২, ৫২, ০, ৮, ১৮, ১১।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ শেষ হওয়া ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজের তিন ম্যাচে রোহিত শর্মার রান। রোহিত নিজে অবশ্য এই ইতিহাস ভুলে থাকতে চাইবেন। এত দিন প্রতিপক্ষ দলের স্বপ্নেও যা হয়তো উঁকি দেয়নি, সেটাই যে ঘটেছে তাঁর সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে!
১৯৩৩ সাল থেকে ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট খেলে ভারত। আজকের আগপর্যন্ত ভারতের কোনো অধিনায়ককে তাঁর মতো এতটা নত মস্তকে মাঠ ছাড়তে হয়নি। কারণ, ভারতের আর কোনো অধিনায়কই যে কখনো ঘরের মাঠে ন্যূনতম তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রতিপক্ষের হাতে ধবলধোলাই হননি। রোহিত নিজে সেই ‘ধোলাই’ ব্যাট হাতে কতটা ঠেকাতে পেরেছেন, সেটা এই সিরিজে ভারতের ৬টি ইনিংসে তাঁর স্কোরেই পরিষ্কার।
দায় রোহিতকে নিতে হতোই। ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে আজ তৃতীয় দিনে রোহিত যেভাবে আউট হয়েছেন, অন্য সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের রান না পাওয়া—এসব প্রশ্ন তো উঠতই। গোটা সিরিজে মাঠে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে না পারলেও মাইক্রোফোনের সামনে অধিনায়কের মতোই দাঁড়ালেন রোহিত। মানে ভারতের এই ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের দায় তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে।
তাতে তিনটি কথা উঠে এসেছে—‘আমি নিজের সেরাটায় নেই’, ‘দল হিসেবে ব্যর্থ’ এবং ‘অনেক ভুল করেছি।’ভুল তো হয়েছেই। মুম্বাই টেস্টে ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ২৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছে ভারত। ভাগ্যিস পাঁচে নামা ঋষভ পন্ত এরপর স্রোতের বিপরীতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন। নইলে ভারতকে হয়তো এক শ রানও করতে না পারার আরও গভীর লজ্জায় পড়তে হতো। ৫৭ বলে ৬৪ রান করা পন্ত যখন আউট হলেন, ভারতের হাতে ৩ উইকেট, জয় থেকে ৪১ রান দূরে। তারপর ২৫ রানের হার।
রোহিতের কি মনে হয়েছে, ইশ! চার–ছক্কার লোভে ওভাবে জোর করে পুল খেলতে গিয়ে যদি আউট না হতাম, তাহলে ম্যাচটা হয়তো এভাবে মুঠো ফসকে বেরিয়ে যেত না!
দলীয় ১৩ রানে ১১ বলে ১১ করে ভারতের প্রথম উইকেট হিসেবে আউট হওয়া রোহিত অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করার চেষ্টা করেছেন ম্যাচ–পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে, ‘স্কোরবোর্ডে রানও তুলতে হবে। তখন আমার মাথায় এটাই ছিল। কিন্তু পরিকল্পনাটা কাজে লাগেনি, আর যখন এমন কিছু ঘটে, তখন সেটা ভালোও দেখায় না। ব্যাটিংয়ে নামার সময় কিছু ভাবনা তো থাকেই। কিন্তু এ সিরিজে সেসব কাজে লাগেনি। ব্যাপারটা হতাশার।’
রোহিতের দৃষ্টিতে দল হিসেবে ভারত ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেনি। সব ভুল স্বীকার করেই তিনি বলেছেন, ‘টেস্ট ম্যাচ হার, সিরিজ হার, মোটেও সহজ বিষয় নয়, এমন কিছু যা সহজে হজম হয় না। তবে আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারিনি। আমরা সেটা জানি এবং তা মেনেও নিচ্ছি। গোটা সিরিজেই নিউজিল্যান্ড আমাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছে। সিরিজে আমরা অনেক ভুল করেছি, এগুলো স্বীকার করতেই হবে।’
বেঙ্গালুরু ও পুনেতে হেরে সিরিজ আগেই খুইয়েছে ভারত। কিন্তু মুম্বাইয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষে ২৮ রানের লিড পাওয়ার পর জয়ের লক্ষ্যটা তেমন কঠিন ছিল না। রোহিতের ভাষায়, ‘এই ম্যাচে ৩০ রানের (২৮ রান) লিড পাওয়ার পর মনে হয়েছিল একটু এগিয়ে আছি। লক্ষ্যটাও তাড়া করার মতো ছিল। শুধু নিজেদের কাজটা করতে হতো, যেটা দল হিসেবে আমরা পারিনি।’
টেস্ট ক্রিকেটে রোহিতের অধিনায়কত্বের ধরন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলেছেন, টেস্টে নাকি টি–টোয়েন্টির কৌশল প্রয়োগ করেছেন রোহিত! তাঁর ১১ রানের ইনিংসেই চার দুটি। আউট হয়েছেন পছন্দের পুল শট ভালোভাবে খেলতে না পারার খেসারত দিয়ে। নিজের নেতৃত্ব ও ব্যাটিংয়ের দায় নিয়েই রোহিত বলেছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে দলের নেতৃত্বেও সেরাটা দিতে পারিনি। ব্যাটিংয়েও একই ঘটনা ঘটেছে।’
অথচ ভারতের এই দলেরই অপেক্ষাকৃত তরুণেরা সিরিজের বিভিন্ন সময়ে কঠিন উইকেটেও রান করেছেন। রোহিত (৬ ইনিংসে ৯১) ও বিরাট কোহলির (৬ ইনিংসে ৯৩) মতো অভিজ্ঞরা যা পারেননি। রোহিতের মুখ ফুটেও বেরোল সে কথা, ‘এমন পিচে কীভাবে রান করতে হয়, সেটা তারা দেখিয়েছে।’ সঙ্গে আক্ষেপও ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক সিরিজ, যেখানে আমাদের পরিকল্পনা কাজে লাগেনি। আমরা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় চেষ্টা করেছি, সেসব কাজে দেয়নি। সে কারণেই সিরিজে পিছিয়ে পড়ি।’