালো স্পেল, কোনো ব্যাটসম্যানের একটা ভালো ইনিংসে। এরপর দিন শেষে কিউইদেরই জয়োৎসব।
নেপিয়ারে স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্রও যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলেন তা, ‘দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। কখনো কখনো তারাই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ছিল।’ সৌম্য সরকারের ক্যারিয়ার–সেরা ইনিংসটিই তার আদর্শ উদাহরণ। কিংবা প্রথম ম্যাচে শরীফুল ইসলামের প্রথম স্পেল। রবীন্দ্রও মনে করিয়ে দিলেন, ‘সৌম্য সেদিন যেভাবে খেলেছে, অবিশ্বাস্য। প্রথম ম্যাচে তো শূন্য রানে দুই ব্যাটার সাজঘরে। তারা আমাদের প্রতিনিয়ত চাপে রাখছে। নিজেদের দিনে বাংলাদেশ ভালো দল।’
তবে গত ১৫ বছরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সে দিনটা আসেনি। ঘুরেফিরে শেষ হাসিটা নিউজিল্যান্ডই হেসেছে। কাল শেষ ম্যাচেও তেমনই প্রত্যাশা রবীন্দ্রর, ‘নেলসনে সময়টা ভালো কেটেছে। আশা করছি এখানে (নেপিয়ারে) জয় দিয়েই সিরিজ শেষ করব।’ শেষ ম্যাচে যদি নিউজিল্যান্ড একাদশে পরিবর্তন হয়ও, কিউইদের আত্মবিশ্বাস বদলাবে না, ‘নিউজিল্যান্ড দলে আমার চেয়েও অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। আমরা সবাই নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলতে চাই। যখনই সুযোগ পাব, সেটা কাজে লাগাতে হবে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে নিউজিল্যান্ড পূর্ণশক্তির হোক কিংবা খর্বশক্তির, ফল একই। হারের ধরনেও খুঁজে পাবেন সাদৃশ্য। নিউজিল্যান্ড সাদা বলের ক্রিকেট খেলে দারুণ ব্যাটিং–স্বর্গে। ওয়েলিংটন ও ক্রাইস্টচার্চ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের প্রায় সব মাঠের সীমানাই ছোট্ট। নিউজিল্যান্ডের ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা সব সময়ই এর পুরো ফায়দা নিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিউইদের ব্যাটিংটাই ম্যাচের ফলাফল ঠিক করে দেয়। স্টিভেন ফ্লেমিং, ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর, মার্টিন গাপটিলরা নিয়মিতই বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় রান করে গেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সাফল্যে কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম, হেনরি নিকলসদের নামও খুঁজে পাবেন। এই সিরিজে উইল ইয়াং, রবীন্দ্ররা তালিকাটা আরও দীর্ঘ করেছেন। ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি, এমন অনেক কিউই ক্রিকেটারেরও আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। নিল ব্রুম, জিমি হাও, পিটার ফুলটন, পিটার ইনগ্রামের নাম আসবে এ ক্ষেত্রে। উল্টো দিকে বাংলাদেশ নিজেদের সেরা ওয়ানডে দল নিয়েও নিউজিল্যান্ড সফরে সে রকম সাফল্য পায়নি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সাকিব-তামিমদের ব্যক্তিগত সাফল্য আছে ঠিকই। কিন্তু দলের পারফরম্যান্সে সেটার প্রতিফলন দেখা যায়নি কখনো।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা মানেই যেন বাংলাদেশ রান করবে, আর নিউজিল্যান্ড সে রান টপকে যাবে অনায়াসে। আগে ব্যাটিং করলে কিউইদের রানটা এত বড় হবে যে বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরুর আগেই বোঝা যাবে ম্যাচের ফল। নেপিয়ারে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটার কথা মনে করিয়ে দিলে সেটা আরও পরিষ্কার হবে। ২০১৯ সালের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ২৩২ রান গাপটিলের শতকে ৮ উইকেট হাতে রেখে জিতে যায় কিউইরা। ২০১০ সালেও দুই দলের দেখা হয়েছিল একই মাঠে। নিউজিল্যান্ড সে ম্যাচে ৯ উইকেটে ৩৩৬ রান করে, জবাবে বাংলাদেশ অলআউট ১৯০ রানে। ২০০৭ সালেও নিউজিল্যান্ড একই মাঠে ৫ উইকেটে ৩৩৫ রান করেছিল। বাংলাদেশ করেছিল ১৮১।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের মন্ত্র তাই একটাই—চাই বড় রান। উপলব্ধিটা আছে বাংলাদেশ শিবিরেও। নেপিয়ার থেকে এক ক্রিকেটারই বললেন, ‘আমরা ৩০০-৩৫০ না করলে ওরা চাপই অনুভব করে না।’ কিন্তু সেটা যে এর আগে কখনোই করতে পারেনি বাংলাদেশ! এবার কি দেখা যাবে অন্য কিছু?