সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ
সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ

উৎপল শুভ্রর লেখা

বাংলাদেশের কাছে এশিয়া কাপ মানে...

সংযুক্ত আরব আমিরাতে আজ শুরু হচ্ছে যে এশিয়া কাপ, একদিক থেকে ক্রিকেট বিশ্বেই তা অনন্য। ক্রিকেটে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এমন জমজমাট প্রতিযোগিতা তো এই একটাই। আর কোনো মহাদেশে এত টেস্ট খেলুড়ে দেশ থাকলে তো!

তা হয়তো নেই, তবে মহাদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট কিন্তু আরও আছে। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা দল নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে জেনে অবাক হয়েছিলাম, তারা নাকি দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন! সেই চ্যাম্পিয়নও হয়েছে ফাইনালে ফুটবলে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে। যে খবর বাকি ক্রিকেট বিশ্ব স্বাভাবিকভাবেই রাখেনি।

এশিয়া কাপের ঘটনা তা নয়। বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিরা খেলে বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাগরে তা ভালোই ঢেউ তোলে। ঢেউ তোলে বাংলাদেশেও। স্মৃতিকাতরতার ঢেউ। ১৯৮৬ সালে এই টুর্নামেন্ট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক। আইসিসি ট্রফি জিতে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার আগপর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের একমাত্র যোগসূত্রও। বাংলাদেশের প্রথম ১৫টি ওয়ানডের ১৩টিই এশিয়া কাপে। বাকি দুটি ১৯৯০ সালের যে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে, ঘটনাচক্রে সেটিও হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ক্রিকেটের সংযুক্ত আরব আমিরাত বলতে তখন অবশ্য শুধুই শারজা। ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে দুবাই ও আবুধাবির আবির্ভাব আরও অনেক পরে।

প্রথম এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত

৩৮ বছর আগে এশিয়া কাপের জন্মও এই শারজাতেই। এবার তাই এশিয়া কাপের ঘরে ফেরা। চার বছর আগে সর্বশেষ টুর্নামেন্টটাও আমিরাতেই হয়েছিল, তবে শারজায় কোনো ম্যাচ ছিল না। এবার ৩টি ম্যাচ, ৩০ আগস্ট আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটিও সেখানেই। বাংলাদেশের গ্রুপে তৃতীয় দল শ্রীলঙ্কা, বকলমে এই এশিয়া কাপের স্বাগতিক। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে স্বাগতিক হয়েও যারা নিজেদের মাঠে খেলার সুযোগ হারিয়েছে। অনুমিতভাবেই এটিকে প্রেরণা হিসেবে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ট্রফি জিতে যদি এই দুঃসময়ে শ্রীলঙ্কান মানুষের মুখে একটু হাসি ফোটানো যায়!

ছয় দলের টুর্নামেন্টে অন্য গ্রুপের তিন দল ভারত, পাকিস্তান ও হংকং। টুর্নামেন্টের ড্র–টা কীভাবে হয়েছে, ঠিক জানি না। তবে এটা অনুমান করায় কোনো ঝুঁকি নেই যে ভারত ও পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রেখেই বাকি কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের চিরন্তন বৈরিতার কারণে আইসিসি টুর্নামেন্ট আর এশিয়া কাপেই শুধু ভারত-পাকিস্তান মহারণ দেখার সুযোগ মেলে। সেই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা তো হবেই। যার প্রতিফলন এই টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও। কোয়ালিফাইং পর্ব পেরিয়ে আসা সহযোগী সদস্যদেশ হংকংকে এই গ্রুপে ঢুকিয়ে দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের অন্তত দুবার মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত করে ফেলা হয়েছে। দুই গ্রুপের দুই-দুই সেরা চার দল উঠবে সুপার ফোরে। ভারত ও পাকিস্তানের সেটিতে উঠতে না পারার চেয়ে পুতিন ও জেলেনস্কির বন্ধুত্ব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সুপার ফোরের লিগ পর্ব শেষে দুই দল যদি ফাইনাল খেলে, তাহলে তো হলোই। এক পক্ষকালের মধ্যে তিন-তিনটি পাকিস্তান-ভারত লড়াই। আয়োজকদের হাসি আকর্ণবিস্তৃত করে দিতে আর কী চাই!

এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ক্ল্যাসিক ম্যাচ দেখা গেছে বেশ কয়েকবার

শেষ পর্যন্ত তা-ই যদি হয়, এশিয়া কাপ ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল দেখবে প্রথমবারের মতো। এর আগের ১৪টি টুর্নামেন্ট ভারত-পাকিস্তান ক্ল্যাসিক দেখেছে বেশ কটিই, তবে তার একটাও ফাইনালে নয়। ২০১৬ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির এশিয়া কাপ, ফেবারিট মনে হয় তাই ভারতই। যদিও বাবর আজম এই ফরম্যাটে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুচকি হাসতেই পারেন। গত বছর ২১ অক্টোবর এই দুবাইয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচ। বিশ্বকাপে কখনো ভারতকে হারাতে না পারার রহস্য ঘুচিয়ে দেওয়া পাকিস্তানের ১০ উইকেটের সেই দাপুটে জয়।

তারপরও ভারতকে ফেবারিট মনে হওয়ার কারণ অবশ্যই আইপিএল, এই টুর্নামেন্টের অতীত রেকর্ডও। ৭ বার জিতে এশিয়া কাপের সফলতম দল ভারত, শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৫ বার। বিশ্বকাপ জিতে ফেলার পরও এই একটা ট্রফি অনেক বছর আক্ষেপের অন্য নাম হয়ে ছিল পাকিস্তানের জন্য। ২০০০ সালে ঢাকায় সেই আক্ষেপ ঘুচেছে। ২০১২ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় শিরোপাটাও এই ঢাকাতেই। মনে আছে না সেই ফাইনাল? প্রশ্নটা একটু নিষ্ঠুরই বটে। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের জন্য যে তা হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানো। মাত্র ২ রানের সেই পরাজয়ের পর মাঠেই মুশফিক-সাকিবদের অঝোর কান্না। যেটির রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো দেশে।

এশিয়া কাপে শিরোপার দাবিদার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল

এশিয়া কাপ জেতেনি একবারও, কিন্তু গত চারটি টুর্নামেন্টের দিকে ফিরে তাকালে শিরোপার দাবিদার কি বাংলাদেশও নয়? ২০১২ থেকে সর্বশেষ ৪টি এশিয়া কাপের ৩টিরই ফাইনালেই তো ছিল বাংলাদেশ। একটু এদিক-ওদিক হলেই যার দুটিতে জিতেও যেতে পারত। টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক ফর্ম, অধিনায়ক-কোচ নিয়ে তুমুল নাটক, শেষ পর্যন্ত প্রধান কোচ ছাড়াই এক দল...এবার কি আশা করাটা একটু বাড়াবাড়িই?

সাকিব আল হাসান তারপরও মনে হয় আশা করছেন। এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখার যে আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন, তা অনুবাদ করে নেওয়াটা কি এমন কঠিন কিছু!