অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলার সুযোগ খুব বেশিজনের যে হয়েছে, তা নয়। সেদিক থেকে ডিন এলগারকে সৌভাগ্যবান বলতে হয়। ঘটনাক্রমে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলতে চলেছেন অধিনায়ক হিসেবেই, যে সিরিজের শুরুতেও তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন না।
অবসরে যাওয়ার ঘোষণা ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুই আগেই দিয়েছিলেন এলগার। আগামীকাল কেপটাউনে শুরু হতে চলা সিরিজের শেষ টেস্টে শুধু উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় খেলেই দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি তুলে রাখার কথা ছিল সাবেক এই অধিনায়কের। তবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সমাদৃত সুযোগটা পাচ্ছেন নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টে পাওয়া চোটে ছিটকে যাওয়াতে। সেঞ্চুরিয়নে অনেকটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন বাভুমা, সে সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দেন এলগারই।
প্রথম টেস্টে ভারতকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কেপটাউন টেস্ট ড্র করতে পারলেই স্বাগতিকেরা সিরিজও নিজেদের করে নেবে। তবে এলগার ভারতকে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি তুলে রাখতে চান। প্রোটিয়াদের হয়ে বিদায়ী ম্যাচের আগে আজ সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এলগারই এসেছেন। আবেগঘন সেই সংবাদ সম্মেলনে ৩৬ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জানিয়েছেন, এই টেস্ট সিরিজ জয় তাঁর কাছে বিশ্বকাপ জয়ের মতো ব্যাপার মনে হবে।
২০১২ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হলেও কখনো কোনো সংস্করণের বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাননি এলগার। দক্ষিণ আফ্রিকার টি–টোয়েন্টি দলে কখনো ডাকই পড়েনি, ১২ বছরে ওয়ানডে খেলেছেন সাকল্যে ৮টি। বলা যায়, টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবেই নিজেকে চিনিয়েছেন। সে কারণে তাঁর কাছে সাদা বলের ক্রিকেটই সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
সংবাদ সম্মেলনে এলগার বলেছেন, ‘আমি পরিসংখ্যানকে পাত্তা দিই না। শুধু সিরিজ জয়ের কথা ভাবি। দায়িত্বশীল পদে থাকা যে কারও জন্য দলের সঙ্গে সিরিজ জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারা সবচেয়ে বড় স্মৃতি। টেস্ট সিরিজ জয়...এর চেয়ে বড় কিছু নেই। হয়তো বিশ্বকাপ জয় এর কাছাকাছি থাকতে পারে। আমার কখনো সেই (বিশ্বকাপ খেলার) সুযোগ হয়নি। তবে এটিই (টেস্ট) আমার বিশ্বকাপ। এটি আমার জায়গা, যেখানে আমি জিততে চাই।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে এর আগেও ১৭ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন এলগার। কেপটাউনে সংখ্যাটি বেড়ে হবে ১৮। টেস্টে এর চেয়ে বেশি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাত্র চারজন। তাঁর কাছে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সব সময়ই বাড়তি অনুপ্রেরণার, ‘মনে হয় না অধিনায়কত্ব পাওয়ার চেয়ে বড় সম্মানের কথা আপনি ভাবতে পারেন। অতীতে আমি দেড় বছর বা যত দিনের জন্যই অধিনায়কত্ব করেছি, ব্যক্তিগত দিক থেকে আমার সবচেয়ে বড় শেখার সুযোগ ছিল সেটি। শুধু ক্রিকেটীয় দিক থেকে নয়, মাঠের বাইরের বিষয়গুলো নিয়েও। অধিনায়কত্ব করি বা দলের সাধারণ সদস্য হিসেবে খেলি, আমি সব সময় নিজের শতভাগ দিই। এই ম্যাচেও একই মানসিকতা নিয়ে খেলতে চলেছি। বিষয়টি আমার কাছে তরুণ ক্রিকেটারদের সঠিক পথ দেখানোর মতো। আশা করি, তারা সেটি ধরতে পারবে।’
আগামী মাসে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে কিউইদের বিপক্ষে খেলবে দুটি টেস্ট। ভারতের মতো নিউজিল্যান্ড সিরিজটিও আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। অথচ নিউজিল্যান্ডে আনকোরা একটা দল পাঠাচ্ছে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ)।
মূলত নিজেদের ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি আসর এসএ২০–তে শীর্ষ সারির খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতে নিউজিল্যান্ডে খর্বশক্তির দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএসএ। প্রাথমিকভাবে সে সিরিজে এলগার অধিনায়কত্ব করবেন, এমন গুঞ্জন থাকলেও তিনি অবসরে চলে যাচ্ছেন বলে সেটি আর হচ্ছে না।
তবে টেস্ট ক্রিকেটকে অবজ্ঞা করে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় ব্যথিতই হয়েছেন এলগার, ‘পর্দার আড়ালে যা ঘটেছে এবং টেস্ট ক্রিকেটকে যে জায়গায় এনে দাঁড় করানো হয়েছে, সেটা আদর্শ নয়। তবে এটুকু বলতে পারি, ক্রিকেটারদের মধ্যে এখনো টেস্ট খেলার অনেক ক্ষুধা আছে।’