ইংলিশ ক্রিকেটে বর্ণবাদ ও বৈষম্য তুলে ধরে প্রকাশ করা প্রতিবেদন মেঝেতে ছুড়ে ফেলেছিলেন, কদিন আগে এমন বলেছিলেন সাবেক অধিনায়ক ইয়ান বোথাম। এ প্রতিবেদন তৈরির আগে তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। তবে প্রতিবেদনটির যে কমিশন তৈরি করেছে, সেটির প্রধান বলেছেন, বোথামের সঙ্গে দুবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।
২০২১ সালে বর্ণবাদের অভিযোগে টালমাটাল হয়ে পড়ে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া দল ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ লম্বা সময় পর সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বতন্ত্র একটি কমিশন। যাতে ৪০টির মতো সুপারিশও করা হয়।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদন নিয়ে মুখ খোলেন বোথাম। আপ ফ্রন্ট নামের এক পডকাস্টে তিনি বলেন, ‘আমি রিপোর্টটির কিছু অংশ পড়েছি এবং মেঝেতে ছুড়ে ফেলেছি। কারণ, এটিকে ফালতু মনে হয়েছে। এটা অর্থের নিদারুণ অপচয়, যেটি খেলার অন্য কোনো অংশে ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত। এ রিপোর্ট লিখতে কমপক্ষে আড়াই বছর সময় লেগেছে, হয়তো আরও বেশি। তবে ব্যাপারটি হচ্ছে, তারা সবকিছুকে সাধারণীকরণ করে ফেলছে, যেটা আপনি করতে পারেন না।’
বোথাম এরপর বলেন, ‘অবশ্যই বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকবে, যেটির দুটি রূপ থাকতে পারে। ব্যাপারটি যে শুধুই একমুখী, তা নয়। আমি জানি না কোথায় এমন হয়েছে, তবে এমন কোনো ড্রেসিংরুমে আমি খেলিনি, কখনোই না। যদি আপনি সব এক করে ফেলেন, সবাইকে একইভাবে চিত্রায়িত করেন, তাহলে ভুল করবেন। আমার মনে হয়েছে, এর অনেকগুলোই ভারাক্রান্ত, আর পড়লে মনে হবে সবাই অজ্ঞাত। কে অজ্ঞাত? আমাকে তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।’
যদি আপনি সব এক করে ফেলেন, সবাইকে একইভাবে চিত্রায়িত করেন, তাহলে ভুল করবেন।ইয়ান বোথাম, সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে প্রায় ৪ হাজার মানুষের উদাহরণ টানা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সারাংশে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডে ক্রিকেট ‘সবার খেলা নয়’। তবে বোথাম বলেন, ‘কেউই আমার সাক্ষাৎকার নেয়নি, কেউই আমার ভাবনা জানতে চায়নি। এ প্রতিবেদন তৈরির আগে কারও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, এমন কারও কথাও জানি না আমি। ফলে কিসের ভিত্তিতে, কার কথা অনুযায়ী এটি তৈরি করা হলো?’
অবশ্য প্রতিবেদন তৈরিতে নিয়োজিত কমিশনের প্রধান সিন্ডি বাটস বোথামের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দ্য টাইমসকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘বোথাম বলেছেন তাঁর মত নেওয়া হয়নি। আসলে তাঁকে দুবার বলা হয়েছিল। ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল আমাদের সঙ্গে কথা বলার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যার জবাব আমরা পাইনি। কাউন্টি ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যানদের গ্রুপের মাধ্যমে তাকে সাক্ষ্যগ্রহণে আসতেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, যেটি দেওয়া হয়েছিল চেয়ারম্যানদের একটি গ্রুপের মাধ্যমে। তবে সেই গ্রুপ ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।’
এখন বোথাম কাজ করছেন ডারহাম কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে। বর্ণবাদ ও বৈষম্য বিষয়ের প্রতিবেদন তৈরিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, এমন কাউকে তিনি চেনেন না, বোথামের এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন বাটস, ‘বোথাম বলেছেন তিনি এমন কাউকে চেনেন না, তবে তিনি যে ক্লাবের চেয়ারম্যান, সেই ডারহাম কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব সাক্ষ্য দিয়েছে, আমাদের জরিপকে তুলে ধরেছে। বেন স্টোকস, জো রুট, এউইন মরগান, হিদার নাইট অবদান রেখেছে, যেমন রেখেছে ডেভন ম্যালকম, ডেভিড লরেন্স, মার্ক অ্যালিয়েন ও ওয়াইস শাহর মতো সাবেকেরা।’
অবশ্য বোথামের অন্য কোনো মন্তব্যের জবাব বাটস দেননি। সাধারণীকরণ বা সবাইকে এক করে ফেলার অভিযোগ তুলে বোথাম ওই পডকাস্টে আরও বলেছিলেন, ‘আমি জানি না যে আমি কি শুধুই ভাগ্যবান, নাকি মানুষ বর্ণবাদ বিষয়ে আমরা ভাবনা জানে, আমার অবস্থান জানে, অথবা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে আমার সময় কাটানোর ব্যাপারে জানে। তিনি আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিলেন, “তুমি আমার হিরো”। তিনি বলেছিলেন, “যখন আমাকে আটক করা হয়, তখনোই আমি জানতাম তুমি দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর বর্ণবাদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে।” আমি তার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি।’
ব্যক্তিগত জীবনে তাঁকে কেউ বর্ণবাদী বলতে পারবে না, কিন্তু ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি তাদের একজন হয়ে উঠছেন বলেও দাবি তাঁর, ‘আমি ভারতের অন্যতম সেরাদের একজন সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করেছি, যেমন করেছি হালাম মোসলি, জোয়েল গার্নার, ভিভ রিচার্ডস, রিচি রিচার্ডসন—সবার সঙ্গে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বলতে পারব, “এমন কাউকে আনুন যে বলবে আমি বর্ণবাদী”, কারণ এমন কেউ নেই। আপনি সবাইকে এক করতে পারেন না, কিন্তু এই রিপোর্ট সেটি করছে। যে ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।’